মোবাইলে পরিচয়, অতঃপর নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে যৌনপল্লীতে যুবতীকে বিক্রি, গ্রেপ্তার ২ –

- Update Time : ০৯:১১:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২১
- / ৪২ Time View
শামীম শেখ, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
৯৯৯-এ ফোন দিয়ে দীর্ঘ দেড় বছর পর যৌনপল্লীর অভিশপ্ত জীবন থেকে উদ্ধার পেয়েছে এক যুবতী (২৫)। নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে পাচারকারী দলের এক সদস্য তাকে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোয়ালন্দ থানা পুলিশের একটি দল যৌনপল্লীতে অভিযান চালিয়ে ওই যুবতী উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত রিতা (২৭) ও তার কথিত স্বামী সোহেল রানাকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছে। পল্লীতে পাচার করে নিয়ে আসার পর এই দম্পতি ওই তরুনীকে একটি বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে তাকে দিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের পর শনিবার তাদেরকে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া যুবতী চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার এক দরিদ্র ভ্যান চালকের মেয়ে। ৪ ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়। ৭ বছর আগে ঢাকার হেমায়েতপুর এলাকায় তার বিয়ে হয়। দরিদ্র স্বামীর সংসারে কিছু একটা করার তাগিদে সে উদগ্রীব ছিল। এমতাবস্থায় মোবাইল ফোনে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। সে তরুনীকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ওই ব্যক্তি তরুনীকে নায়িকা হিসেবে শুটিংয়ের জন্য দ্রুত গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় চলে আসতে বলে। তার কথামতো তরুনী দৌলতদিয়ায় আসলে ওই ব্যক্তি তরুনীকে যৌনপল্লীর রিতা ও সোহেলের নিকট নিয়ে গিয়ে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর তাকে আবুল-জাহেদার বাড়ীতে আটকে রেখে তাকে দিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করাতে থাকে। তরুনী যাতে কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সে জন্য তার ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এ ছাড়া তাকে সার্বক্ষণিক নজরে রাখার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়। গৃহবন্দি তরুনীর কাছে বাইরে থেকে খদ্দের নিয়ে আসতো রিতা ও সোহেল। উপার্জিত সব টাকা তারা হাতিয়ে নিয়ে তরুনীকে শুধু খাওয়া-পড়া দিতো। কখনো সে খদ্দের নিতে রাজী না হলে তার উপর শারীরিক অত্যাচার চালানো হতো। এ অবস্থা থেকে ইতিপূর্বে কয়েকবার বের হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তরুনীর ঘরে এক খদ্দের পাঠানো হলে সে ওই খদ্দেরের কাছে তার দুর্দশার কথা খুলে বলে। খরিদ্দার তরুনীর প্রতি আন্তরিক হলে তরুনী খদ্দেরের মোবাইল ফোন থেকে ৯৯৯-এ ফোন করে তাকে উদ্ধারের অনুরোধ জানান। এর কিছুক্ষণ পর গোয়ালন্দ থানা পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে তাকে বন্দীদশা হতে উদ্ধার করে। এ সময় রিতা এবং সোহেল রানাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, উদ্ধার হওয়া তরুনী বাদী হয়ে শুক্রবার রাতেই রিতা ও তার স্বামী সোহেল রানার বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদের শনিবার আদালতের মাধ্যমে রাজবাড়ীর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার হওয়া তরুনীকে তার বাবার কাছে পাঠানো হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়