সদর উপজেলায় ‘আলেয়া চমক’

- Update Time : ০১:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০১৯
- / ৩৫ Time View

রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
মনোনয়নপত্রের দাম ২১ হাজার ৫শত টাকা। আর মনোনয়পত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিলো বিকাল ৫টা। অথচ টাকার জোগার হয়নি বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তাই কোন উপায় না দেখে বাড়ীতে থাকা একটি গরু ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দ্রুত চলে আসেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানেও এসে পরেন বিপাকে। খুজে পাচ্ছিলেন না রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়। যখন খুজে পেলেন, তখন ঘড়িতে বিকাল ৫টা। আর যেহেতু তিনি ৫টার মধ্যেই রিটানিং অফিসারের কক্ষে পৌছেছেন, সেহেতু রিটানিং অফিসারও তার মনোনয়পত্র গ্রহণ করেন। সেই শুরু। মনোনয়পত্র বাছাই শেষে তাকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেন রিটানিং অফিসার।
তিনি বলেন, প্রার্থীতা চুড়ান্ত হবার পর তার মনোবল বেড়ে যায় অনেক। তিনি টাকা জোগার করতে উঠে পরে লাগেন। একটি সমিতি থেকে নিজের নামে ৭০ হাজার ও তার ফুপু মহিতন বেগমের নামে আরো ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই সাথে মাঠে থাকা ৫৫ শতাংশ জমি তিনি বন্দক রাখেন এক লাখ টাকায়। ওই টাকাই তার সম্বল। তবে নানা প্রতিকুলতায় পিছিয়ে যায় তার প্রচার প্রচারনা। খুব বেশি পোষ্টার তিনি ঝোলাতে পারেনি তার নির্বাচনী এলাকার ১৪টি ইউনিয়নে। আর মাইকে প্রচার করেছেন শুধু প্রচারনা বন্ধ হবার দিনটিতেই। মাত্র দুইটি মাইকে তিনি চালিয়েছেন এক দিনের প্রচারনা। ছিলো না তেমন কোন কর্মীও। তিনি নিজে এবং তার স্বজনদের প্রচার-প্রচারনাই ছিলো একমাত্র সম্বল। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার ১০২টি কেন্দ্রের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে দিতে পেরেছেন এজেন্ট। তার পরও ১০ হাজার ৭শত ২৮ ভোটের ব্যাবধানে তিনি হয়েছেন বিজয়ী। তিনি হাঁস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ১শ ৫৬ ভোট এবং তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দী মীর মাহফুজা খাতুন মলি কলস প্রতীক পেয়ে ২৫ হাজার ৪শ ২৮ ভোট।
সোমবার বিকালে তিনি বলেন, অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারের গৃহবধু তিনি। বাড়ী রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বাগমারা কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন এলাকায়। এইচএসসি পাশ করেছেন। স্বামী রেজাউল করিম ঢাকায় দর্জির কাজ করেন। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মহিলা আ:লীগের সভাপতি। তার দু’টি ছেলে। বড় ছেলে আকাশ পড়ে দশম শ্রেণীতে আর ছোট ছেলে অনিক পড়ে চতুর্থ শ্রেণীতে। ইতোপূর্বে নিউ ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সেবার মাত্র ১৩ ভোট পরাজিত হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য পদেও প্রতিদ্বন্দীতা করেছেন। তখনও বিজয়ী হতে পারেন নি। তিনি বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় মাত্র ২৫ শতাংশ ভোটার তদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মানুষ তাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে। এমন অনেকে আছেন যারা শুধু তার জন্যই ভোট কেন্দ্রে গেছেন। রবিবার রাতে যখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয় তখন বাইরে থাকা তার ভক্তরা আনন্দ উল্লাস করে। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ তাই আমি শুধুমাত্র গরীর মানুষের উন্নয়নে কাজ করবো।
ওই সময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আলেয়ার বিজয়ী হওয়াটা একটা অন্যরকম ব্যাপার। রাজবাড়ীর ৪টি উপজেলায় হওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী পরিবেশ ছিলো শান্তিপূর্ণ। কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। মানুষ নিবিঘ্নে ভোট প্রদান করেছেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় বিজয়ী ইমদাদ, পিয়াল, আলেয়া
গত ২৪ মার্চ রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে ২৬ শতাংশ ভোট পরেছে। মোট ভোটার ছিলো ২রাখ ৫৯ হাজার ৯শত ৫৯ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ২৬ হাজার ৮শত ৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আনারস প্রতীকের আ:লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস। দ্বিতীয় অবস্থানে ১৯ হাজার ৮শ ৪০ ভোট পেয়ে রয়েছেন, দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে আ:লীগের অপর বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম নওয়াব আলী এবং তৃতীয় অবস্থানে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৮ হাজার ৩ ভোট পেয়েছেন আ:লীগ প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফি।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে তালা প্রতীক নিয়ে ৩৭ হাজার ১শ ১০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রকিবুল ইসলাম পিয়াল। ২৪ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন, উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডঃ শফিকুল হোসেন এবং টিউব ওয়েল প্রতীক নিয়ে মোহন মোল্লা পেয়েছেন, ১হাজার ৯শ ৮৭ ভোট।
আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আলেয়া বেগম। তিনি পেয়েছেন, ৩৬ হাজার ১শ ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মীর মাহফুজা খাতুন মলি কলস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬শ ৫২ ভোট।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়