রাজবাড়ীতে জন্মের ৩ ঘন্টা পরই মা’হারা হলো রিক্তা, লাখ টাকায় রফা-
- Update Time : ০৭:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৮
- / ১৭ Time View
জাহাঙ্গীর হোসেন , রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ী জেলা শহরের একটি ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে এক প্রসুতি মা’য়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে জন্মের তিন ঘন্টার মধ্যেই নবজাতক রিক্তা হয়েছে মা’হারা। তবে ওই অভিযোগ থেকে বাঁচতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আপোষ মিমাংশার মাধ্যমে মৃত মা’য়ের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে ১লাখ ২৫ হাজার টাকা।
জানাগেছে, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হতদরিদ্র কৃষক নজরুল সেখের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী রেবেকা বেগম (৩০) কে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের ডাঃ রতন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সে সাথে সিজারিয়ানের জন্য চুক্তি মাফিক সাড়ে ৭ হাজার টাকাও পরিবারটির পক্ষ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে তুলে দেয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে ওই ক্লিনিকের অপারেশন খিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় রেবেকাকে। এর কিছু সময় পরই নবজাতক রিক্তা কে তার নানি সুফিয়া বেগমের কোলে তুলে দেয়া হয়। এর পর এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা করে দীর্ঘ সময় পার হয়। তবে রেবেকাকে আর অপারেশন থিয়েটার থেকে বাইরে বের করা হচ্ছিল না।
মৃত রেবেকার মা সুফিয়া বেগম বলেন, নবজাতক নাতনি রিক্তা মা’য়ের বুকের দুধ খাবার জন্য কান্না-কাটি করলেও অজ্ঞাত কারণে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তাররা তার মেয়েকে বেডে আনছিলেন না। কেন এতো দেড়ি হচ্ছে তারও কোন জবাবা দিচ্ছিলেন না ক্লিনিকটির কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা। ফলে তিনি গভীর চিন্তায় পরে যান। এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে রেবেকাকে ক্লিনিকের বেডে আনা হয়। এর কিছু সময় পরই রেবেকার ঘাম ও খিচুনি শুরু হয়। তারা বার বার নার্স ও ডাক্তারদের কাছে গেলেও তেমন কোন সহযোগিতা করছিলনা তারা। এক পর্যায়ে নিস্তেত হতে থাকে রেবেকা। সে সময়ই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রেবেকাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। শুধু তাই নয়, তারা ডেকে আনে এ্যাম্বুলেন্স। যেন দ্রুত রেবেকাকে ক্লিনিক থেকে বের করে দিতে পারলে তারা বাঁচে। ওই অবস্থাতেই রেবেকাকে তারা ফরিদপুরের দিকে নিয়ে রওনা হন। সন্ধ্যার দিকে পথের মধ্যেই মৃত্যু হয় রেবেকার। সে সময় তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে রক্ত।
তিনি আরো বলেন, এই ক্লিনিকের ডাক্তাররা তার মেয়ের ভুল অপারেশন করে হত্যা করেছে। তিনি ওই ক্লিনিক মালিক ও অপারেশন করা ডাক্তারদের বিচার চান। তিনি বলেন, তার ৪ মেয়ে ১ ছেলে সন্তানের মধ্যে রেবেকা ছিলো সবার বড়। সবচেয়ে বেশি আদরের ধন হলো রেবেকা। আর এই আদরের ধনকে চোখের সামনে ওরা মেরে ফেলেছে।
কান্নারত রেবেকার স্বামী নজরুল সেখ বলেন, তার আলহাজ¦ সেখ নামে ৩ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। যে কারণে শনিবার এই মেয়ে সন্তানটি জন্ম গ্রহণের পর তিনি ছিলেন খুবই আনন্দে। তবে তার সে আনন্দ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বিকালের মধ্যেই তার স্ত্রীকে নিয়ে টানা-হেঁচরা এবং সব শেষে মৃত্যুর কোল ঢলে পরায় তিনি এই নবজাতক ও শিশু ছেলের ভবিষ্যত ভাবনায় ভেঙ্গে পরেছেন।
এদিকে, শনিবার রাত ১০টার দিকে ওই ক্লিনিকে গিয়ে দেখাযায়, ওই ক্লিনিক ভবনের গেট বন্ধ। সামনে থাকা এ্যাম্বুলেন্সের সিটে পরে রয়েছে প্রসুতি মা’য়ের লাশ এবং অপর একটি সিটে নানির কোলে রয়েছে নবজাতক রিক্তা। হয়তো মা’য়ের এ পৃথিবী থেকে চলে যাবার কষ্ঠ সে ওই সময় থেকেই টের পেতে শুরু করেছে। মা’য়ের বুকের দুধের অভাবে মাঝে মধ্যেই সে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। তাকে শান্ত করতে চেষ্টা করছে তার নানি আর ওই অবস্থায় নানিও করছেন আহাজারি। নবজাতক রিক্তা, তার নানি, বাবাসহ নিকট স্বজদের এমন আহাজারীতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। এরই মাঝে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ খোলেন গেট এবং গেটের সামনেই দুই পক্ষের হতে থাকে সমঝোতা বৈঠক। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হয় সমঝোতা। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মৃত রেবেকার স্বজনদের হাতে তুলে দেন ১লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি চেক।
এৃতের স্বজন ইউসুফ আলী সেখ জানান, চেক হাতে পাওয়ার পরই তারা মৃতাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ী একই ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রামে যান। গতকাল রবিবার সেখানেই জানাজা শেষে রেবেকার দাফন সম্পূর্ণ করা হয়। তবে নবজাতক রিক্তাকে নিয়ে তারা পরেছেন চরম ভোগান্তিতে। ক্ষুধার জ¦ালায় সে শুধু কাঁদছে আর কাঁদছে। প্রতিবেশি মা’য়েদের কাছ থেকে চেয়ে আনা বুকের দুধ এবং কৌটার দুধ খাইয়েই রিক্তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তার নানি সুফিয়া বেগম।
ওই ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হান্নান এবং ডাঃ দীপক যৌথভাবে রেবেকার ওই সিজারিয়ান করেছেন। তার দাবী সিজারে কোন সমস্যা ছিলোনা। রেবেকা অধিক টেনশনে হার্ডফেল করে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, রাতেই বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে। নানা পর্যায়ের মানুষদের উপস্থিতিতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চেক মৃতার স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই চেকের টাকা পরিশোধ করা হবে।
তবে রাজবাড়ী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হান্নান ওই ঘটনার ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
রাজবাড়ী থানার এসআই শওকত জানান, স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমংশার করা তিনি শুনেছেন। তবে ওই ঘটনায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়