“লড়াকু নারী মনোরমা বসু মাসি মা”- লেখক: শারমিন রেজা লোটাস
- Update Time : ১১:০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২
- / ৫৩ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
শতাব্দীকাল ধরে যে মহীয়সী নারী তাঁর কর্মপ্রবাহে সম্পৃক্ত করেছিলেন বরিশাল তথা দেশের রাজনৈতিক জীবন ধারাকে, নারী জাগরণের, নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করেছিলেন এদেশের নারী সমাজকে সেই মানব দরদী মনোরমা বসুর কত টুকু সবাই জানে? মানবতাবাদ যাঁর অন্তরের উচ্চারণ তিনি কখনও ভিন্ন তার ছোঁয়া নিয়ে চলতে পারেন না।
মাসীমার নিজের ছেলে মেয়ে ছিল অথচ তিনি অভিন্ন। দৃষ্টিতে দেখেছেন সবাইকে। সমাজের পংকিলতায়। পদঙ্খলিত অসহায় মেয়েদের তিনি বুকে টেনে নিয়ে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছেন আশ্রয় কেন্দ্র। দিয়েছেন মাতৃস্নেহ। মাতৃমন্দির হয়ে উঠেছে অনন্য পীঠস্থান। মাতৃমন্দির শুধু বরিশালবাসীর সম্পদ নয়-সারা দেশের মানুষের জন্য এ এক মহৎ উত্তরাধিকার । মাসীমার । কর্মধারা ছিল ত্রিমুখী। সমাজ কল্যাণ নারী মুক্তি আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগ্রাম। কোনটাকে তিনি পৃথক করে দেখেন নি। সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। যখনই। যে কাজকে প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে মনে করেছেন তখনই তা করার জন্যে উদ্যোগী হয়েছেন প্রচন্ড প্রাণ শক্তি নিয়ে। তাই মনোরমা মাসীমা হয়ে উঠেছেন কখনও রাজনৈতিক নেত্রী, কখনও সমাজসেবী আর কখনও নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রসেনানী।
হয়তো আজ সবার মাসিমা হতে পারতেন না, ‘কোন এক গাঁয়ের বধু’ হয়েই হয়তো থকতেন। এরই মধ্যে মাসিমার নামে আবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। শুরু হয় পলাতক জীবন। ১৯৫৬ সালে পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলে আবার বরিশালে ফিরে আসেন তিনি। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে আত্ম নিয়োগ করেন মাতৃমন্দির, মুকুল-মিলন খেলাঘর আর পল্লি উন্নয়ন অমৃত পাঠাগার প্রতিষ্ঠায়। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে এর প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন তিনি। দেশ স্বাধীন হলে তিনি বেশ স্বস্তিপান।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আবার সংগঠনের কাজে যোগ দেন। এরই মধ্যে পার্টিরকমিউন হিসেবে মাতৃমন্দিরে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। নলিনী দাস, মুকুল সেনসহ বেস কয়েক জন পার্টি-নেতার দেখাশোনার ভার গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের পাশে দাঁড়ান মাসিমা। এরই মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মেলনে যোগদিতে আন্দামান যান তিনি। সোভিয়েত নারী কমিটির আহ্বানে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে যান। ১৯৮০ সালের পরের দিন গুলো তার কখনো মেয়ের বাড়ি, কখনো নিজের বাড়িতেই কেটেছে।
১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেন বরিশালের মাতৃমন্দিরে। মনোরমা বসু শেরে বাংলা পদক, বেগম রোকেয়া পদকসহ আরো অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন। সংগ্রামী জীবনের এই নারী আজ অনেকের কাছেই অপরিচিত। তবে তিনি কখনোই কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবেন না। জন্ম থেকে জন্মান্তর বেঁচে থাকবেন সবার মাসিমা হয়েই।
লেখক: শারমিন রেজা লোটাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়