পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বছর পূর্তি: দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় হাজারো বেকার, বিকল্প কর্ম সংস্থানের দাবী
- Update Time : ০৯:৪৩:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
- / ৩১২ Time View
শামীম শেখ, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
২৫ জুন পূর্ণ হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর। গত বছরের এইদিন সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতুটির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাবস্হায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। খুলে গেছে বহুবিধ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দুয়ার। কোটি কোটি মানুষ সরাসরি এর সুফল পাচ্ছেন।
তবে বাত্তির নিচে অন্ধকারের মতো এর অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগন্জের পাটুরিয়া নৌরুট ও ঘাট নির্ভর খেটে খাওয়া কয়েক হাজার মানুষের উপর। ইতিমধ্যে জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে ঘাট দুটি।
বন্ধ হয়ে গেছে শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বেকার হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। সেতু চালু হওয়ার একমাসের মধ্যেই যাত্রী ও যানবাহন অনেকাংশে কমে যাওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটের চার থেকে পাঁচশ হকার, দেড় শতাধিক টং দোকান, শতাধিক খাবার হোটেল ও অনেক বোডিং বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েকশ পরিবহন শ্রমিক। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসি ‘ দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যাবস্হাপক মোঃ সালাউদ্দিন জানান,পদ্মা সেতু চালুর আগে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে ফেরি ও লঞ্চে প্রতিদিন ৪/৫ হাজারের অধিক যানবাহন ও লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হতো। যানবাহনের চাপে ফেরির অপেক্ষায় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো। আর এখন উল্টো যানবাহনের জন্য দীর্ঘ সময় ঘাটে ফেরি গুলোকে অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে যানবাহন পারাপার কমে দৈনিক গড়ে ১৫/১৬’শ যানবাহন পারাপার হচ্ছে। যে কারনে ফেরি পারাপারের দৈনিক রাজস্ব আয়ও কমে গেছে সমানভাবে। তবে এখন মানুষের কোন ভোগান্তি নেই।এই রুট ব্যাবহারকারী সবাই স্বস্তিতে নদী পার হতে পারছেন।
দৌলতদিয়া ঘাটের মুদি দোকানদার শাহিন শেখ, ইসলাম সরদার, সুমন শেখ, ইমরান হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, সেতু চালু হবার দুই-তিন মাসের মধ্যেই তাদের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যারা এখনো আছেন তাদের বেঁচাকেনা একেবারে কম। এ দিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না।
মুদি দোকানী শাহিন শেখ বলেন, তিনি এখন গোয়ালন্দ বাজারে সিজনাল ফলের ব্যবসা শুরু করেছেন। একই ঘাটে থাকা মুদি দোকানদার সুমন শেখ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দোকান থেকে এক মিনিট বাইরে যাওয়ার সময় পেতাম না। দোকানে যাত্রীদের ভীড় লেগেই থাকত। সেতু চালু হবার পর থেকেই ব্যবসায় পুরোপুরি ধ্বস নামে। দুমাসের মধ্যেই দোকান বন্ধ করে ফেরির টিকিট বিক্রির কাজ করি। ফেরিতেও যাত্রী কম হওয়ায় তেমন বেতন পেতাম না। এখন নদীতে গিয়ে মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে কোনো মতো পরিবার নিয়ে দিন পার করছি।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন,পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ,দেশের অহংকার।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ত্বের অন্যতম নিদর্শন।
তবে এ সেতু উদ্বোধনের পর আমাদের এ এলাকায় দুটি ঘাট নির্ভর বহু মানুষের জীবন-জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো মানবেতর দিন কাটাচ্ছে বহু পরিবার।
আমি দৌলতদিয়া – পাটুরিয়ার এ রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, ঘাট দুটিকে দ্রুত আধুনিক নৌবন্দরে উন্নীতকরনসহ বিকল্প কর্ম সংস্হানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ।এর ইতিবাচক প্রভাব অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। দৌলতদিয়া তথা রাজবাড়ী-গোয়ালন্দের মানুষও এর সুফল পাচ্ছেন। তবে ঘাট নির্ভর কিছু মানুষের জীবন-জীবিকার প্রভাব পড়ায় বিগত এক বছরে দৌলতদিয়া ঘাট নির্ভর ৪-৫ শ লোক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে চলে গেছেন।সরকারীভাবে আমরাও অনেক নারী-পুরুষকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন এবং ঋন ও উপকরন দিয়ে বিকল্প পেশায় পূনর্বাসনে সহায়তা করছি।
তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।এটা বাস্তবায়ন হয়ে গেলে শুধু রাজবাড়ী জেরা নয় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বরশ কয়েকটি জেলাবাসীর যোগাযোগ এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি আরো বেশী গতিশীল হবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন বহু কর্মসংস্হানের।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়