গোয়ালন্দে ৫ কি: মি: ঝুকিপূর্ন লাইন নিয়ে চলছে ট্রেন, হচ্ছে লাইনচ্যুত,ট্রেন বন্ধের শঙ্কা

- Update Time : ০৭:১৫:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
- / ৫৭ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট সারাদেশের মধ্যে একটি পরিচিত স্থান। যার ইতিহাস, ঐহিত্য পাঠ্যবইসহ বিভিন্ন লেখকের লেখনিতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাতে বসে ঐহিত্যবাহী গোয়ালন্দের পরিচিতি।
ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত গোয়ালন্দ বাজার টু গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রেললাইন ও স্টেশন এখন অনেকটাই মৃত। নাই আগের মত ট্রেনের জৌলুস। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ট্রেন থামলেও বন্ধ হয়ে গেছে গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনের কার্যক্রম। এই ৫ কিলোমিটার রেলপথ হয়েগেছে নড়বড়ে। লাইনে নাই পাথর বা খোয়া, কাঠের স্লিপার গুলোর অবস্থাও ভাল না। দেখলে মনে হয় এটি সচল নয়, দীর্ঘ দিনের পরিত্যাক্ত কোন রেললাইন। শুধুমাত্র মাটির ওপর নরবড়ে নষ্ট কাঠের স্লিপারের ওপর বসানো রয়েছে রেল। এরওপর দিয়েই এখন প্রতিদিন ঝুকি নিয়ে সকাল-বিকাল দুইটি ট্রেন হেলে দুলে তিন বার চলাচল করছে। ট্রেন যাবার সময় রেল ও স্লিপার গুলো উচু-নিচু হয়।
এদিকে গত দুইমাসে খুলনাগামী নকশিকাথা মেইল ট্রেন দৌলতদিয়ার ফকিরপাড়া ও গোয়ালন্দ পৌরসভার শ্মশানঘাট এলাকায় দুইবার লাইনচ্যুত হবার ঘটনা ঘটেছে, তবে ঘটেনি কোন হতাহতের ঘটনা। বর্তমানে মাঝে মধ্যে রেল লাইনের স্লিপার পরিবর্তন করা হলেও সেগুলো অন্যস্থানের পরিবর্তন করা অথবা বাতিল স্লিপার।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার টু গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) স্টেশনের দুরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এর পুরোটাই এখন ঝুকিপূর্ণ। রেললাইনের সাপোটিং হিসাবে কাঠের স্লিপার ও রেল ছাড়া নাই আর কিছু। লাইনে নাই কোন খোয়া বা পাথর। অনেক স্লিপার ভাঙ্গা এবং রেলের নাট-বল্টুও ঢিলা। যার কারণে ট্রেন চলাচলের সময় স্লিপার ও রেল উচু-নিচু হয়।
অপরদিকে দীর্ঘ দিন লাইন সংস্কার বা মেরামত না করা এবং লাইনে খোয়া বা পাথর না থাকায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে রেললাইন। যার কারণ চলতি বছরের ২৮ আগষ্ট দৌলতদিয়ার ফকিরপাড়া ও ১৪ অক্টোবর গোয়ালন্দ পৌরসভার শ্মশানঘাট এলাকায় খুলনাগামী নকশিকাথা মেইল ট্রেন দুই বার লাইনচ্যুত হয়। বর্তমানে এইরুটে নকশিকাথা মেইল ও সাটল দুইটি ট্রেন ৩ বারে মোট ৬বার আসা-যাওয়া করে।
স্থানীয় রাজিব, সফিকুল শামীম, শাহিদুল শেখ সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এক সময় গোয়ালন্দ থেকে ট্রেনে ভারত যাওয়া যেতো। সেই গোয়ালন্দ বাজার টু ঘাট স্টেশন দুইটি ঐহিত্যবাহী স্টেশন হবার শ্বর্তেও নাই কোন উন্নয়ন। কয়েক বছর ধরে গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ, কমেছে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা। সারাদেশে রেলেরও উন্নয়ন হলেও এই ৫ কিলোমিটার রেললাইনের অবস্থা খুবই খারাপ। কোনরকম নষ্ট-পচা কাঠের স্লিপারের ওপর বসানো রয়েছে রেল। যার কারণে দেড় মাসে দুইবার ট্রেন পড়ে যাবার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া লাইনে কোন খোয়াও দেয়া নাই। ট্রেন যাওয়া-আসা করার সময় খুব আস্তে আস্তে যায়। এর চাইতে হেটেও আগে যাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে স্লিপার পরিবর্তন করলেও তা পুরাতন বা অন্যস্থানের ব্যবহৃত স্লিপার। দেশের অন্যান্যস্থানের মত রেলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গোয়ালন্দ বাজার টু গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন ও স্টেশনের উন্নয়ন এবং এরুটে ট্রেন বৃদ্ধি করে গোয়ালন্দে ট্রেনের ঐহিত্য ফিরিয়ে আনতে রেল কর্তৃপক্ষসহ সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শিশু রিফাত মোল্লা জানায়, রেললাইনে কোন পাথর বা খোয়া নাই। ট্রেন যাবার সময় এদিক ওদিক দোলে এবং ট্রেন খু্ব আস্তে আস্তে যায়। সে সময় তারা ট্রেনে ওঠে আবার নামে।
দৌলতদিয়া ঘাট স্টেশনের ব্যবসায়ী মোঃ আশরাফ বলেন, আগে ৫/৬টি ট্রেন দৌলতদিয়া ঘাটে আসলেও এখন মাত্র দুইটি ট্রেন আসে। পদ্মা সেতু হয়ে ঘাট অনেকটাই মরে গেছে। এখন আর ট্রেন কমে গেলে তাদের মত ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। তাই মেইল ট্রেনটি না উঠিয়ে এবং একটি আন্তনগর দিলে সবাই উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশীর সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, এ বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগ অবগত আছে। মূলত ভৌগলিক কারণে অন্যান্য স্থানের মত গোয়ালন্দ বাজার টু গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেলের ব্যাজমেন্ট গঠন করা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবছর অতি বর্ষন ও বন্যার পানির কারণে ওই স্থানের কাঠের স্লিপার গুলো নষ্ট বা পচে যায়। তারপরও তাৎক্ষনিক ভাবে যে স্লিপার গুলো পরিবর্তন করা সম্ভব, সেগুলো তারা পরিবর্তন করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়