অশালীন ভিডিও’র পুরুষটি ওসি বলে সন্দেহ –

- Update Time : ০৫:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / ২৮ Time View

রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
সম্পাদনার কারসাজিতে ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর এক সাংবাদিকসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ওই ভিডিওতে দৃশ্যমান নারী বাদী হয়ে কটিয়াদী মডেল থানায় গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলাটি করেন।
বাদী এজাহারে দাবি করেন, ওই ভিডিওতে যে পুরুষটিকে দেখা যায়, তিনি তাঁর স্বামী। ছবি ও ভিডিওগুলো আসামিরা কৌশলে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে সরিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।
তবে ভিডিওটি সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন বলছে, এতে দৃশ্যমান পুরুষটি ওই নারীর স্বামী নন, তিনি কটিয়াদী মডেল থানার ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত।ওসি আবু সামা ইতোপূর্বে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও পাংশা থানার ওসি ছিলেন। বিষয়টি এক কান থেকে আরেক কানে যেতে যেতে পুলিশ সুপারের কান পর্যন্ত পৌঁছে। এ পরিস্থিতিতে ওসি নিজে কটিয়াদী থানায় একটি জিডি করেন। জিডি ও ভিডিওর সঙ্গে ওসির নাম জড়িয়ে যাওয়ায় এই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মিজানুর রহমান।
এদিকে ওসি আবু শামা বলছেন, ভিডিওতে পুরুষের শরীর দেখা যায় না। মুখমণ্ডল নেই। এটি কম্পিউটারে সম্পাদনা করে তাঁর শরীরের ছবির মতো করা হয়েছে। তাঁর দাবি, একটি চক্র তাঁর সুনাম নষ্ট করতে এই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
মামলার পর রাতেই মূল আসামি কটিয়াদী সদরের কাঠমহাল মোড়ের বাসিন্দা আসাদ মিয়ার ছেলে হিমেলকে (৩৪) গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অন্য আসামি কটিয়াদী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মুরসালিন দারাশিকোকে (৩৮) আটক করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মামলার এজাহারের এক জায়গায় ওই নারী অভিযোগ করেন, তাঁকে ও থানার ওসিকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কটিয়াদী পৌর এলাকার ওই নারীর স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। একই এলাকার হিমেল নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিমেলের কাছ থেকে ওই নারী বিভিন্ন সময় টাকা ধার নেন। একপর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি হলে পাওনা টাকা আদায়ের বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায়
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি আবুশামা ওই নারীকে থানায় ডেকে পৌর মেয়রের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেও হিমেল টাকা ফেরত পাননি।
এ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, থানায় বসে টাকার বিষয়টি মীমংসা করে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার কিছুদিন পর ওই নারীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাদীর সঙ্গে প্রধান আসামি হিমেলের সম্পর্ক ছিল। এ সময়ে হিমেল গোপনে বাদীর মোবাইল ফোন থেকে তাঁর সঙ্গে স্বামীর মেলামেশার ছবিগুলো নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে নানা কারণে হিমেলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে স্থানীয় সাংবাদিক দারাশিকোর সহযোগিতায় হিমেল তাঁর নগ্ন ছবি অনলাইনে ভাইরাল করে দেন।
গত ২৯ আগস্ট হিমেল তাঁর মোবাইলের ইমো আইডি থেকে ওই নারীর এক দেবরের মোবাইলে এক পুলিশের সঙ্গে তাঁর আপত্তিকর অবস্থার দুটি ছবি পাঠান। ওই নারীর দাবি, ছবির মুখমণ্ডল তাঁর হলেও শরীর অন্য কারো। এজাহারে বলা হয়, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রিয়া সুলতানা নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমাকেসহ ওসি সাহেবের নামে বিভিন্ন অপবাদ ছড়ানো হয়।’
এ ব্যাপারে ওসি আবু শামা জানান, এ ঘটনায় একজন নারী বাদী হয়ে দুজনের নামে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি হিমেলকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।
এদিকে ছড়িয়ে পড়া অশালীন ভিডিওটিতে পুরুষটি কে তা শনাক্ত করাসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মিজানুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। কিন্তু পুরুষটির নগ্ন শরীর দেখা গেলেও মুখ দেখা যায় না। এ অবস্থায় বলা সম্ভব নয় যে তিনি কে। তার পরও আমরা তদন্ত করছি। প্রয়োজনে এ ভিডিও ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে কটিয়াদী প্রেস ক্লাব সভাপতি দারাশিকোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ গতকাল বুধবার বলেন, ‘ঘটনায় নানাভাবে কটিয়াদী থানার ওসির নাম যেহেতু এসেছে, তাই মামলাটি আমি আজ (গতকাল) ডিবিকে দিয়েছি তদন্ত করতে।’ সাংবাদিককে কেন আসামি করা হলো—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসামি করা হলেও সাংবাদিককে কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি। যিনি এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত তাঁকেই কিন্তু ধরা হয়েছে।’ নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন। সৌজন্যে- দৈনিক কালের কণ্ঠ শেষ পাতা-১২.৯.১৯।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়