ঝুঁকিতে লঞ্চ ও ফেরিঘাট : গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙ্গনে আতঙ্কিত হাজারো পরিবার –
- Update Time : ০৬:৩০:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১
- / ৪৩ Time View
শামীম শেখ, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর্গত পদ্মা পাড়ের হাজারো পরিবার, ফসলি জমি,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়ক-মহাসড়ক। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটগুলো।
স্হানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে ভয়াবহ নদী ভাঙনের ক্ষত কাটতে না কাটতেই এবারো ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এ কারনে পদ্মা পাড়ের মানুষগুলো নিরাপদ স্হানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে লঞ্চঘাটের ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বুধবার হতে বালু ভর্তি জিওটিউব ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে।
কিন্তু ঘাটের উজানে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।এতে করে বিক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন এলাকার লোকজন।এ অবস্হায় গত বুধবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মুন্সি। এ সময় তিনি এ এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষনা দিয়েছেন।
সরেজমিন আলাপকালে স্হানীয়রা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চল । ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পদ্মা পাড়ের শতশত মানুষ।ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী পাড়া, কাওয়াজানি ও মধ্য কাওয়াজানি এলাকা এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাত্তার ফকির পাড়া, ছিদ্দিক কাজীর পাড়া, মজিদ শেখের পাড়া,১নং ব্যাপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়া, লালু মন্ডল পাড়া ও নতুন পাড়া।
এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটগুলো।৭ টি ফেরিঘাটের মধ্যে ১, ২, ৩ ও ৭ নং ফেরিঘাট এলাকায় অনেক জিও ব্যাগ ধ্বসে গেছে। জরুরি ব্যবস্থা নেয়া না হলে তীব্র স্রোতে ঘাটগুলোতে বড় ধরনের ধ্বস সৃষ্টি হয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কিন্তু জিও ব্যাগ সংকটের কারনে বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ বেশ দীর্ঘদিন ধরে জরুরি সংরক্ষণের কাজ করতে পারছে না।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের মজিদ সরদার পাড়ার বাসিন্দা নিকাত সরদার (৭০),রহিমা বেগম (৬৫),সরিফা খাতুন (৪৫),মরিয়ম বেগম (৪০)সহ অনেকেই বলেন,গত কয়েক বছরে তাদের এলাকার বেশীরভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমরা যারা আছি এবার হয়তো থাকতে পারবো না।কিন্তু ঘরবাড়ি সরিয়ে কোথায় গিয়ে যে আশ্রয় নেব সে নিশ্চয়তাও নেই।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার বাবু মোল্লা জানান,তারা কয়কশ পরিবার ১ ও ২ নং ফেরিঘাট এলাকায় বসবাস করেন।ঘাট দুটির বিভিন্ন স্হানে জিও ব্যাগ ধ্বসে গেছে। আরেকটু পানি ও স্রোত বাড়লে এখানকার ঘাটদুটিসহ গোটা এলাকা ভেঙে যেতে পারে।বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষকে বলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বে সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। অথচ দৌলতদিয়া ও দেবগ্রামের ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। ভাঙ্গনের কারনে গোয়ালন্দের মানচিত্র হতে ইউনিয়ন দুটি হারিয়ে যেতে বসেছে।ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য আমরা পানিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির চালিয়েছি। সরকারের একাধিক মন্ত্রীসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় এ এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।কিন্তু অদ্যাবধি কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম জানান, ফেরিঘাটগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ স্হানসমূহ আমরা চিহ্নিত করেছি।আশা করছি শুক্রবার সকাল হতে কাজ শুরু করতে পারবো।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আ. আহাদ বলেন, আমরা জরুরি ভিত্তিতে লঞ্চঘাট রক্ষায় কাজ শুরু করেছি।এর বাইরের এলাকায় আমাদের কাজ করার আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। তবে জরুরি প্রয়োজনে উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশক্রমে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে কাজ করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়