ইলামিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি নারী – লেখক – শারমীন রেজা লোটাস
- Update Time : ১০:০৮:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
- / ৫৮ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
পঞ্চশোধর্ব বয়সের অধিকাংশ বাঙালিই ইলামিত্রের নাম জানেন কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম হয়তো এখনো তেমন ভাবে ইলামিত্রের নাম জানতে পারেনি। এই ইস্পাত কঠোর স্বভাবের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রাজনৈতিক আর্দশ আলোচনা আমার কাজ নয় কিন্তু আমি যে কারনে তাঁর কথা বার বার মনে করি যে নৃশংস অত্যাচরের বলি হয়েও তিনি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সমবেদনা বা সহানুভূতির পাত্র হয়ে নয়। নিজের ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন এবং যৌন লাঞ্চনার কথা মাথা উঁচু করে বলি হয়েছিলেন শ্রদ্ধার পাত্রী। উভয় বাংলায়। জীবন সংঙ্গীকে পাশে নিয়ে নাতি নাতনি ভরা সংসার যাপন করেছেন। দুঃস্বপ্ন হেলায় চুরমার করে পূনরায় গরেছেন সুখের নীড়। নতুন ভাবে নতুন দেশে। কিন্তু পুরনো দেশকে তিনি ভোলেন নি কখনো।
রাজনৈতিক স্পৃহা থেকে মানব মানের জাগ্রত উদ্দীপনাকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে রুখে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবানকেই উসকে দেয়।
ইলামিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি নারী।
চাপাই নবাব গঞ্জের নাচোল এলাকার কৃষকদের
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী ইলামিত্র
শোষিত নিগৃহীত কৃষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের
আন্দোলনে সর্বস্বপন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই অসীম সাহসী নারী।
পুলিশ বাহিনীর বর্বরোচিত
নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এই নারী।
ইলামিত্র একজন বাঙালি মহীয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষক নেতা। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন। ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন। ইলামিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বাংলার যশোরের ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকুরির সুবাদে তারা সবাই কলকাতায় থাকতেন। লেখাপড়া করেন কলকাতার বিথুন স্কুল ও বেথুন কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৫৮ সালে কলকাতায় বিশ^বিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কৈশোরে তিনি খেলাধুলায় তুখোড় ছিলেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাজ্য জুনিয়র অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়ন। সাঁতার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায়ও তিনি ছিলেন পারদর্শী। তিনিই প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের কারণে অলিম্পিক বাতিল হয়ে যাওয়ায় তার অংশগ্রহণ করা হয়নি। খেলাধুলা ছাড়াও গান অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। ইলা সেন যখন বেথুন কলেজের ছাত্রী তখন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতা মহিলা সমিতির সদস্য হন। মহিলা আত্মরক্ষ সমিতিতে কাজ করার সময় মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে ইলা সেনের বিয়ে হয় দেশকর্মী কমিউনিষ্ট রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে। রমেন্ত্র মিত্র মালদহের নবাবগঞ্জ থানার রামচন্দ্রপুর হাটের জমিদার মহিমচন্দ্র ও বিশ^মায়া মিত্রের ছোট ছেলে। বিয়ের পর বেথুনের তুখোড় ছাত্রী ইলা সেন হলেন জমিদার পুত্রবধু ইলা মিত্র। কলকাতা ছেড়ে চলে এলেন শ^শুরবাড়ী রামচন্দ্রপুর হাটে। হিন্দু রক্ষণশীল জমিদার পরিবারের নিয়মানুসারে অন্দর মহলেই থাকতেন তিনি। এই বন্দিজীবনে মুক্তির স্বাদ নিয়ে আসে গ্রামবাসীর একটি প্রস্তাব। রমেন্দ্র মিত্রের বন্ধু আলতাফ মিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়ীর কাছেই কৃষ্ণগোবিন্দপুর হাটে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল খোলা হয়। বাড়ী থেকে অনুমতিও মেলে। সংগ্রামী নেত্রী এভাবেই অন্দর মহল থেকে বেড় হয়ে আসেন আবার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন বৃহত্তর সমাজ সেবার কাজে। হয়ে ওঠেন এলাকার রানিমা। এ সময় তিনি স্বামী রমেন্দ্র মিত্রের কাছে জমিদার ও জোতদারের হাতে বাংলার চাষিদের নিদারুণ বঞ্চনা শোষনেণর কহিনি শোনেন। কমিউনিষ্ট রমেন্দ্র মিত্র এর আগেই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজের পারিবারিক ঐতিহ্য ও মোহ ত্যাগ করে কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ইলা মিত্রকে তিনি তাদের কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। ছাত্রীজীবনেই ইলামিত্র কমিউনিষ্ট আদর্শের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাই স্বামীর আদর্শ ও পথ চলার সঙ্গে সহজেই নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন ইলামিত্র।
জমদিারদের সঙ্গে ফসল উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ সময় জমিদার ও কৃষকদের মাঝখানে জোতদার নামে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এ পত্তনি প্রথার মাধ্যমে জমিদারদের কাছ থেকে জমি পত্তন বা ইজারা নিত। এই জোতদার শ্রেণী কৃষকের জমি চাষ তদারকি ও খাজনা আদায়ের কাজ করত। ফসল উৎপাদনের সম্পূর্ণ খরচ কৃষকরা বহন করলেও যেহেুতু তারা জমির মালিক নন সে অপরাধে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তুলে দিতে হতো জোতদারদের হাতে। এ ব্যবস্থাকে বলা হতো ‘‘আধিয়ারী’’। জোতদারি ও জমিদারি প্রথা ক্ষুদ্র কৃষকের শোষণের সুযোগ করে দেয়। খাজনা আদায়ের জন্য জোতদাররা তাদের সঙ্গে দাসের মতো ব্যবহার করে। উৎপন্ন ফসলের পরিবর্তে একসময় কৃষককে বাধ্য করা হয় অর্থ দিয়ে খাজনা পরিশোধ করতে। ফলে কৃষকরা গ্রামীণ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে
বাধ্য হন। সর্বস্বাস্ত হয়ে একসময়ের সমৃদ্ধ বাংলার কৃষক পরিণত হন আধিয়ার আর খেতমজুরে। জমিদার-জোতদারদের এই শোষণ কৃষকের মনে বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় বর্স ভারতীয় কৃষক সমিতি। এ ছাড়া জনসাধারনের কাছে থেকে হাটের ‘‘তোলা’’ ও লেখাই সহ নানা কর আদায় করা হতো। এসব বন্ধের জন্য আন্দোলন জোরদার হয়। চল্লিশের দশকে এসব আন্দোলনেও ইলামিত্র নেতৃত্ব দেন।
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ বাংলা ১৩৫০ সালে সমগ্র বাংলায় দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ যা পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এ দুর্ভিক্ষের সময় কৃষকের ওপর শোষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ সময় অর্থণৈতিক দুরবস্থা ও রাজনৈতিক অস্তিরতার ফলে মরিয়া হয়ে ওঠে শোষিত কৃষকরা। তিন ভাগের দুই ভাগ ফসল কৃষকের এই দাবি নিয়ে বেগবান হয় তেভাগা আন্দোলন।
১৯৪৬-১৯৪৭ সালে দিনাজপুরে কমরেড হাজা দানেশের প্রচেষ্টায় সূচিত হয় এক যুগান্তকারী তেভাগা আন্দোলন। কমিউনিষ্ট পার্টি ও কৃষক সমিতি প্রান্তিক চাষিদের সংগঠন করে আন্দোলনকে জোরদার করতে থাকে। পার্টি থেকে রমেন্দ্র মিত্রকে গ্রামের কৃষক সমাজের মধ্যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়ে কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম রামচন্দ্রপুর হাটে পাঠালে স্বামীর সঙ্গে ইলামিত্র সরকারি মাঠপর্যায়ে কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর মিত্র পরিবারের জমিদারি অঞ্চল রামচন্দ্রপুর হাট পূর্বপাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তান হওয়ার পরও তেভাগা আন্দোলন অব্যাহত থাকে। কমিউনিষ্ট পার্টিকে নিসিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। পার্টির শীর্ষস্থানীয় হিন্দু নেতাদের প্রায় সবাইকে দেশ ছাড়া করা হয়। সরকারের এই দমননীতির ফলে কমিউনিষ্ট ও কৃষক আন্দোলনের নেতারা আত্মগোপন করে কাজ করতে থাকেন।
তেভাগা আন্দোলনের সময় ইলামিত্রের ওপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতন চলে। এখানে ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়াররী ও তৎপবর্তী ঘটনা এবং রাজশাহীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়তো বাহুল্য হবে না। জবানবন্দিটি তিনি দিয়েছিলেন ইংরেজীতে। ৫ জানুয়ারি (১৯৫০) সাঁওতাল চাষিরা জোর করেই জোতদারদের জমির ধান কাটতে যায়। খবর পেয়ে নাচোল থানার এএসআই তফিজুদ্দিন আহমদ কয়েকজন কনস্টেবলসহ ঘটনাস্থলে গমন করেন। সংঘর্ষ শুরু হলে সাঁওতাল চাষিরা সশস্ত্র বিপ্লবের বিভিন্ন ধ্বনি দিতে দিতে এএসআই ও তিনজন কনস্টেবলকে আক্রমন করে। সাঁওতালরা তাদের রাইফেল কেড়ে নিয়ে চারজনকেই হত্যা করে। লাশগুলো ওই স্থানেই মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। ওই হত্যাকান্ডের কারনেই ৭ জানুয়ারি রোহনপুর স্টেশন ইলামিত্র গ্রেপ্তার হন। এবার শুনুন ইলামিত্রের জবানিতে কেসটির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। বিগত ০৭/০১/১৯৫০ তারিখে রোহনপুরে গ্রেপ্তার হই এবং পর দিন আমাকে নাচোলে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে পুলিশ আমাকে মারধর করে। থানায় আমাকে একটি সেলের মধ্যে রাখা হয়। হত্যাকা- সম্পর্কে সবকিছু স্বীকার না করলে উলঙ্গ করা হবে বলে এমআই আমাকে হুমকি দেয়। আমার বলার কিছুই ছিল না। সুতরাং তারা আমার সব কাপড় খুলে নেয় এবং সম্পূর্ন উলঙ্গ অবস্থায় সেলের মধ্যে বন্দি করে রাখে। সারা দিন আমাকে খাবার দেওয়া হয় না, এমনকি একবিন্দু জলও না। সন্ধ্যায় এসআইয়ের উপস্থিতিতে সিপাইরা বন্দুকের বাট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে নক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। পরে আমর কাপড় ফেরৎ দেওয়া হয়। রাত প্রায় ১২ টার সময় সেল থেকে আমাকে বের করে সম্ভবত এসআইয়ের কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, আমি নিশ্চিত ছিলাম না। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তারা নানা রকম অমানুষিক পদ্ধতিতে চেষ্টা চালিয়েছিল। দুটি লাঠির মধ্যে আমার পা ঢুকিয়ে চাপ দেওয়া হয়। নির্যাতন চালানোর সময় রুমাল দিয়ে আমার মুখ বেঁধে দিয়েছিল। চুল উপড়ানোর ফলে আমি
জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সিপাইরা আমাকে ধরাধরি করে সেলে নিয়ে যায়। তখন ওই এসআই সিপাইদের চারটি গরম সিদ্ধ ডিম আনার হুকুম দেয়। তারপর চার পাঁচজন সিপাই আমাকে জোরপূর্বক চিৎকরে শোয়ায় এবং একজন আমার যৌনাঙ্গের মধ্যে একটি গরম ডিম ঢুকিয়ে দেয়। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
৯ তারিখ সকালে যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন এসআই ও কয়েকজন সিপাই আমার সেলে এসে বুট দিয়ে আমার পেটে লাথি মারে। এরপর ডান পায়ের গোড়ালিতে পেরেক ঢুকিয়ে দেয়। এসআই বলে রাতে আসব যদি স্বীকার না করো সিপাইরা তোমাকে ধর্ষণ করবে। গভীর রাতে তারা এলো এবং একজন সিপাই সত্যিই আমাকে ধর্ষণ করতে শুরু করল। পর দিন যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমার কাপড় চোপড় রক্তে ভেজা। সেই অবস্থাতেই আমাকে নাচোল হতে নবাবগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। নবাবগঞ্জ জেলগেটের সিপাইরা ঘুষি মেরে আমাকে অভ্যথনা জানায়। ১৬/০১/১৯৫০ তারিখে আমাকে অন্য এক বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিপাইরা জোর করে আকটি সাদা কাগজে আমার সই আদায় করে। তখন আমি অর্ধ-চেতন অবস্থায় খুব বেশি জ¦রের মধ্যে ছিলাম। এর পর ইলা মিত্রকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় করারাগারে। সেখানে নির্যাতনের তৃতীয় ধাপ চলে। মুমূর্ষু অবস্থায় ইলা মিত্রকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে ১৯৫৪ সালের ৫ এপ্রিল তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের পাঁচ সদস্যের এক কমিটি ইলা মিত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানিসহ আরো কয়েকজন নেতা প্রতিবেদনটি লেখেন। কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া যদি ইলাকে মুক্তি দেওয়া না হয় তাহলে আর তাকে প্রানে বাঁচানো যাবে না। ইলামিত্রকে দেখতে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শত শত ছাত্র-ছাত্রী রাজনীতিবিদ শিক্ষক সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের লোকজন ছুটে যায়। শেষ পর্যায়ে সরকার তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে কলকাতা যাওয়ার অনুমতি দেয়।
১৯৫৪ সালে তিনি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান। ভরতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিশ্চিত না হওয়ায় প্রচুর দুরাবস্থায় কয়েক বছর বস্তিতে জীবন যাপন করেন। এরপর এমএ পাশ করে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬২/৭৮ সময়ের সধ্যে মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি পরপর চারবার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে দুবার তিনি ছিলেন বিধান সভায় কমিউনিষ্ট পার্টির ডেপুটি লিযার। ভারতে শিক্ষা আন্দোলন ও নারী আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালনকারী ইলামিত্র ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতৃত্বে সামসীন ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যে অধ্যপিকা হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসার নেন।
ইলামিত্র বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯৬ সালে। ৬ নভেম্বর নাচোল ডিগ্রি কলেজ (বর্তমানে সরকারি কলেজে) মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভার তিনি ভাষণ দেন। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই মহীয়সী নারী কলকাতায় মারা যান। ইলামিত্রের অসাধারন সাহসী এবং সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশে ও পশ্চিম বাংলার প্রগতিশীল মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।
লেখক – শারমীন রেজা লোটাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়