গাছ তলার চলছে স্কুলের ক্লাস : দৌলতদিয়ার দূর্গম চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন ওয়াজউদ্দিন

- Update Time : ০৬:৫২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০২২
- / ৫৯ Time View

শামীম শেখ, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
চারদিক বিশাল পদ্মা ও যমুনা নদী এবং তাদের শাখা ক্যানাল দ্বারা বেষ্টিত দূর্গম কুশাহাটার চর। এখানে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। অশিক্ষা ও রুগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে এখানকার শিশুরা। চরমভাবে পিছিয়ে থাকা এই চরে আলোক বর্তিকা হয়ে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোঃ ওয়াজউদ্দিন সরদার (৩২) নামের এক যুবক।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত এ চরটি। ১৯৯৮ সালে পদ্মা নদীতে বিলীন হওয়ার কয়েক বছর পর পুনরায় চরটি জেগে ওঠে।গত কয়েক বছরে সেখানে একেক করে বর্তমানে ১৩২ টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু দূর্গম সেই চরবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা হতে বঞ্চিত।দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ট্রলারযোগে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তাল নৌপথ পাড়ি দিয়ে এ চরে যাতায়াত করতে হয়।
চরের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৭ সালে পায়াক্ট বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন ওই চরে ‘কুশাহাটা পায়াক্ট বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্কুলেই যোগ দেন চরের একমাত্র এসএসসি পাস যুবক মোঃ ওয়াজউদ্দিন সরদার (৩২)। সম্মানী হিসেবে তাকে পায়াক্ট বাংলাদেশ হতে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দেয়া হতো। যদিও সেটা গত দুই বছর ধরে বন্ধ।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যাবস্থাপক মজিবর রহমান জুয়েল বলেন, স্কুলটি চালানোর বিষয়ে তাদের কোন প্রকল্প বা ডোনার নেই। অভিভাবকদের সহযোগিতা ও আমাদের ব্যাক্তিগত অনুদানে শিক্ষককে যৎসামান্য সম্মানি দেয়া হয়।এছাড়া সরকারিভাবে বই সংগ্রহ করে বিতরন ও বছরের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরন তারা দিয়ে থাকেন। বর্তমানে সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২২ জন। স্কুলের জন্য একটি ছোট্ট ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে তিন বছর আগে সেটা প্রবল ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে। আর গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।যে কারনে শিক্ষক ওয়াজউদ্দিনের বাড়ির আঙ্গিনায় গাছতলাতেই চলে শিক্ষা কার্যক্রম। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়।সেখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়া খুব দরকার।
শিক্ষক ওয়াজউদ্দিন বলেন, আমি নদী ভাঙনের শিকার একজন ভূমিহীন মানুষ। লিজ নেয়া সামান্য জায়গায় বসবাস করি।তারপরও বাচ্চাদের জন্য আমার বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিদিন পাঠদান করি। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ করে আনি।এরপর আমি ও আমার অষ্টম শ্রেণি পাশ স্ত্রী রুখসানা আক্তার মিলে বাচ্চাদেরকে পড়াই ।
বিনিময়ে দরিদ্র অভিভাবকরা যে যা দেন,তাই গ্রহন করি । তাতে স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানের সংসার চলেনা। খুব কষ্টেই দিন কাটে। তবু চরের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্হানীয় সালাম মন্ডল, নিয়ামত খান,সোরাপ আলী মন্ডল, জবেদা খাতুন, সেলিনা বেগমসহ অনেকেই বলেন, আমরা সবাই নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ। মাছ ধরে, জমিতে কাজ করে কোন মতে পেট চালাই।তারপরও চাই আমাদের সন্তানরা কিছুটা হলেও লেখাপড়া শিখুক। কিন্তু স্কুল না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যেও ওয়াজউদ্দিন মাষ্টার বাচ্চাদের পড়ান।আমরা মাসে ৫০/১০০ টাকা করে যে যা পারি তারে দেই।সে বাচ্চাদের খুব ভালো বাসে। যত্ন করে পড়ায়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ চরবাসীর সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। আশা করছি তাদের সকল চাহিদাই ধীরে ধীরে পূরন হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মোস্তফা মুন্সি বলেন, আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কুশাহাটা চরে একটি স্কুল নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছি।ইতিমধ্যে জমি কিনে মাটি ভরাট করেছি।শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। ওয়াজউদ্দিনসহ যারা বর্তমানে চরের শিশুদের শিক্ষার জন্য কাজ করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। চরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে আমি সর্বদা তাদের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়