“অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়ি নতুন সমাজ বিনির্মান করি ”- লেখক : ফারহানা জাহান মিনি
- Update Time : ১১:২১:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩
- / ১১০ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি গণনারী সংগঠন । যাপ্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ১৯৭ ০ সালের ৪ এপ্রিল । যেখানে মূল কথাই ছিল নারী পুরুষেরসম অধিকার সংরক্ষণ, নারীর ক্ষামতায়ন, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন পরিবার, সমাজ প্রতিষ্ঠা। উপমহাদেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উত্তরসূরী কবি সুফিয়া কামালের হাত ধরেই যার শুভসূচনা। (সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি এই সংগঠনটির বহুমাত্রিক অর্জন। যা এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীকে দেখিয়েছে সফলতার চাবিকাঠী।)
মহিলা পরিষদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে রয়েছে বহুমাত্রিক কর্মসূচী। যা ১২ টি ইউনিটের মাধ্যমে পরিচালিতহয়। যেমন- সংগঠন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও আইনী সহযোগিতা, নারী পূর্নবাসন কেন্দ্র, রোকেয়া সদন, আন্দোলন, গবেষণা -প্রশিক্ষণ ও লাইব্রেরী, প্রকাশনা গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প এবং নেটওয়ার্কিং তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের মহিলা পরিষদের প্রথম ইউনিটই হচ্ছে “সংগঠন” আর এই সংগঠন যদি আমরা অর্ন্তভ’ক্তি মূলক গড়তে পারি তবেই একটি নতুন সমাজ আমরা গড়তে পারবো এবং এটাই আমাদের আজকের ভাবনা।
সামাজিত দৃষ্টি কোন থেকেঃ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী যুগযুগ ধরে নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। তাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন, অপমান, অসম্মান, সালিশের নামে বেত্রাঘাত, দোররা মারা, চুলকেটে দেওয়াসহ নানা ভাবে অত্যাচার করা হয়। স্বামী স্ত্রীকে মুখে মুখে তালাক দিলে হিল্লা বিয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত জারি করেণ সমাজপতিরা । এ সমস্ত অনাচার নিরসনে আমাদের তৃণমূলের কর্মী বোনদের নিয়ে যারা মহিলা পরিষদের প্রতিশ্রদ্ধাশীলতাদের সমন্বয়ে আমাদের অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়তে হবে। তবেই তৃণমূলের এই সমস্ত সমস্যা সমাধানে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবো।
শিক্ষার অভাব ঃ পশ্চাৎপদ তার কারণে শিক্ষার অভাবে যুগযুগ ধরে নারী নিগৃহীত হয়ে আাসছে। অনেক বেসরকারী সংস্থা নারী উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যা সমাজে বিশেষ করে নারী সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও গ্রামের প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ অশিক্ষিত নারী সমাজকে নির্বিচারে নির্যাতন করতে পারবেনা। আমরা যদি বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়ে তুলি তাহলে একটি সুস্থ, নির্যাতনহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো। এক্ষেত্রে আমাদের ঐকান্তিক সদইচ্ছাই যথেষ্ট।
ধর্মীয়কু- সংস্কার ঃ একজন নারীর চলাফেলা, পোশাক পরিচ্ছদ সহ সব কিছুর উপর বেআইনী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে না রীকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু মৌলবাদী মানসিকতার প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষিত হয়েও পোশাকের ব্যাপারে ধর্মীয় বেআইনী ফতোয়া দিয়ে শিক্ষক, ছাত্রীদেরকে হয়রানী, মানসিক নির্যাতন করে থাকেন। এ সমস্ত ব্যাপারেও আমরা মহিলা পরিষদ ঐক্য বদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ নিলে ঐ মৌলবাদী গোষ্ঠি আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেনা। এজন্যও আমাদেরকে সকল পেশার সচেতন নারী সমন্বয়ে অর্ন্তভ’ক্তিমূলক সংগঠন গড়তে হবে।তবেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত সমাজতথা সমাজ থেকে ফতোয়া দূর হবে।
জেন্ডার বৈষম্যতা ঃ পুরুষ কর্তৃক সৃষ্ঠ জেন্ডার বৈষম্যতা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও কর্মক্ষেত্র সর্বত্রই বিদ্যমান এবং যার শিকার নারীরা। বিশেষ করে বিদ্যমান পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে। একটি শিশু স্ত্রী লিঙ্গ নিয়ে জন্মালেও সে জানেনা সে নারী, না পুরুষ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনের বেড়াজালে তাকে মেয়েলী করে তোলা হয় এবং তার ওপর আরোপিত হয় নানা বিধি নিষেধ। সে পরিনত হয় নির্যাতনের লক্ষ্য বস্তুতে। সমাজে নারী পুরুষের সর্ম্পকের মধ্যে জেন্ডার এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলে যেখানে প্রতিনিয়তই প্রতিপদে নারী বাধাগ্রস্ত। অতএব সর্বত্রই অর্থাৎ তৃণমূলের নারী, শহর ও শহরতলীর প্রতিষ্ঠান ও অপ্রতিষ্ঠানিক কাজের নারী সকলের সমন্বয়েই আমাদের এই সমস্ত সমস্যা প্রতিরোধে সংগঠনের কার্যক্রম বেগমান করার লক্ষ্যে আমাদের অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আর তবেই আমরা সুস্থ ধারায় জীবনপাত করে নিজেকে তথা সমাজ ও সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
বর্তমান সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অংশ গ্রহণ বেশী দৃশ্যমান, নারী তার যোগ্যতা দিয়ে সমাজে স্থান করে নেওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিক’লতা, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নারী ক্রমাগত অব্যাহত রাখছে তার অগ্রযাত্রা। তার এই প্রতিপদে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে আমাদের মহিলা পরিষদের নারী আন্দোলনকে আরো বেগমান করতে আমাদের অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়তে হবে। সেই সাথে মূলধারার নারী আন্দোলনে সব শ্রেনী পেশার নারীদের যে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা গুলো রয়েছে তা এই আন্দোলনে অর্ন্তভ’ক্ত করতে হবে। কেননা নারী পুরুষের সমতা ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক তাই গড়ে তোলে মানবিক সমাজ। দীর্ঘদিনের নারী আন্দোলনে এই সত্য টুকুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারী আন্দোলন সামাজিক আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং নারীর উন্নতি ব্যাতিরে কে সমাজের কোন উন্নতিই সম্ভব নয়। তাই সমাজের প্রান্তিক নারী, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত নারী, তরুনী, ছাত্রী সকলকে সংগঠিত করে শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেমন মহিলা পরিষদ বদ্ধ পরিকর তেমনি সকলের সমন্বয়ে অর্ন্তভ’ক্তি মূলক সংগঠন গড়ে তৈরী হবে একটি নতুন সমাজ।
“ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
চিরজীবি হোক।”
লেখক – ফারহানা জাহান মিনি
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
রাজবাড়ী জেলাশাখা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়