দশ পদের ৮টিই শুন্য, জনবল সংকটে গোয়ালন্দ পশু হাসপাতাল
- Update Time : ০৭:১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩
- / ১২৬ Time View
আজু শিকদার, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
জনবল সংকটে অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে গোয়ালন্দ পশু হাসপাতাল। এ পশু হাসপাতালে ১০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২জন। এতেকরে গৃহপালিত পশুর রোগবালাইতে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না সাধারন কৃষক ও খামারীরা।
জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে রাজস্ব খাতের ১০টি পদের মধ্যে আটটিই শূন্য। বহিরাগত এমনকি ওষুধের দোকানের কর্মচারী দিয়েও দেয়া হচ্ছে পশুর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা। উপজেলার কৃষক ও বিভিন্ন খামারীরা জানান, তাদের পালিত কোন গবাদি পশু রোগে আক্রান্ত হলে উপজেলা পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলেও কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। এমনকি পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও কোনও চিকিৎসকের নাগাল পাওয়া যায় না। এতেকরে প্রতিনিয়ত তারা চরম বিরম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা।
এদিকে মো. আব্দুল কাদের নামের একজন অবসরপপ্রাপ্ত কর্মচারী ও বহিরাগত ওষুধের দোকানের কর্মচারীদের দিয়েই সচল রাখা হয়েছে গবাদি পশুর চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে চিকিৎসক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে গবাদি পশুর যথাযথ চিকিৎসা সেবা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ সহকারী, ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ড্রেসার ও অফিস সহায়ক মিলে মোট ১০টি পদ রয়েছে। তবে এখানে একজন ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট ও একজন ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার ছাড়া আর কোন পদে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত নেই।
স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারী ও খামারীরা জানান, ভেটেনারি চিকিৎসক ছাড়া কোনো গবাদি পশুর চিকিৎসা অন্য কারো করার কথা নয়। অথচ এই হাসপাতালে ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। এখানে অসুস্থ গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর নানা রোগের চিকিৎসা করছেন ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার। সব রোগের চিকিৎসায় তিনি সাদা কাগজে চিকিৎসাপত্র লিখে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালন্দ পশু হাসপাতালে বেশ কয়েকজন কৃষক তাঁদের অসুস্থ গরু ও ছাগল চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন গবাদি পশুর দেহে ভ্যাকসিন দিচ্ছেন ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। বারান্দায় বসে একটি ছাগলের বাচ্চার দেহের ক্ষতস্থান সেলাই করছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আ. কাদের। পশু হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় অবসরে গিয়েও তিনি নিয়মিত এ হাসপাতালে চিকিৎসা কাজে সহায়তা করতে আসেন। কর্তব্যরত ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এ কথা সত্য যে ভেটেরিনারি চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ গবাদি পশুর চিকিৎসা দিতে পারেন না। তবে গবাদি পশু চিকিৎসায় আমার ডিপ্লোমা কোর্স করা আছে। এই হাসপাতালে ভেটেরিনারি সার্জন পদ শূন্য হয়ে আছে। তাই হাসপাতালে আসা বিভিন্ন গবাদি পশুর চিকিৎসা আমি দিচ্ছি।’
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার শূন্য পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন ডা. মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে গোয়ালন্দে এসে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে অসুস্থ্য পশুর চিকিৎসা করাতে আসা একাধিক ব্যাক্তি জানান, পাশের একটি ওষুধের দোকানে কাজ করা এক যুবক পশু হাসপাতালে মাঝে-মধ্যে এসে অসুস্থ পশুকে ইঞ্জেকশন পুশ করাসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।
হাসপাতালটিতে পশুর চিকিৎসা নিতে আসা আ. রাজ্জাক মোল্লাসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে গবাদিপশুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা তারা পান না। বাধ্য হয়ে বাইরের চিকিৎসক দিয়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা করাতে হয়। এতে পশুর যথাযথ চিকিৎসাও ব্যাহত হয়, পাশাপাশি তাদের হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়।
অবসরপ্রাপ্ত ড্রেসার আ. কাদের জানান, জনবল কম থাকায় তিনি অবসর নিলেও এখনও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ও গোয়ালন্দে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারের কাছে ওষুধের দোকানের কর্মচারীর চিকিৎসা প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো লোক রাখিনি।’ তিনি আরো জানান, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে শূন্য পদগুলোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদায়ন করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়