বাজারে ডিমের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি দাম কম-বেশীতে হাত নেই পোল্ট্রি খামারীদের

- Update Time : ০৯:০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
- / ৭৫ Time View

আজু শিকদার, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
সারা দেশের ন্যায় পোল্ট্রি সেক্টরে ২য় উৎপাদনকারী উপজেলা রাজবাড়ী গোয়ালন্দেও ডিমের দাম বেড়েই চলছে। দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে দাম বৃদ্ধিতে হাত নেই পোল্ট্রি খামারীদের। সিন্ডিকেটের বেঁধে দেয়া দামেই ডিম বিক্রি করতে হয় তাদের।
জানা যায়, সুলভ প্রোাটিনের উৎস হিসেবে নি¤œ আয়ের অধিকাংশ পরিবারের দৈনিক খাদ্যতালিকায় থাকা ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ের মতো ডিমের বাজার এমন অস্থিতিশীল অতীতে কখনো ছিল না। নানা অজুহাতে ডিমের দাম বাড়লেও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ক্রেতা থেকে শুরু করে পোল্ট্্ির খামারীরা পর্যন্ত। প্রতিদিন ম্যাসেজের মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারন করে এই সিন্ডিকেট। তবে পোল্ট্রি ফিডের দাম আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুন। এতে বাজারে ডিমের দাম বেশী হলেও খামারীরা খুব বেশী লাভবান হতে পারছেন না।
সরেজমিন জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের খামারী মিরাজ উদ্দিন। গত ২৫ বছর ধরে মুরগীর ডিম উৎপাদন করে আসছে। তার খামারের উৎপাদিত ডিমের দাম তিনি নির্ধারণ করতে পারে না। ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেয়া দামে তার ডিম বিক্রি করতে হয়। এতে মিরাজ উদ্দিনের লোকসান হলেও ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেয়া দামে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য। তিনি জানান, ডিমের দাম বৃদ্ধিতে দেশে হইচই হলেও এখনো তারা লোকসানে রয়েছে। খাবারের দাম বৃদ্ধির কারনে একটি মুরগীর প্রতিদেনে খাবার খায় ৮ টাকা থেকে ৯ টাকার আর পরিচর্যাসহ একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পরে ১০ টাকার বেশি। খামার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী তারপর খুচরা ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌছাতে ১২ টাকা হচ্ছে সেই ডিমটির দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে মুরগীর খাবারের প্রতি কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা। যেটা বস্তাপ্রতি প্রায় ১২শ টাকা। মুরগীর খাবারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারনে এরই মাঝে অনেক খামার বন্ধ হয়েছে। তিনি আরো জানান, তাদের ফার্ম থেকে ব্যবসায়ীরা ডিম নিয়ে যায়, কিন্তু তখনো তারা জানেন না ডিমের দাম কত? এমনও ঘটনা ঘটে যে, সরাদিন পর রাতে তাদের রেট জানানো হয়।
গোয়ালন্দ পৌর এলাকার পোল্ট্রি খামারী নুরে আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি পোল্ট্রি খামার করেন। ফিড, ওষুধসহ অন্যান্য খচর বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই তিনি তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পাননি। এরই মধ্যে তার খামারের মুরগীগুলে অসুস্থ্য হয়ে একদিনে সব মারা যায়। এতে তার অন্তত ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়। এরপর পুঁজি সংকটে তিনি আর নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারেননি।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পোল্ট্রি খামারী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি গত ৪ বছর ধরে পোল্ট্রি খামারে লেয়ার মুরগী পালন করে ডিম উৎপাদন করছেন। ১২ মাসের ৯ মাসই লোকসান হয়ে থাকে। যে কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল। এক বছর আগে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ছিল ৮ টাকা। বিক্রি হতো সাড়ে ৬ টাকা থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত। গত ৪ মাস আগে ডিমের দাম বাড়ে। তখন থেকে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে শুরু করি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে আবার দাম পড়ে যায়। ফের শুরু হয় লোকসান। তবে বর্তমানে ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা হলেও আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর) ১১ টাকা করে ডিমের দাম পেয়েছেন তিনি বলে জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা পোল্ট্রি মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, বিভিন্ন ওষুধ, ভ্যকসিন ও ফিডের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে ইতিমধ্যে ৩০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক খামারী পুজি সংকটে পড়ে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে উৎপাদন করেও কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। সহজ শর্তে খামারীদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করলে পোল্ট্রি সেক্টরের অস্থিরতা কেটে যাবে।
স্থানীয়ও ডিম ব্যবসায় আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি প্রতিদিন ১ লাখেরও বেশী ডিম কেনা-বেচা করে থাকেন। ডিমের দাম নির্ধারনে তারও কোন হাত নেই। ঢাকা থেকে ডিমের রেট নিধারন করে ম্যাসেজ আসে, সে অনুযায়ী তিনি ডিম কেনা বেচা করেন।
গোয়ালন্দ বাজারের অপর ডিম ব্যবসায়ী (নাম প্রকারশ অনিচ্ছুক) জানান, দেশের বড় ডিম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মের ডিপো থেকে তাদেরকে প্রতিদিন ডিমের রেট নির্ধারন করে দেয়। সে অনুযায়ী তারা ডিম ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম পোল্ট্রি জোন হিসেবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানের এখানকার খামারীরা দুরাবস্থার মধ্যেই রয়েছে। পোল্ট্রি ফিডের দাম সহনশীল পর্যায়ে না আসলে ডিমের দাম কমাসহ এ শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিক হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে খামারীদের সুবিধার্থে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়