“সাইবার ক্রাইম ও মাদক” : লেখক- শারমিন রেজা লোটাস

- Update Time : ০৭:৪১:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩
- / ৩১১ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
বাড়ছে কম্পিউটার, বাড়ছে মোবাইল ফোন, সেই সাথে বাড়ছে ইন্টারনেট, এস.এম.এস সহ অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা। গত কয়েক বছর আগেও যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার হতো শুধুমাত্র টাইপরাইটার হিসাবে, সেখানেই এখন কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে কোটি টাকার হিসাব ও তার চেয়ে দামী তথ্য সংরক্ষণে। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কর্মসূচী প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে অনুমান করছে জনগণ। প্রযুক্তির এই বিপ্লব নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বয়ে আনছে স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাধীনতা, গতি ও উন্নয়ন। এই উৎকর্ষতার পাশাপাশি অত্যন্ত নিরবে বেড়ে উঠছে এটির অন্ধকার জগতের ঝুঁকি। যার নাম সাইবার ক্রাইম।
সাইবার ক্রাইম শব্দটি শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশের প্রান্তিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারির কাছে স্বল্প পরিচিত হলেও তথ্য প্রযুক্তিবিদদের কাছে এটি অতি পরিচিত ও ভীতিকর শব্দ। এ বিষয়ে জানা থাক বা না থাক, এর শিকার হচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহারকারি। তবে সাইবার অপরাধ বিশ্বে নতুন ধরনের কোন অপরাধ নয়, শুধুমাত্র মাধ্যমটি ভিন্নসাইবার বিশ্বে ফিশিং হচ্ছে- বিরাট এক ঝুঁকি। এই ফিশিং এর মাধ্যমেই ইন্টারনেট থেকে ম্যালওয়্যার চলে আসতে পারে আপনার কম্পিউটারে। তাই, সচেতন থাকুন। বর্তমান সময়েফধঃধ ষবধশ করার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চিন্তা করে দেখুন- ৫০ লাখ ইমেইল এড্রেস ও পাসওয়ার্ড ষবধশ হলো আর তার মধ্যে আপনার ইমেইলও আছে।
ফিশিং মানেই ধোঁকা। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের তথ্য হাঁতিয়ে নেওয়াই ফিশিং এর মূল উদ্দেশ্য। মূলত, এন্টি-ভাইরাস যেভাবে কম্পিউটারকে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে; ইমেইল নিরাপদ রাখার জন্যেও তেমনিভাবে ঝবপঁৎব ঊসধরষ এধঃবধিবা, ঝঊএ ব্যাবহার করা হয়। ইমেইলে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলেই এই ঝঊএ সেগুলোকে নষড়পশ করে দেওয়ার মতো কাজ করে। যেমন ধরুন- কিছু ওয়েবসাইট, লিংক, আইপি এড্রেস ইত্যাদি সাইবার অপরাধীরা ব্যাবহার করায় ইমেইল কোম্পানি (যেমন গরপৎড়ংড়ভঃ) সেগুলোকে নষধপশ ষরংঃ -এ রেখে দিয়েছে। ফলে, অপরাধীরা পুনরায় সেসব লিংক যুক্ত ইমেইল পাঠালে আপনি নিরাপদ থাকবেন, কারন ঝঊএ সেগুলোকে নষড়পশ করে দিবে। কিন্তু, অপরাধীরাও ইমেইল পাঠানোর আগে ঃবংঃ করে দেখবে যে, তাদের লিংক বা ওয়েবসাইট নষধপশষরংঃ -এ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে, তারা নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করবে। ফলে, সেই নতুন ওয়েবসাইটের লিংকগুলো ইমেইলে পাঠালে ঝঊএ সেগুলোকে নষড়পশ করতে পারবে না।
আপনি কি জানেন যে, ফিশিং এর স্বীকার হয়েই অধিকাংশ মানুষ ম্যালওয়্যার ডাউনলোড করেন? ফিশিং ওয়েবসাইটের কথা হয়তো সবাই জানেন। তবে, অপরাধীরা ফিশিং ইমেইলের মাধ্যমে বেশি আক্রমণ করে। যেমন ধরুন- কিছুদিন আগে ডরহফড়ংি ১১ নিয়েপ্রচুর উৎসাহ কাজ করছিলো। ঠিক তখনই একটি অপরাধী গ্রুপ ডরহফড়ংি ১১ অষঢ়যধ নামের একটি ফিশিং ইমেইল পাঠাতে থাকে। অপরাধীরা মানুষকে বোকা বানিয়ে ইমেইলে লিখেছিলো এবং একজন নারীর সাথে অসালিন আচরন হয়েছিল।
একজন নারীর অর্ধ-উলঙ্গ ছবি ইমেইল করলে ৫০% পুরুষ সেই ইমেইলের লিংকে ক্লিক করবে শুধুমাত্র ছবিটি বড় করে দেখার জন্য। পুরুষের এরকম ছবি পেলে নারীরা কি করবে- সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে, এটাই বাস্তব। ২০০১ সালে অহহধ কড়ঁৎহরশড়াধ নামের একজন নারী টেনিস খেলোয়াড়ের ছবি যুক্ত ইমেইল পাঠিয়ে অসংখ্য কম্পিউটার হ্যাক করা হয়েছিলো। তবে, ইমেইলের সেই ছবিতে যখন ক্লিক করা হতো, তখন সেই ছবি দেখা যেতো না। বরং, গোপনে ঠনং. ঙহঞযবঋষু নামক ম্যালওয়্যার কাজ করা শুরু করে দিতো। এটা তৈরি করেছিলো ২০ বছর বয়শী যুবক, যার ছদ্মনাম ছিলো ঙহঞযবঋষু ও
বতর্মানে সাইবার ক্রাইমের এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কিশোর গ্যাং। অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের কিশোর গ্যাংয়ের নামগুলো শুনলেই মানুষজনের ভয়ে কাঁপন দিয়ে লোম খাড়া হয়ে আতঙ্কের শিহরণ জাগায়। রাজধানী ঢাকাতে যেসব কিশোর গ্যাংয়ের নাম রয়েছে তার মধ্যে এক সময় পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার ও নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্যাক রোজ, রনো, কেনাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গাল গ্যাং, লাগবি নাকি, মাঈনুদ্দিন গ্রুপ, বিহারি রাসেল গ্যাং, বিচ্ছু বাহিনী, পিচ্চি বাবু, সাইফুলের গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, বাবু রাজন গ্যাং, রিপন গ্যাং, মোবারক গ্যাং, নয়ন গ্যাং, তালাচাবি গ্যাং, নাইন এম এম, একে ৪৭ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ, স্টার বন্ড গ্রুপ, মোল্লা রাব্বির গ্রুপ, গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপায়ইয়া দে, শাহীন-রিপন গ্যাং, নাজিম উদ্দিন গ্যাং, শান্ত গ্যাং, মেহেদী গ্যাং, সোলেমান গ্যাং, রাসেল ও উজ্জ্বল গ্যাং, বাংলা ও লাভলেট গ্যাং, জুম্মন গ্যাং, চান-জাদু, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু, ভারি গ্যাং, টিকটক গ্যাং, পোঁটলা সিফাত গ্যাং যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। কেবল রাজধানীতে ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে সদস্য রয়েছে ১৫ থেকে ২০ জন করে। এই গ্যাংগুলো উত্তরা, তুরাগ, খিলগাঁও, দক্ষিণ খান, টঙ্গী, সূত্রাপুর, ডেমরা, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, কোতোয়ালি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি আগারগাঁও ও হাতিরঝিলে সক্রিয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আজকের কিশোর-কিশোরী আগামী দিনের জাতির কর্ণদ্বার। কিন্তু সেই কিশোর যখন অপরাধ জগতের জড়িয়ে পড়ে তখন হতাশ হয়ে পড়ে বাবা-মা, এসেই মূহুর্তে ঘুম বলে কোন শব্দ থাকে না বাবা মার দু চোখে। ওদের কিন্তু বাবা-মা যদি একটু সচেতন হয় তাহলেই সম্ভাব সন্তানকে অপরাধ জগত থেকে রক্ষা করা, সন্তান কে সঠিক গাইড লাইন দিতে হবে। ৯ থেকে ১১ বছর পার করার পর আসে কিশোর বয়স এই বয়সে তাদের শারীরিক পরিবর্তন ও মানসিক পরিবর্তন হয়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন থাকে। তখন তারা কিশোরেরা মানসিক ভাবে ভেঙে পরে। ডিপ্রেশন,মানসিক সমস্যা, কৌতূহল সহ অন্যান্য কারণে কিশোরেরা সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। ডিপ্রেশনের সমস্যা গুলো বাবা মাকে বুঝতে হবে, তাদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে, বাবা মা থেকে বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। জানতে হবে আমার সন্তানের বন্ধুরা কারা, কাদের সাথে মেলামেশা করে। কোথায় যায়। নিয়োমিত স্কুলে যাচ্ছে কিনা। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়স হচ্ছে বয়স সন্ধিকাল। এই সময় কিশোর-কিশোরীদের আচরণ কতোটা পরিবর্তন হচ্ছে বাবা মাকে খেয়াল রাখতে হবে।
সন্তানের ঘুমের প্যাটান বদলেছে কি না। বাসায় রাত করে কি ফিরছে কি না ঘন ঘন মিথ্যা বলছে কিনা- টাকার জন্য ঝামেলা করছে কি না। দরজা বন্ধ করে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখছে কি না। মোবাইলে কতো সময় ধরে কথা বলছে।
স্কুলে অনিয়মিত হচ্ছে কিনা, মা যদি একটু সচেতন ভাবে খেয়াল করে তাহলে সম্ভাব এই সন্তানকে অপরাধ জগত থেকে রক্ষা করা, রাজবাড়ী খুব ছোট শহর। সাজানো গোছানো একটি শহর। আমাদের প্রাণের শহর রাজবাড়ী। কিন্তু এই ছোট শহরেও গড়ে উঠেছে মাদকের আকড়া এবং চলছে জমজমার মাদক ব্যাবসা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে মাদকের সাথে জড়িতো তাদের অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরী, মাদক ব্যবসী বড় ভাইয়েরা কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে মাদককে ছড়িয়ে দিচ্ছে স্কুল কলেজে। অগণিত কিশোর-কিশোরী মাদকে আসক্ত। মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রাজবাড়ীতে। এই বিষাক্ত ছোবলের কারণে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপদগামী আমি একটা ছোট ঘটনা বলি, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। গত সোমবার ৩০ অক্টোবর’২০২৩ তারিখ। আমি গিয়ে ছিলাম অফিসের কাজে নিউকোলীতে। একাটা বাসা থেকে ছয়, সাত জন ছাত্র-ছাত্রী বেড় হচ্ছে। ওদের দেখে বুঝতে পারলাম কোন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী তারা, এতো পরিমানে নেশা করেছে দেখে মনে হলো তারা তাদের নিজেকেই ভুলে গেছে। আমি আর আমার সহকর্মী ছিলাম, আমার সহকর্মী ওদের ছবি তুলে রাখলো। এটা আমাদের জন্য লজ্জার আমার আমরা আমাদের বাচ্চাদের আমাদের সন্তানদের কে মানুষ করতে পারিনি। সঠিক গাইড লাইন দিতে পারিনি। সাইবার অপরাধ এখন বিদ্যালয়ের মাঠে এসে গিয়েছে এই অপরাধ থেকে আমাদের শিশু কিশোরদের বের করে আনতে হবে। জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। শুধু পুলিশের উপর নির্ভর করলেই চলবে না। সচেতন জনগোষ্ঠীর মাঝে কমিটি তৈরি করে স্কুল- কলেজের কিশোর, কিশোরীদের মধ্যে সাইবার এবং মাদক সম্পর্কে সভা, মত বিনিময় করতে হবে। সাইবার অপরাধ বুলিং প্রতিরোধ করতে হবে, স্কুলে- কলেজে অবিভাবকদের সাথে মত বিনিময় সভা করতে হবে এবং সচেতন করেত হবে মাদক ও সাইবার সর্ম্পকে।
লেখক- শারমিন রেজা লোটাস, সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা, রাজবাড়ী।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়