গোয়ালন্দে নদী ভাঙ্গন- ‘চাইল পাইছি, তয় নাধমু কই’ –

- Update Time : ০৯:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৩৫ Time View
আসজাদ হোসেন আজু , রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
চাইল পাইছি, তয় হেই চাইল নাইন্দা (রান্না) খাওয়োনের মত কোন আহা (চুলা) এহন আর আমাগো নাই। নাক্ষসি গাঙ্গ হগোতা খাইয়া ফ্যালছে। এহন আমরা ফহির অইয়া গেছি। নাইনে খাড়াইয়া চইড্ডা চাইল-ডাইল পাইছি। তয় তা নাইন্দা খাওনের উপায় পন্ত নাই।’ গত শনিবার এভাবে কথা গুলো বলছিলেন সরকারী ত্রাণ পাওয়া গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নুরু চেয়ারম্যানের গ্রামের আছিরন বিবি (৬৫)।
তিনি আরো জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর পর দুই বছর আগে মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। তারপর থেকে মেয়ে-জামাই দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লা পাড়া গ্রামের তাদের বাড়িতেই থাকত। জামাই দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা রোজগার করত তাতেই চলত তাদের খাওয়া-পড়া। এক সপ্তাহ আগে তাদের সেই বাড়িটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদীতে বিলীনের আগে কিছু টিন, কাঠ, বাঁশসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নুরু মন্ডলের পাড়া গ্রামের রাস্তার উপর। সেখানে মানবেতর কাটছে তাদের দিন।
তার মত সামেলা বেগম (৩৫), রেহেনা বেগম (৩২), আমেনা বেগম (৩৬), হালিমুন নেছা (৫৫)সহ অনেকেই একই পরিস্থিতির শিকার। তারা জানান, নদী ভাঙনে তারা ভিটা-বাড়ি সবই হারিয়েছেন। কেউ আত্মীয় বাড়িতে আবার কেউ রাস্তার পাশে ছিন্নমূল হয়ে বসবাস করছে। তাদের অবশিষ্ট কোন জায়গা জমি নেই। সবই হারিয়েছেন। এখন একটু কুঁড়ে ঘর তৈরী করে আশ্রয় নেবে এ উপায় নেই। এ মুহুর্তে তাদের সব থেকে বেশী প্রয়োজন একটু মাথা গোজার ঠাঁই। তারা আরো জানান, সরকারী কোন খাজ জমি যদি তাদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে তারা একটু নিশ্বাস ফেলার উপায় খুঁজে পাবেন।
জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার ভয়াবহ তা-বে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়ায় অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে, গাছপালা কেটে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
ঘরবাড়ি হারানো লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফসলি জমিসহ বসতভিটা হারিয়ে তারা এখন সর্বহারা। অনেকে বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবার উপায় না পেয়ে অনেকে উপজেলা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথের ঢালে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে পলিথিন ও পাটখড়ি দিয়ে ছাউনি ঘর বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, খাস জমি বরাদ্দ একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। এ মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে খাদ্য সামগ্রী সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়