ফেরি চলাচলে অধিক সময়, ২৪ ঘন্টায় ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি অতিরিক্ত জ্বালানী খরচ

- Update Time : ০৬:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩
- / ২৬২ Time View

ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
দেশের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ দ্বাড় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুট। এ নৌরুটে শীত ও শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌ রুটেটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে চরমে।নদীর মাঝের অংশে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ জুড়ে বিশাল ডুবোচড় জেগে ওঠার কারনে সাড়ে তিন কিলোমিটার নৌরুট পার হতে ফেরি গুলো আরো দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।এদিকে সন্ধ্যার পর কুয়াশার কারনেও ফেরি গুলো ধীর গতিতে যাতায়াত করতে হচ্ছে।আগে যেখানে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে স্বাভাবিক সময়ে ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগত,বর্তমানে সেখানে প্রায় দ্বিগুন অর্থাৎ ৫০ মিনিটেরও বেশি সময় লাগছে।
গত বছর এই সময়ে একটি ফেরি স্বাভাবিক সময়ে চর জেগে না ওঠায় ২৪ ঘন্টায় ২৮/৩০ ট্রিপ দিতে পারলেও বর্তমানে সেখানে ১৮/২০ টির বেশি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।এতে পারাপারে প্রায় দ্বিগুন সময় ব্যায় হওয়ার কারনে ফেরির জ্বালানী খরচও বেড়েছে দের গুন। স্বাভাবিক সময়ে একটি ফেরিতে ১০০ লিটার জ্বালানী ব্যায় হলেও সময় বেশি লাগায় ১শ ৫০ লিটার তেল খরচ হচ্ছে । আগের চাইতে ৫০ লিটার অতিরিক্ত বেশি তেল পুরছে প্রতিটি ফেরিতে। তবে এ নৌরুটের রোরো,কে-টাইপ ও ইউটিলিটি সহ ছোট বড় ফেরি চলাচলে তেল খরচের তারতম্য রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবোচড় জেগে ওঠায় অতিরিক্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে আসা এবং কুয়াশায় ধীর গতিতে ফেরি চলাচলের কারনেও অতিরিক্ত ৫০ লিটার জ্বালানী বেশি ব্যায় হচ্ছে।ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০ বার আপ-ডাউনে প্রতিদিন একটি ফেরিতেই ১০০০ লিটার বেশি জ্বালানী তেল পুরছে।এভাবে প্রতিদিন ১৫ টি ফেরিতে ১৫ হাজার হাজার লিটার জ্বালানী তেল বেশি খরচ হচ্ছে। ১ লিটার ডিজেলের দাম ১ শ ৯ টাকা লিটার দরে যার একদিনেই অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি।অতিরিক্ত এ খরচ শুধু নাব্য সংকটে দীর্ঘ্য ডুবোচড় জেগে ওঠা এবং ঘন কুয়াশায় ধীর গতিতে ফেরি চলাচলের কারনে হচ্ছে। যদিও গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে ২ হাজার ও প্রস্থ্যে ৩ শ ফুট ফেরি চলাচলের চ্যানেলে নাব্যতা ফিরিয়ে স্বাভাবিক ফেরি চলাচলে ড্রেজিং করা হয়েছিল।কিন্তু ফেরি চলাচলের সময় ফেরির হুইলে কাটা পলি ও উজান থেকে নেমে আসা পলি মাটি ফেরির চ্যানেলে ভরাট হওয়ায় একসাথে দুটি ফেরি চলাচলে বাধা গ্রস্থ্য হচ্ছে।একারনে দীর্ঘ পথ দ্বিগুন সময় ব্যায় করে অতিরিক্ত জ্বালানী তেল খরচ করে ফেরি চলাচল করতে হচ্ছে।
তবে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস,পন্যবাহী ট্রাক,কাভার্ড ভ্যান,প্রাইভেটকার,মাইক্রোবাস,মোটর সাইকেল সহ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শ যানবাহন পারাপার হয়।ছোট বড় মিলে এসব যানবাহন পারাপার থেকে সরকারী ভাবে প্রতিদিন ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি আয় হয়।
দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলরত বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ফেরির মাস্টার শাহারিয়ার সোহেল জানান,বর্তমানে ফেরি চলাচলের চ্যানেলে দীর্ঘ ডুবোচড় জেগে ওঠার কারনে দেরগুন বেশি পথ ঘুরে আসতে আগের চাইতে দেরগুন বেশি জ্বালানী তেল খরচ হচ্ছে। ২৫/৩০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে ৪৫/৫৫ মিনিট সময় বেশি লাগছে।গত বছরের এই সময়ে এ্যাত পথ অতিক্রম করে ঘুরে আসতে হয়নি,স্বাভাবিক সময় ও গত বছরের তুলনায় ট্রিপ সংখ্যা কমেছে ১০ টির মত।আগে যেখানে ২৮/৩০ ফেরির ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হত বর্তমানে বেশি পথ অতিক্রম করায় সময় বেশি লাগায় চলতি সময়ে ১৮/২০ টির বেশি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।বর্তমানে নদীর মাঝের অংশে বিশাল চর পরার কারনে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সময় ও জ্বালানী খরচ বেড়েছে অনেক বেশি।
পন্যবাহি ট্রাক ড্রাইভার আমিনুল ইসলাম জানান,তিনি কুষ্টিয়া থেকে সপ্তাহে দুইবার ঢাকায় মালামাল পরিবহন করেন।কিন্তু নদীর মাঝে যে বিশাল চড় জেগেছে এতে নদী পার হতে আগের চাইতে ফেরি লোড আনলোড সহ এক ঘন্টা বেশি সময় লাগছে।অন্য আরেকটি পন্যবাহি পরিবহনের চালক আমজাদ হোসেনও এ নৌরুটে ডুবোচড় জেগে ওঠায় ও ঘন কুয়াশায় নদী পার হতে সময় বেশি লাগায় মাঝে মাঝে সময় মত পন্য পরিবহন করতে বিড়ম্বনায় পরার কথা জানান।
বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন বিভাগের এজিএম আব্দুস সাত্তার জানান,নদীর মাঝের অংশে বিশাল চর জেগে ওঠায় ফেরিগুলো ঘুরে আসতে সময় ও জ্বালানী খরচ বেশি হচ্ছে।স্বাভাবিক সময়ে যেখানে একটি রোরো ফেরি ১০০ লিটার তেলে একবার যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারত।বর্তমানে সেখানে দীর্ঘ পথ ঘুরে আসতে সময় বেশি লাগায় অতিরিক্ত তেল খরচ হচ্ছ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্পোরেশন বিআইডব্লিউটিসি’র তথ্য মতে ফেরির প্রতি আপডাউনে ২০/২৫ মিনিট সময় বেশি লাগায় একটি ফেরিতে বাড়তি ৫০ লিটারের মত তেল অতিরিক্ত বেশি খরচ হচ্ছ।আর ২৪ ঘন্টায় ১৮/২০ বার আসা যাওয়ায়(আপ-ডাউন) একটি ফেরিতেই বাড়তি ১০০০ লিটার তেল প্রয়োজন পরছে।বর্তমানে ১৫ টি ফেরি ২৪ ঘন্টায় ৩০০টি ট্রিপ দিতে পারে।টিসির দেওয়া তথ্যের হিসাব ক্যালকুলেশন করে দেখা যায় একটি ফেরিতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০০ লিটার জ্বালানী তেল প্রয়োজন হলেও ১৫ টি ফেরিতে ১৫ হাজার লিটার অর্থাত টাকার অংকে ১৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। প্রতিদিন সরকারের বড় একটি বাড়তি খরচ হচ্ছে।একটি রোরো ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস হলে ১২ টি, বড় ট্রাক ১৭ টি, শুধু মাইক্রো বাস ও প্রাইভেটকার হলে ৫৫ টি৷ সহ এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার ছোট বড় যানবাহন ফেরি পারাপারে ২৫ লক্ষ টাকার মত সরকারী ভাবে আয় হয়।তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ নৌরুটে প্রায় যানবাহন পারাপার কমে গেছে অর্ধেকে।
তবে গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করে নাব্যতা সংকট কাটানো হয়েছে।কিন্তু ফেরি চলাচলের চ্যানেলে উজানের পলি এসে ভরে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে ফেরি চলাচে।এই চ্যানেলে আবার ড্রেজিং করে পলি অপসারন করা হবে,যাতে স্বাভাবিক গতিতে ফেরি চলাচল করা যায়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়