“হেনা দাসের সংক্ষিপ্ত জীবনী” : লেখক – মোর্শেদা আক্তার
- Update Time : ১০:৪৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
- / ১৫২ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
ডাক্তার ফৌজিয়া মোসলেম যথার্থই বলেছেন – হেনা দাসের বিষয়ে যদি বলা হয় হেনা দাস-এর অপর নাম‘সংগ্রাম ,সংগ্রাম’ তাহলে তাকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা হয় ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অষ্টম সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিতহন শ্রদ্ধেয় হেনা দাস। এর আগে তিনি মহিলা পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন বাংলাদেশের সাধারণ নারীদের তুলনায় তিনি ছিলেন দীর্ঘকায় এবং বক্তব্যে ছিলেন তেজোদ্দীপ্ত।
হেনা দাসএর জন্ম ১৯০০ শতকের দ্বিতীয় দশকে। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারি। মামনোরমা দত্ত পিতা সতীশ চন্দ্র দত্তের কনিষ্ঠ সন্তান। তার বাবা ছিলেন গোঁড়ামী মুক্ত, আধুনিকচিন্তা- চেতনার অধিকারী। মা ছিলেন ধর্মপরায়ণ গৃহিণী।
১৯০০ শতক ভারতের জনমানুষের নবজাগরণের যুগ। এই নবজাগরণের ঢেউ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। হেনা দাসের জন্মস্থান সিলেট শহরে এই জাগরণের প্রভাব পড়ে। হেনা দাসের স্কুল জীবন শুরু হয় সিলেট শহরের কাছে একটা স্কুলে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে তিনি তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন। অষ্টম শ্রেণীতে থাকা কালীন তিনি ও তারসহ পাঠীরা মিলে প্রকাশ করেন স্কুল ম্যাগাজিন অষ্টমিকা।
তিনি গার্লসগাইড এ যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এনরোলমেন্টএর সময় তিনি জানতে পারলেন ব্রিটিশ ইউনিয়ন জোটের পতাকা স্যালুট জানাতে হবে এবং প্রতিজ্ঞা নিতে হবে ‘আমি রাজার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো’। এই প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পেরে তিনি প্রতিবাদ জানালেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিত হন। ছাত্রী অবস্থা থেকেই তিনি যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। শুধু যুক্ত থাকানয় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন সিলেট শহরের সকল রাজনৈতিক সামাজিক কর্মসূচিতে। ১৯৪০ সালে স্কুল প্রবেশিকা পাশ করে স্কুল পর্ব শেষ করেন। ঠিকতার পরপরই দেশ জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন জ্বলে। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালে ব্রিটিশ সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত পত্রিকা পড়ার সাহস তাঁর হয়েছিল।
পরবর্তীতে নারী শিক্ষা, প্রান্তিক ও বঞ্চিত নারীদের সংগঠিত করা, নানা কারনারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামসহ আরো বহু ক্ষেত্রে এই অসামান্য কাজ করেছেন। ব্রিটিশ-বিরোধী-আন্দোলন, ভাষা-আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে তিনি ছিলেন সক্রিয়।
এই সাহসী সংগ্রামী নারী সারাজীবন সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। বাংলার নারী জাগরণে যে ক’জন নারী তাঁদের সময়ের গন্ডি পেরিয়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন হেনা দাসতাঁদের মধ্যে অন্যতম। হেনা দাসতাই এক সাহসী যোদ্ধার নাম। এক প্রেরণা ও আপোষহীন ব্যক্তিত্বের নাম।
হেনা দাস লিখিত বইয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘শিক্ষা ও শিক্ষকতাজীবন’, ‘উজ্জ্বল স্মৃতি’, ‘স্মৃতিময় দিনগুলো’, ‘নারী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা’, ‘স্মৃতিময় ’৭১’ এবং‘চার পুরুষের কাহিনী’। ২০০৯ সালের ২০ জুলাই ৮৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুহয়।
লেখক – মোর্শেদা আক্তার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়