“ভাষার ভাসারুপ (ভাষান্তর)”- লেখক : মোহাঃ রাজ্জাকুল আলম –
- Update Time : ১০:০০:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২
- / ২৫ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
মোদের গরব মোদের আশা,আমরি বাংলা ভাষা,সত্যিই বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার।১৯৪৮ সালে ঢাকার জনসভায় দ্বিজাতিতত্ত্ব এর প্রবক্তা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ,র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ‘এই ঘোষনায় ভাষার জন্য মুক্তিপাগল আপামর জনসাধারণ তথা কৃষক,শ্রমিক,ছাত্র -শিক্ষক রাজপথে নেমেছিল ৫৬% মানুষের মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষার দাবীতে। যার পরিনামে সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার,শফিউরের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথ।
পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়ে জন্ম দিয়েছিলো রক্তাক্ত ইতিহাসের। অথচ সেই জাতিই আবার তার ভাষাকে অবজ্ঞা করছে,বিকৃত করছে, যা খুবই দুঃখজনক কিন্তু বর্তমানে বাংলার অবস্থা এটাই। যে ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল, সেই ভাষা রক্ষাই যেন বর্তমানে নতুন একটি লড়াই। যদিওবা এ লড়াই সর্বদাই ছিল তাইতো কবি আব্দুল হাকিম লিখেছিলেন, যে সব বঙ্গেতে ব্জন্মি হিংসে বঞ্গে বাণী, সেই সব কাহার জন্ম নির্নয় না জানি। কবির জর্জরিত মনের ব্যাক্ত বাসনা এই বাণীতে প্রকাশিত। যে দেশের মানুষ বাংলায় কথা বলেন,বাংলায় পড়েন, বাংলায় গান গায়, বাংলায় ভাবেন,বাংলায় ভালোবাসেন, বাংলায় যাদের মেধা মননের বিকাশ অথচ সেই দেশে অবিশ্বাস্য হলেও দুঃখজনক সত্য যে,প্রমিত বাংলা চর্চা,বাংলার গবেষণা চোখে পড়ার মতো নয়। ভাষার যথাযোগ্য ব্যবহারবিধি, আর সার্বজনীনতার উপর ভাষার সমৃদ্ধি অনেকাংশ নির্ভরশীল। বিশ্বায়ন, আকাশসংস্কৃতি,ডিজিটালাইজেশন এবং ইংরেজিভাষা অধিক ব্যবহারের প্রভাবে মাতৃভাষা প্রবাহমান হারাচ্ছে। এর উপর বিদেশী ভাষার আগ্রাসন, বেতার টিভির ভাষা ব্যবহার যেমন হ্যালো লিসেনার্স,হ্যালো ভিউয়ার্স,হাই,হ্যালো, একটি সংগস প্লে,রিডিং বেশি হচ্ছে নাকি,ডে বাই ডে কেমন স্লিম হচ্ছে ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে যাতে ইংরেজির বিকৃত চর্চা হচ্ছে।
বই পুস্তক,সড়ক- মহাসড়ক,বাজার ফুটপাত,যানবাহন, প্রচারপত্র, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড,দোকানপাট, বাস,নৌ বন্দর,রেলষ্টেশন,সরকারী -বেসরকারি বিভিন্ন আর্থ -সামাজিক এমনকি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি, মিশ্র ভাষার পাশাপাশি ভূল ও বিকৃত শব্দের ছড়াছড়ি। বর্তমান প্রজন্মে আমাদের ঘরে ঘরে ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসন লক্ষ্মণীয়। বাংলা ভাষা যেন কেবল গরিবী ভাষা হিসেবে পরিচিত। এক সময় মনে করা হতো নাটক সমাজের দর্পণ এবং শুদ্ধ ভাষা শেখার একটি মাধ্যম। সেই নাটকে এখন আঞ্চলিকতা ও মিশ্রিত ভাষার(বাংলা,ইংরেজি, হিন্দি) ব্যবহারে আমরা শুদ্ধ বাংলার প্রয়োগ ভুলে যাচ্ছি। এছাড়া নাটক, বিজ্ঞাপন, সিনেমায় কেমনযেন জগাখিচুড়ি ভাষার ব্যবহার হচ্ছে।নামের ক্ষেত্রেও বিকৃত অশ্লীল, মিশ্রিত, এমনকি ইংরেজির উচ্চারণগত নামের ছড়াছড়ি লক্ষণীয়। এছাড়া ইদানীংকালে গনমাধ্যম ও প্রচলিত কিছু শব্দ যেমন ভালোবাসায় ব্রেক আপ,ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন বিরতি, ছোট্ট করে যদি বলতেন, ফিরে আসছি ব্রেক এর পর, আমাকে দেখতে পাচ্ছেন ,ঃবহংরড়হ নিওনা, আমার সাথে যায়না,একটা ফোন নিয়ে আসছি এ জাতীয় ভাষা ব্যবহার হচ্ছে যা ব্যাকরণগত দিক থেকে ত্রুটিমুক্ত নয়। আবার বর্তমানে তরুণদের মুখে মুখে প্রচারিত কিছু কথা যেমন খাইলেই দিলখোশ, মিস দিস, আবার জিগায়, এক্সট্রা খাতির, বেইল নাই, মাইরালা,তার ছিড়া, বাবু খাইছো,ভাই ব্রাদার, কাবঝাপ,টাস্কি খাইছি এ জাতীয় অশ্বস্তুিকর ভাষা ব্যবহার হচ্ছে,। বর্তমান ভাষা বিকৃতির নতুন ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,টুইটারে আজিব, বিন্দাস,অসাম,অফ যা, এইডা কিছু হইলো ,মজা লস,পুরাই অস্থির, ওয়াও, পুরাই টাস্কি,প্যারা নাই ইত্যাদি বিকৃত, দুর্বোধ্য ও অবোধ্য শব্দের ব্যবহার বাড়ছে যা সত্যিই বিপদজনক, উদ্বেগের এবং মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা ও অসচেতনতার লক্ষণ। এভাবে চললে এক সময় বাংলা ভাষা স্বকীয়তাহীন হয়ে হারিেেয় ফেলবে বাঙালিজাতির হাজার বছরের পুরনো সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য। এতে বাংলা ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পতিত হবে।
দ্রুততম সময়ে বাংলা ভাষার পূনর্জাগরণ করতে না পারলে ৫২ এর ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ যে শুধুমাত্র পরার্থমূলক জীবনদানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যা বাঞ্চনীয় নয়। বাঙ্গালির নতুন করে শপথ হোক ভাষার মর্যাদা রক্ষার, শুদ্ধ করে বাংলা উচ্চারণের। “‘বাংলা ভাষা থাকুক আমাদের সকলের আন্তরিক চর্চায়, আমাদের খুব 💵ভালোবাসায় আবেগপ্রধান ভাষা হয়ে “এটাই হোক কাংখিত প্রত্যাশা।
লেখক : মোহাঃ রাজ্জাকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক,মীর মশাররফ হোসেন কলেজ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়