গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে, ‘রইল বাকি এক !’
- Update Time : ০৮:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৩৯৩ Time View
আজু শিকদার, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
একে একে বন্ধ হয়ে গেছে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে আগত ট্রেন। এখন শুধু একটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকবে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। এতেকরে চরম বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে রেলওয়ের দু’টি স্টেশন। একটি গোয়ালন্দ বাজার, অপরটি গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া)। জনবল সংকটে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে দু’টি আন্তনগর ট্রেনসহ আরো বেশ কয়েকটি ট্রেন নিয়ে চলছিল গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। কিন্তু একে একে দু’টি আন্তনগর প্রত্যাহারের পর থেকেই গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তরা, আবাসিক বোডিং, ছোট ছোট দোকানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দূর্দিন শুরু হয়। এরপরও বেসরকারি ভাবে পরিচালিত একটি নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনের কার্যক্রম ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। এই দুটি ট্রেনের মধ্যে থেকেও রেল কর্তৃপক্ষ ১ ডিসেম্বর থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনের পরিবর্তে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে যাতায়াত করছে। এই ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ ঘাটের শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি সড়ক নির্ভর হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন আগেই বন্ধ হয়ে যায় পার্ব্বতিপুরগামী শিলিগুড়ি নামে পরিচিত ৫১৩ নম্বরের লোকাল ট্রেনটি। এতেকরে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনটি এখন ট্রেন সংকটে ধুঁকছে।
গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট-খুলনা-রাজশাহী রেলপথের গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টার পদে একজন, সহকারী স্টেশন মাস্টার একজন, পয়েন্টসম্যান তিনজন এবং গেটম্যান (পাহারাদার) দুজনসহ সব পদে প্রয়োজনীয় লোকবল ছিল। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করত হাজারো মানুষ। ধীরে ধীরে পদ শূন্য হয়ে রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি গত ৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সেই পথেই হাঁটছে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনটিও।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দু’টি আন্তনগর ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি একটি লোকাল ট্রেন আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় প্রভাব পড়তে শুরু করে। রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে নিয়মিত চলাচল করত মধুমতি এক্সপ্রেস নামের আন্তনগর ট্রেন। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুরের ভাঙায় স্থানান্তর করা হয়। এর আগে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে চলাচলকারী তিতুমীর এক্সপ্রেস নামের অপর একটি আন্তনগর ট্রেন প্রত্যাহার করে রাজশাহী-চিলাহাটি রুটে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে গোয়ালন্দ ঘাট-পার্বতীপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করত শিলিগুড়ি নামে একটি লোকাল ট্রেন। রেলওয়ের ৫১৩ নম্বর ওই লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন মালপত্র পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে লোকাল ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট রেলওয়ে স্টেশনের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৭০) বলেন, ‘আমি ৪০ বছর যাবত গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে হোটেল ব্যাবসা করে আসছি। একটা সময় খুব জাগযমক ব্যবসা ছিল। এখন স্টেশনে আগের তুলনায় লোক সমাগম নেই বললেই চলে। ব্যাবসা বানিজ্যও নাই। তার পরেও দুটি ট্রেনের যাত্রীদের আশায় হোটেল খুলে বসে থাকতাম। অন্যান্য ট্রেনের মত মেইল ট্রেনটিও বন্ধ গেল। আমরা এখন হোটেল বন্ধ করে বেকার হয়ে বাড়ীতে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্রমিক নেতা আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা জানান, ‘শিলিগুড়ি নামের লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পার্বতীপুর থেকে গোয়ালন্দ ঘাট রেলপথ এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। রেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সড়ক পথে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এ রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত শতশত শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ছিলো মাত্র দুটি ট্রেন তার মধ্যে যদি মেইল ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে গেল। এতে গোয়ালন্দঘাট এলাকার শতশত মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এমনিতেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটে আর আগের মতো লোকসমাগম নাই।
গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন মাস্টার আব্দুল জলিল বলেন, এই স্টেশনে একটি নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি (সাটল) লোকাল ট্রেন চালু ছিল। গত ১ তারিখ থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি রুট পরিবর্তন করে খুলনা-গোয়ালন্দঘাট এর পরিবর্তে খুলনা-ঢাকা রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল শুরু করেছে। এখন শুধু মাত্র সাটল (লোকাল) ট্রেনটি এই রুটে চলাচল করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার ফোনে জানান, উন্নয়নের ফলে কালের বিবর্তনে অনেক সময় ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনের ঐতিহ্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একসময় গোয়ালন্দ ঘাটে ফেরির জন্য যানবাহনগুলোকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। দেখেন এখন কয়টা ফেরি চলে? যানবাহনের জন্য ফেরি বসে থাকে। এ সবই উন্নয়নের ফসল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল চালু হওয়ার ফলে গোয়ালন্দ ঘাটের পরিবর্তে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন ঢাকায় যাচ্ছে। এতে যাত্রীদেরও সময় এবং ভোগান্তি কমে গেছে। কোন রুট থেকে ট্রেন প্রত্যাহার করা হলে, ওই এলাকার মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়