রাজবাড়ীতে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কৃষি ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তার জামিন
- Update Time : ০৯:২১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩
- / ২০৮ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ী কৃষি ব্যাংকের ৩৪৬টি ঋণ প্রস্তাবের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দায়েরকৃত মামলায় কৃষি ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা জামিন পেয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার দুদকের পিপি রাজবাড়ী বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. বিজন কুমার বোস ওই ৫জনের জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন।
বুধবার রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে এ মামলায় জামিন পান ওই ৫ কর্মকর্তা। এর আগে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান ৫ কর্মকর্তা।
এরা হলেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক পরিদর্শক ও বর্তমানে কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্তকৃত) শরীয়তপুর মূখ্য আঞ্চলিক কার্যালয় ও রাজবাড়ী সদরের বিনোদপুর কলেজপাড়ার মোঃ শামসুদ্দিন মৃধার ছেলে মোঃ রেজাউল হক (৪৩), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক পরিদর্শক বর্তমানে কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্তকৃত) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী মূলঘর শাখা ও রাজবাড়ী দক্ষিণ ভবানীপুর এলাকার মৃত সৈয়দ আমীর আলীর ছেলে মোঃ মোর্তুজা আলী (৪১), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সজ্জনকান্দা গ্রামের মৃত মোঃ আবু ইউসুফের ছেলে মোঃ মইনুল ইসলাম (৬৩), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত গোপালগঞ্জ জেলার হাটবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান (৬৫) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত রাজবাড়ীর লক্ষণদিয়া গ্রামের মৃত খুরশেদ আলমের ছেলে মোঃ সিদ্দিকুর রহমান (৬৮)।
অভিযুক্ত অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক পরিদর্শক, বর্তমানে- অবসরপ্রাপ্ত চরনারায়নপুর গ্রামের মৃত গেজন মন্ডলের ছেলে মোঃ গোলাম গাউস (৬৫) যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শরীয়তপুর জেলার আংগারিয়া গ্রামের আলহাজ্ব ওয়াজ উদ্দিন সরদারের ছেলে এস এম দেলোয়ার হোসেন(৬১) ।
জানাগেছে, গত ১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম রাজবাড়ী কৃষি ব্যাংকের ২ কোটি ২০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা আতœসাতের ঘটনায় কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগে প্রকাশ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রচলিত বিধি বিধান ও জেনারেল ব্যাংকিং ম্যানুয়াল লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখায় ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সময়ে কর্মরত থাকাকালে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যম রেকর্ডপত্র সৃজন পূর্বক ৩৪৬ টি ঋণ প্রস্তাবের মাধ্যমে ২ কোটি ২০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা ঋণ প্রদানের সুপারিশ করেন। ঋণ নথি ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে মঞ্জুর করে বিভিন্ন গ্রাহকের নাম ব্যবহার করে ঋণ প্রদান বা উত্তোলন পূর্বক বিভিন্ন সময়ে ১৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৮১৮ টাকা নিজেরাই জমা করে অবশিষ্ট ২ কোটি ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ১৮২ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক পরস্পর যোগসাজশে জমা না দিয়ে আতœসাত ও আত্মসাতে সহায়তা করেন। এ কারণে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকার মানি লন্ডারিং ই/আর নং-১১/২০২২ এর অনুসন্ধানকালে অভিযোগের বিষয়ে সংগৃহীত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রধান কার্যালয় ভিজিলেন্স স্কোয়াড, ঢাকার স্মারক নং- প্রকা/ভিএসডি/রাজবাড়ী-০৭ (০৫)/২০২১-২০২২/৩৬৩, তাং-০১/০২/২০২২ খ্রি: তারিখ মূলে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখায় কর্মরত পরিদর্শক ও ব্যবস্থাপক ৩৪৬ টি ঋণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন গ্রাহককে ব্যবহার করে প্রতারনা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যম রেকর্ডপত্র সৃজন পূর্বক তা ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত পূর্বক তা অনুমোদন করে পরস্পর যোগসাজশে ঋণের ২ কোটি ২০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন সময়ে নিজেরাই ১৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৮১৮ টাকা জমা পূর্বক আদায় দেখিয়ে অবশিষ্ট ২ কোটি ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ১৮২ টাকা আত্মসাত ও সহায়তা করেছেন। এ কারণে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার রাজবাড়ী জেলা জজ আদালতে আসামী পক্ষের জামিন আবেদন শুনানীতে দুদকের পিপি হিসেবে এ্যাড. মোঃ আনিছুর রহমান অংশ নেন।
রাজবাড়ী জেলা জজ আদালতের আইনজীবি এ্যাড. মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন। আজ তারিখ থাকায় তারা জামিন নিয়েছেন। তবে তিনি কনফার্ম করেছেন বলেও স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে দুদক সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আনিছুর রহমান নামে বর্তমানে দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন আইনজীবী নেই। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ওই মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ রয়েছে।
জামিনপ্রাপ্ত আসামী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার সাবেক পরিদর্শক মোঃ রেজাউল হক বলেন, হাইকোর্টের বাধ্যবাধকতার কারণে ধার্য্য তারিখের পূর্ব দিন জামিন নিতে হয়েছে।
রাজবাড়ী বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. বিজন কুমার বোস বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল ৫জন আসামী আদালতে আতœসমর্পনকালে ইচ্ছাকৃতভাবে দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটরকে অবহিত করেনি। ফলে দুদকপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী ভূয়া পিপির সাথে যোগসাজসে আদালতকে বিভ্রান্ত করে জামিন করায় তাদের জামিন বাতিল হওয়া আবশ্যক। এ বিষয়ে লিখিত ভাবে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তী তারিখে আদেশ প্রদান করবেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়