মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শুরুর আগে খাদ্য সহায়তা পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাজবাড়ীর জেলেরা
- Update Time : ০৯:০১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২
- / ৭৪ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। এ জেলার ৮৫ কিলোমিটার অংশে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। ফলে নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এরমধ্যে জেলায় কার্ডধারী জেলের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।
আগামী (৭ থেকে ২৮ অক্টোবর) ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
এদিকে সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ ধারার সাথে সম্পৃক্ত কার্ডধারী জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। কিন্তু এবার নিষেধাজ্ঞার সময় হয়ে আসলেও এখনও খাদ্য সহায়তা পায় নাই রাজবাড়ীর জেলেরা। ফলে অভিযানের আগে এ খাদ্য সহায়তা পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলেরা। তাছাড়া প্রকৃত জেলে ছাড়া অন্যান্যরা এ সহায়তা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসার বলছেন, নতুন জেলেদের তালিকা দ্রæত প্রকাশ করা হবে। এবছর ইলিশ ধরার সাথে সর্ম্পক্ত প্রায় ৬ হাজার জেলের খাদ্য সহায়তা দেবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এবং আশা করছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বরাদ্দ পাবেন। এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারানা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম করেছেন। এছাড়া জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান করার লক্ষে জেলায় বকনা বাছুর (গরু) বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা, হাট বাজারে কেনা-বেচা ও পরিবহন করলে রয়েছে জেল জরিমানার বিধান। ফলে এসময় অনেক জেলেই মানবেতর জীবন-যাপন করে। সরকারী সহায়তা হিসাবে নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলেরা ২০ কেজি করে চাল ছাড়া অন্য কোন সহায়তা পান না। যার কারণে অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খায় জেলেরা । ফলে উপায়ন্ত না পেয়ে অনেকে পেটের দায়ে জেল-জরিমানার ভয় উপেক্ষা করে মাছ ধরতে নদীতে নামে। এরমধ্যে মৌসুমি জেলের সংখ্যা বেশি।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে জেলা প্রশাসন, মৎস্যজীবি, হাট-বাজার কমিটি সহ বিভিন্নস্থরে সভা করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ। পাশাপাশি মাইকিংসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, পুরাতন তালিকা অনুযায়ী রাজবাড়ী জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১০ হাজার ২৯০ জন। যারা সরকারী সুবিধা পায়। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২০ কেজি করে চাল পায় ৪ হাজার ৭শ জন এবং জাটকা ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় দুই কিস্তিতে ৮০ কেজি চাল পায় ৩ হাজার ৫শ জন নিবন্ধিত জেলে। তবে নতুন করা তালিকায় জেলেদের সংখ্যা বাড়বে।
জেলে গোলাপ মন্ডল, আলামিন, মাজেদ কাজী, সমশের, মনছের সরদার সহ অনেকে বলেন, মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। সরকারের নির্দেশনা তারা মানতে রাজি, কিন্তু সরকার তো তাদের দেখে না। ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধের সময় তাদের সংসার খুব কষ্টে চলে। এ কয়েকদিন পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন যায়। ২২ দিনের জন্য সরকার যে ২০ কেজি করে চাল দেয়, এবছর সেটাও পান নাই। আর চাল দিয়ে সব হয় না। তরি তরকারি সহ সংসারে কত খরচ। সুদের ওপর টাকা নিয়ে অথবা ধার করে এ কয়েকদিন সংসার চালাতে হবে।
তারা আরও বলেন, মৎস্য অফিসের মাধ্যমে সরকার যে সহায়তা দেয়। সেটাও প্রকৃত জেলেরা পায় না। পায় যারা অন্য পেশায় কাজ করে। তাই সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত জেলের সহায়তা দিতে সরকারকে অনুরোধ জানান। এবং অভিযানের আগে সহায়তা পেলে তাদের জন্য ভাল হতো। মূলত পেটের দায়ে জেল-জরিমানার ভয় উপেক্ষা করে অভিযানের সময় নদীতে নামেন তারা।
রাজবাড়ী জেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, গত বছর ৪ হাজার ৭শ জন জেলেকে ৯৪ মেট্রিকটন খাদ্য সহায়তা দিয়েছিলেন। এ বছর তালিকা চুরান্ত না হলেও ৬ হাজার জন জেলেকে সহায়তার জন্য চাহিদা দিয়েছেন। এবং আশা করছেন কয়েক দিনের মধ্যে সেটা পেয়ে যাবেন। মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে জেলা ও উপজেলা ট্রাস্কফোর্স কমিটি, জনপ্রতিনিধি, জেলে পাড়া, নদী ঘাট, বাজারে সভা করেছেন। এছাড়া প্রচার-প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এবং অভিযান সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থান করার লক্ষে রাজবাড়ীর ৩ উপজেলা গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশায় ২০২২/২৩ অর্থবছরে ৩২৩ জন জেলেকে বকনা বাছুর (গরু) দেবার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ওই তিন উপজেলায় প্রায় ৯০ জন জেলেকে চুরান্ত করেছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়