দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে রাজবাড়ীতে বাবলা দাশ গুপ্ত
- Update Time : ০৯:২৯:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩
- / ১৯৩ Time View
সোহেল রানা, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
সমবায় অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী বাবলা দাশ গুপ্ত। তার বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ। এ অভিযোগ ওঠার পর তাকে সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে রাজবাড়ীতে বদলি করা হয়েছে। দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ ওঠা বাবলা দাশ গুপ্তকে নিয়ে তাই ‘চিন্তায় রয়েছেন’ রাজবাড়ীর সমবায়ীরা।
সম্প্রতি দেশের দুই টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানে বাবলা দাশ গুপ্তকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হয়। এ দুই প্রতিবেদনে উঠে আসে বাবলার দুর্নীতির নানা চিত্র। এ দুই অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন প্রচারের পর গত ২১ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সমবায় অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার যুগ্ম নিবন্ধক রিক্তা দত্ত স্বাক্ষরিত আদেশে ঢাকা সমবায় অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাবলা দাশ গুপ্তকে রাজবাড়ী জেলা সমবায় কার্যালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী জেলা সমবায় অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবলা দাশ গুপ্ত এখনো রাজবাড়ীতে যোগদান করেননি।
অনুসন্ধানী দুই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবলা দাশ গুপ্ত ১৯৯৬ সালে অফিস সহকারী পদে সমবায় অধিদপ্তরে চাকরি শুরু করেন। পরে ২০০৯ সালে হন উচ্চমান সহকারী। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালে প্রধান সহকারী পদে কক্সবাজারে বদলি করা হলেও ক্ষমতার জোরে থেকে যান সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়েই।
সেখানে বসে করেন নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্য। ভাইবোন, স্ত্রীসহ পরিবারের অন্তত ২০ জন নিকটাত্মীয়কে সমবায় অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে চাকরি দেন বাবলা। তার বিরুদ্ধে আছে চাকরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ারও অভিযোগ। সুনামগঞ্জ জেলা সমবায় অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক অজিত চন্দ্র দাস পদোন্নতির জন্য বাবলাকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এসব দুর্নীতির বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পর বাবলা দাশ গুপ্তকে গত ২১ মার্চ রাজবাড়ীতে বদলি করা হয়েছে। একই দিন বাবলার ভাই কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসের সরেজমিন তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় দাশ গুপ্তকে বরিশাল জেলা সমবায় কার্যালয়ে ও পরিদর্শক পদে ভাগনি নীতি রানী পালকে টাঙ্গাইল জেলা সমবায় কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
আবু জাফর, আবু সাঈদ, শহিদ নামের রাজবাড়ীর তিনজন বাসিন্দা বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ, এ অভিযোগ তদন্ত না করেই বাবলা দাশ গুপ্তকে রাজবাড়ীতে পদায়ন করা হয়েছে। আসলে দুর্নীতি হ্রাস করতে হলে তাকে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদায়ন করা ঠিক হয়নি। আমরা রাজবাড়ীবাসী এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে চাই না। দ্রুত তাকে রাজবাড়ীতে বদলির আদেশ বাতিলের দাবি করছি।’
রাজবাড়ীতে বাবলা দাশ গুপ্তের বদলির বিষয়ে লিটন নামের এক সমবায়ী বলেন, ‘আমরা রাজবাড়ী সমবায় অধিদপ্তর থেকে দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ বাবলা দাশ গুপ্তকে দ্রুত বদলির দাবি জানাচ্ছি। আমরা এ ধরনের লোককে রাজবাড়ীতে চাই না। তিনি থাকলে রাজবাড়ীতেও ছড়িয়ে পড়বে তার অপরাধের প্রভাব।’
রাজবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘বাবলা দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাজবাড়ীতে পদায়ন করা উঠিত হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজবাড়ীর সাবেক এক জেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, ‘যে অপরাধ করেছে তাকে বদলি নয়, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করাসহ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। আর রাজবাড়ীতে বদলির খবরে আমরাও লজ্জিত।’
রাজবাড়ী জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেলিনা পারভীন জানান, বাবলা দাশ গুপ্তকে রাজবাড়ী জেলা সমবায় অধিদপ্তরে বদলি করা হলেও তিনি এখনো যোগদান করেননি। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কেও তিনি অবগত নন।
এ বিষয়ে বাবলা দাশ গুপ্তের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করার পর সাংবাদিক পরিচয় শুনে কলটি কেটে দেন। পরে তাকে আরও কয়েকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়