ঘটনাস্থল: রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল “বিরল ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেন রাবেয়া” –

- Update Time : ০৯:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মার্চ ২০১৮
- / ১৭ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
অপারেশনের পর সপ্তাহ না গড়াতেই রাবেয়া বেগম নামে এক রোগীর মুখ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত শুরু হয়। অনেক চেষ্টা চালিয়েও অপারেশনকারী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়ে রোগীকে নিয়ে আসা হয় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে বেশ কয়েক ঘন্টা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তবে রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বিপাকে পরেন চিকিৎসকরা। তারা অপারেশনকারী ওই চিকিৎসক ডেকে আনেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে পুনঃরায় অপারেশ করে প্রাণের বাঁচানো সম্ভব হয় ওই রোগীকে। যদিও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী হাসপাতালের ইতিহাসে এটা একটা বিরল ঘটনা। কারণ অফিস সময়ের বাইরে বহিরাগত চিকিৎসক কর্তৃক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার করে মৃত্যুযাত্রী রোগীতে বাঁচানো হয়েছে।
জানাগেছে, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামের কৃষক খলিল সরদারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৫০)-এর মুখের দু’টি টনসিল অপসারণের জন্য গত ১৬ মার্চ আলেয়া বেগম নামে স্থানীয় এক নারী দালালের মাধ্যমে জেলা শহরের মেডিকেল সেন্টার নামে একটি ক্লিনিকে আনা হয়। ওই ক্লিনিকে সে সময় রাবেয়াকে ব্যবস্থাপত্র দেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ হাছান ইমাম আল মাসুদ (নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ এবং মাথা ও ঘাড়ের সার্জন)। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী গত ২২ মার্চ একই ক্লিনিকে এই চিকিৎসক রাবেয়ার মুখে অস্ত্রপাচার করে দু’টি টনসিলই অপসারণ করে এবং দুই দিন অবজারভেশনে রেখে গত রবিবার রাবেয়াকে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি থাকা রোগী রাবেয়া বেগমের স্বামী খলিল সরদার বলেন, গত বুধবার হঠাৎ করেই রাবেয়ার মুখ দিয়ে অল্পপরিমানে রক্ত আসতে শুরু করে। সে সময় ক্লিনিকের লোকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা রাবেয়াকে আইসক্রিম খাওয়াতে বলে। এতে রক্ত আসা বন্ধ হয়। তবে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাবেয়ার মুখ দিয়ে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হতে থাকে। সে সময় ওই কিনিকের লোকদের কাছে অপারেশন করা চিকিৎসকের মোবাইল নম্বর চাওয়া হলে তারা নম্বর না দিয়ে খারাপ ব্যবহার করে। যে কারণে বাধ্য হয়ে ওই দিন সকাল ১০ টার দিকে তারা রাবেয়াকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে সে সময়ই ডেকে আনা হয় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক,কান,গলা) হাসান আলীকে। তিনি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তবে তাতে কোন লাভ হচ্ছিলনা। রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করা যাচ্ছিল না। বিষয়টি ঢাকায় অবস্থানরত রাবেয়ার অস্ত্রপাচারকারী চিকিৎসক ডাঃ সৈয়দ হাছান ইমাম আল মাসুদকে অবহতি করা হয়। তিনি রাজবাড়ীতে আসেন এবং সদর হাসপাতালে গিয়ে ওই রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফের অপারেশনের উদ্যোগ নেন। রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডাঃ রহিম বক্স, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক,কান,গলা) হাসান আলী, হাসপাতালের অজ্ঞান ডাক্তার ইকরামুজ্জামান উল্লাসের উপস্থিতিতে দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুনরায় অপারেশন করেন, ডাঃ সৈয়দ হাছান ইমাম আল মাসুদ। সে সময় বাইরে থেকে ৫ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয় রাবেয়াকে। আরো দুই ব্যাগ রক্ত তাকে দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।
রাবেয়ার মেজ মেয়ে কাকলী আক্তার বলেন, তারা চার বোন, ১ ভাই। তাদের মায়ের অবস্থা যে পর্যায়ে পৌছেছিলো, তাতে পুনরায় অপারেশন না করা হলে বাঁচানো যেত না।
তবে ঘটনাটি চেপে যাবার চেষ্টা চালান এ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ পলাশ সিকদার। তিনি বলেন, এটা তেমন কোন ঘটনা না। টনসিল অপরেশন হলে এমনটি ঘটতে পারে। তবে বহিরাগত চিকিৎসকদ্বার অপারেশনের বিষয়টি নিয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
ছুটিতে থাকা হাসপাতালের তত্বধায়ক ডাঃ স্বপন কুমার কুন্ডু জানান, বহিরাগত চিকিৎসকের হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তবে ওই রোগীর অবস্থা ছিলো সংকটময়। যে কারণে অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার করা হয়েছে এবং রোগীটি প্রাণে বেঁচেছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডাঃ রহিম বক্স এর মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ হাছান ইমাম আল মাসুদ জানান, তিনি রোগীতে গরম, শক্ত ও ঝাল খাবার খেতে নিষেধ করেছিলেন। রোগী সম্ভবত ওই ধরণের খাবার খেয়েছে। যে কারণে তার ইনফেকশন হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগীর অবস্থা অনেক ভাল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়