“মহান মে দিবস” : লেখক – নমিতা দাস
- Update Time : ১০:৪১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩
- / ২৩৯ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে সকল শ্রমিকদেরকে জানাচ্ছি অফুরন্ত ভালবাসা। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি শহিদ শ্রমিকদেরকে যাদের আতœত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের শ্রমিক শ্রেনী পেয়েছে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। ১৯ শতকে শ্রমিকরা কলকারখানায় ১০-১২ ঘন্টা অনেক ক্ষেত্রে ১৬-১৮ ঘন্টাও কাজ করতো।
১৮৮০ সালে আমেরিকার শ্রমিকরা সর্বপ্রথম ৮ ঘন্টা কাজের দাবি জানায়। মালিক শ্রেণি তাতে কর্ণপাত করেননি। ১৮৮৬ সালের ১লা মে কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, দৈনিক আট ঘন্টা শ্রম এবং মুজুরী বৃদ্ধিও দাবীতে শ্রমিক নেতা জোয়ান মোষ্ট, অগাষ্ট ষ্পীজ এবং লুইলিংএর নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শিল্প ধর্মঘট শুরু হয়। মালিক পক্ষ বর্বর পন্থায় এই আন্দেলনকে দমন করার চেষ্টা করে। ৩ মে ধর্মঘটে সমবেত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালায়, ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং বহুশ্রমিক আহত হয়।
১৮৮৬ সালের ৪ মে হে মার্কেট নামক স্থানে শ্রমিকরা সমবেত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন অগাষ্ট স্পীজ। হঠাৎ বোমা বিস্ফোরনে এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু ঘটে। পুলিশের গুলিতে ১১ জনশ্রমিক নিহত হয়। বোমা বিষ্ফোরনের ঘটনায় ৮ জনশ্রমিককে আটক করা হয়। ১জনকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় এবং ৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। রায় ঘোষনার পর একজন আতœহত্যা করেন এবং ৬ জনকে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর জন সম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরে জানাযায় যে শ্রমিকদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তারা দোষী ছিলেন না। ১৯৮৯ সালেফান্সের প্যারিসে ফরাসী বিপ্লবের দুইশত বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ১৯৯০ সাল থেকে এই দিবসটি পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি এই দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বর্তমানে প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি শ্রমিকদের বেকারত্ব বাড়ছে। প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার এবং মালিক শ্রেনীর উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ একান্তভাবে কাম্য।
নারী শ্রমিকদের নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬ এর ৩৩২ ধারায়বলাহয়েছেযে, প্রতিষ্ঠানের কোনকাজ কোনমহিলা নিযুক্ত থাকলেতিনি যে পদমর্যাদারই হোকনা কেন তারপ্রতি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্য কেউ এমন কোন আচরন করতে পারবেনা যা অশ্লীল কিংবা অভদ্রজনোচিতবলে গন্য হতে পারে।
৫৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, মহিলা শ্রমিকদের জন্য সতন্ত্র পায়খানা ও প্র¯্রাবখানা এবং ধৌতকরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। ৯৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ৪০ বাততোধিক মহিলা শ্রমিক থাকলে তাদের ৬ বছরের কম বয়সী শিশু সন্তানদের জন্য শিশু কক্ষ রাখতে হবে।
এছাড়া ৪৬ ধারায় বিধান মোতাবেক প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক তার মালিকের নিকট হতে তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখে অব্যাবহিতপূর্ববতী আট সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবার অধিকার হবেন এবং তার মালিকতাকে এই সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন।
বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬ এ উপরোক্ত বিধানসহ শ্রমিকদের কল্যানে আরো অনেক বিধান রয়েছে যার বাস্তবায়ন হচ্ছে খুব কম। বিশেষ ভাবে নারী শ্রমিকদের শিশু সন্তানের দেখাশোনার কোন ব্যবস্থা কলকারখানাতে দেখা যায়না। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কলকারখানার নারীশ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরী । আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সফল হোক।
লেখক – নমিতা দাস, প্রশিক্ষণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়