ভালো নেই রাজবাড়ী পৌরসভার কবরস্থান ও শ্মশান দেখভালকারীরা
- Update Time : ১০:২০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ নভেম্বর ২০২২
- / ৪৭ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রীতি-নীতি অনুযায়ী ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর সাধ গ্রহন করতে হবে। আর মুসলমানদের মৃত্যুর পর কবর ও হিন্দুদের শ্মশান হবে শেষ স্থান।
রাজবাড়ী পৌরসভার অধিনস্থ কবরস্থান গুলোতে একজন দেখাশুনাকারীকে মাস শেষে কিছু টাকা দেয়া হলেও অন্যান্যরা পান না কোন সহযোগিতা। তবে দাফন শেষে তারা লাশের স্বজনদের থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। পৌর এলাকায় ৫টি কবরস্থান ও একটি মহাশ্মাশান দেখাশুনাকারীরা নাম মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেতনে দ্বায়িত্ব পালন করে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যা দিয়ে বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি বাজারে চলে না তাদের সংসার। ফলে বেতন বাড়ানো সহ চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবি জানানিয়েছেন কবরস্থান ও শ্মশান দেখাশুনাকারীরা।
কবরস্থান বা শ্মশানে লাশ আসার নিদ্দিষ্ট কোন সময় না থাকায় দিন রাত ২৪ ঘন্টাই প্রস্তুত থাকতে হয় দেখাশুনাকারীদের। লাশ আসলে রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে দাফন শেষ পর্যন্ত সময় দিতে হয়। এবং কবরস্থান বা শ্মশান পরিস্কার পরিছন্নের কাজও করতে হয় তাদের। ফলে কোন অন্য কাজের সময় পান না তারা।
রেজাউল করিম (৫০) প্রায় ৩০ থেকে ৩২ বছর ধরে রাজবাড়ী পৌরসভার ধুনচি ২৮ কোলনী কবরস্থান দেখাশুনা করে আসছেন। বিনিময়ে পৌরসভা থেকে মাস শেষে পান মাত্র ৪ হাজার ৮শ টাকা। সামান্য এই টাকায় স্ত্রী ও কলেজ পড়ূয়া দুই সন্তান নিয়ে কষ্টে চলে সংসার। ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে অন্যের কাঁথা সেলাই করেন তার স্ত্রী। এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন জরাজির্ণ ছাপড়া ঘরে।
রেজাউলের মতো রফিকুল ইসলাম বাবলু পৌর নিউ কোলনী ও আব্দুল জব্বার ভবানীপুর ১ নম্বর কবরস্থান দেখাশুনা করেন প্রায় ৩০ বছর। তারা মাস শেষে পান মাত্র ৫ হাজার টাকা। তাদের মতো পৌর এলাকার একমাত্র মহাশ্মশান প্রায় ৩ যুগ ধরে দেখাশুনাসহ মরদেহ সৎকারে কাজ করে আসছেন রিতা রানী সরকার (৬৩) ও তার ছেলে। কিন্তু তিনি মাস শেষে বেতন পান মাত্র ৪ হাজার টাকা।
এছাড়া জেলা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের রয়েছে নারী ও পুরুষ লাশ গোসল ও দাফনের রয়েছে পৃথক টিম। যারা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে নাম মাত্র সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। যা পর্যাপ্ত না।
জানাগেছে, রাজবাড়ী পৌর সভার অধীনে শহরের মধ্যে ৫টি কবরস্থান ( নিউ কোলনী, ধুনচি ২৮ কোলনী, ভবানীপুর-১ ও ২, সজ্জনকান্দা) এবং একটি পৌর মহাশ্মাশান রয়েছে। যার দেখাশুনাকারীরা মাস শেষে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেতন পান। এছাড়া আঞ্জুমান মুফিদুলের রয়েছে লাশ গোসল সহ দাফনের টিম। যাদের নিদ্দিষ্ট কোন বেতন নাই।
পৌরবাসীরা ইসমাইল হোসেন, আব্দুর রাজ্বাক বলেন, কবরস্থান দেখাশুনাকারীরা খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছে। বর্তমান জিনিসপত্রের অনেক দাম। সে তুলনায় তাদের বেতন এরকবারেই কম। ফলে বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে তাদের বেতন বাড়ানো প্রয়োজন। তাহলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল ভাবে চলতে পারবে। এবং মনযোগ দিয়ে কবর গুলো সংরক্ষণ করবে।
মহা শ্মশানের রিতা রানী সরকার বলেন, পৌরসভা থেকে মাস শেষে মাত্র ৪ হাজার টাকা বেতন পান। যা দিয়ে চলাফেরা খুব কষ্ট হয়। তাই বেতন বাড়ানো হলে উপকৃত হবেন।
ধুনচি ২৮ কোলনী কবরস্থানের কেয়ারটাকার রেজাউল করিম, নিউ কোলনী কবরস্থানের রফিকুল ইসলাম বাবলু ও ভবানীপুর ১ নং কবরস্থানের আব্দুল জব্বার বলেন, তারা প্রায় ৩০ থেকে ৩২ বছর ধরে কবরস্থান দেখাশুনা করে আসছেন। দিন নাই রাত নাই, সব সময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হয়। লাশ আসলে রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে কবর খুড়ার স্থান দেখানো ও দাফন সম্পন্ন পর্যন্ত তাদের থাকতে হয়। তাছাড়া কবরস্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও দেখাশুনা তারাই করেন। যে কারণে অন্য কোন কাজও করতে পারেন না। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসাবে যে বেতন পান, তাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চলে না। ফলে সংসারের খরচ মিটাতে তাদের স্ত্রীরাও সহযোগিতা করেন। তাই তাদের বেতন বাড়ানো সহ চাকরি স্থায়ীকরণের দারি জানান।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ওজিউল্লাহ মন্টু বলেন, পৌরসভার মধ্যে থাকা কবরস্থান গুলোতে যারা কাজ করে তারা গরিব মানুষ। এরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না। পৌরসভা থেকে যে বেতন পায়, তাতে সংসার চলে না। প্রতিটি কবরস্থানে শুধু মাত্র একজনকে পৌরসভা থেকে বেতন দেয়। দেখাশুনাকারীদের ২৪ ঘন্টা এলার্ট থাকতে হয়। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী তারা পর্যাপ্ত বেতন পায় না। যারা কাজ করে তাদের নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থা করা। এবং বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি বাজারে নূন্যতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা তাদের বেতন হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ গোসল ও দাফনের জন্য দুইটি টিম আছে। যাদের পারিশ্রমিক তারা নিজেরাই দেন। কিন্তু সেটাও সামান্য। তাই এদের সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা উচিত।
রাজবাড়ী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নির্মল চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই মেয়রের সাথে আলোচনা হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়