কালুখালী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৪জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলা
- Update Time : ০৮:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ১৯৭ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর কালুখালীতে চাঁদার দাবীতে পাট ব্যবসায়ীর গুদামে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান আলীউজ্জামান চৌধুরী টিটো সহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) রাজবাড়ী ২ নং আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন রাজবাড়ী সদরের ধুঞ্চী গ্রামের মৃত নবিজ উদ্দিনের ছেলে পাট ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো।
মামলার আসামীরা হলেন, কালুখালীর রতনদিয়া গ্রামের মৃত নাজির হোসেন ( নিলু চৌধুরী) ছেলে ও কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, মালিয়াট গ্রামের মৃত পরিতোষ কুমার সাহার ছেলে
নির্মল কুমার সাহা, বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত কালিপদ সাহার ছেলে রাম প্রসাদ সাহা, মালিয়াট গ্রামের মৃত নৃপেণ দত্তের ছেলে জগন্নাথ দত্ত সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫জন।
ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো বলেন, তিনি একজন পাট ব্যবসায়ী। কালুখালী বাজারে মৌসুমী পাট খরিদের ব্যবসা করে আসাবস্থায় রতনদিয়া মৌজায় ১৮৯০ বর্গফুট পরিমাপ বিশিষ্ট বিএডিসি’র একটি গুদাম ঘর ২০০৬ সালের ২ জুলাই একটি ভাড়া নেন। ওই ঘরে কালুখালী সহ বিভিন্ন বাজারের কৃষকদের নিকট থেকে এবং স্থানীয় আড়ৎদারদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করে গুদাম ঘরে গুদামজাত করে বেল বেঁধে বিভিন্ন পাটকলের ক্রয়কেন্দ্রে ও মিলগেটে পৌঁছাইয়া থাকেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের ইউএমসি পাটকল সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী পাটকলে পার্ট সরবরাহ করে পাটকলগুলির কাছে টাকা পাওনা আছেন। এমনকি সরকারী অডিট অফিসার কর্তৃক বকেয়া সরবরাহকৃত পাটের মূল্য প্রাপ্ত হইবেন মর্মে তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্টতঃ উল্লেখ করেন। বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও পাট ব্যবসা বন্ধ করেননি । ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে ভাড়া চুক্তিনামা নবায়ন করে গুদাম ঘরটি নিজ দখলে রেখেছেন। বর্তমানে ওই গুদাম ঘরে প্রায় দুই কোটি টাকা সম মূল্যের পাট সহ বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রপাতি পাট ওজনের পরিমাপ যন্ত্র, পাটের বেল প্রস্তুতের যন্ত্র এবং বেশ কিছুপরিমাণ রবি শস্য রক্ষিত রয়েছে।
তিনি বলেন, তার বাড়ী রাজবাড়ী শহরের ধুঞ্চী এলাকায় হওয়া সত্ত্বেও তিনি দুরবর্তী স্থান থেকে কালুখালীতে এসে সরকারী গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করায় উপজেলা চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো সহ অন্যান্যদের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, উক্ত আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় সংগঠন থেকে বহিস্কৃত হন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে কালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দিতা করে পরাজিত হন। বিগত ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করেন এবং কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় পেশী শক্তির দাপট দেখিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া পারিবারিকভাবে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পূর্ব থেকে ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত। আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটোর পিতা নাজির হোসেন চৌধুরী ওরফে নিলু চৌধুরীর নাম সরকারি গেজেটভূক্ত বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার রাজাকার তালিকায় ৯৬ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তিকে নানাভাবে হয়রানী ও নাজেহাল করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে তার নিজ স্বাক্ষরে কতিপয় ব্যক্তিকে দিয়ে কালুখালী সাব রেজিষ্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতি গঠন করে চাঁদাবাজীর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের নিকট থেকে বেআইনীভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে বৈধভাবে গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা সত্ত্বেও টিটো চৌধুরী গুদাম ঘর সংলগ্ন জায়গায় রোপিত একটি শিশু গাছ জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যায় এবং ক্ষমতার দাপট ও প্রভাব দেখাইয়া চাঁদাদাবী সহ বিভিন্ন সময়ে চাঁদার টাকা গ্রহণ করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জানুয়ারী অন্যায় লোভের বশবর্তী হয়ে এবং অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে গুদাম ঘরের প্রধান গেটে ঝোলানো তালা ভেঙ্গে জোরপূর্বক নিজের একটি তালা লাগিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, তালা ঝুলানোর সময় আশেপাশের উপস্থিত দোকানদার ও স্থানীয় লোকজন সহ গুদাম ঘরে তালা লাগাতে নিষেধ করলে তারা গুদাম ঘরের ভিতরে থাকা যাবতীয় পাট এবং অন্যান্য মালামাল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে বলেও হুমকি প্রদান করে। গুদাম ঘর খুলে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য গত ১৪ জানুয়ারী আইনজীবী বাবু স্বপন কুমার সোমের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন। লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত ২৮ জানুয়ারী গুদাম ঘরের প্রধান ফটকের সামনে গেলে খবর পেয়ে টিটো চৌধুরী সহ অন্যান্যরা পরিকল্পিতভাবে তার উপর চড়াও হয় এবং মারপিট করিতে উদ্যত হয়।
তিনি বলেন, গুদাম ঘরের তালা খুলে দেওয়ার জন্য বললে টিটো চৌধুরী হুমকি দিয়ে বলে, কালুখালীতে ব্যবসা করতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। নইলে এখানে ব্যবসা করতে পারবি না। দাবীকৃত টাকা চাঁদা না দিয়া গুদাম ঘরের দিকে তাকালে খুন করে লাশ বস্তায় প্যাকেট করে রাজবাড়ীতে পাঠাইয়া দেব এবং কালুখালীতে ব্যবসা করার সাধ মিটাইয়া দিব বলে হুমকি দেয়। এসময় অন্যান্যরা বিশ্রী, কুরুচিপূর্ণ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তার পকেটে থাকা নগদ সাতাত্তর হাজার আটশত টাকা চাঁদা বাবদ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাকী টাকা প্রদান না করলে গুদাম ঘরটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিবে এবং চিরদিনের জন্য ব্যবসার সাধ মিটিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, বিষয়টি গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের জানালে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। এ কারণে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশী।
এ বিষয়ে কালুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটোর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি।
বাদীর আইনজীবি রাজবাড়ী বারের এ্যাড. বিপ্লব কুমার রায় বলেন, মামলাটি আদালতের বিচারক গ্রহণ করেছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়