বালিয়াকান্দির ঋষিপল্লীর বাসিন্দাদের দূর্ভোগ চরমে
সোহেল রানা :
ভোট আছলে সহল প্রার্থী কয় আমি নির্বাচিত হলে তোমার রাস্তা, বিদ্যুৎসহ পানি সরানোর ব্যবস্থা করে দেবো। ইলেকশন চলে গিলে আর কেউ খোজ নেয় না আমাগো। পানি নিষ্কাষনের কোন প্রকার ব্যবস্থা না থাকায় পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। ঋষি পল্লীতে প্রবেশের কোন রাস্তা নেই, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বাড়ীর উঠানে জমে পানি। এরকম হাজারো সমস্যা নিয়ে ঋষিপল্লীর বাসিন্ধাদের বসবাস করতে হচ্ছে। এমন কথাগুলো বললেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ি গ্রামের ঋষিপল্লীর বাসিন্ধারা।
তারা জানালেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে ছেলেদের স্কুলে যাবার বয়স হলেও বেশির ভাগ পরিবারের সন্তানদেরকে যেতে হয় দু,বেলা দু-মুঠো ভাতের সন্ধানে। পড়ালেহা করে চাকরী ভাগ্যে জোটে না, তাই সংসার চালাতে ৮-১০ বছর বয়স হলেই কাজে গেলে যেতে হয়। এ পল্লীর বেশির ভাগ লোকই গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরীর কাজ করে। এমনিতেই বাশ-বেতের মুল্য চড়া হওয়ায় যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করা দুষ্কর। পড়ালেখার প্রতি অভিভাবকদের ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অনটনের কারনে বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েরা মাধ্যমিক পর্যায়ের আগেই ঝড়ে পড়ে। স্বাস্থ্য সেবার চিত্র একটু আলাদা। এদের রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের একমাত্র ভরসা পল্লী চিকিৎসক। সুপেয় পানির জন্য ব্যাক্তি উদ্দ্যোগে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে টিউবয়েল বসিয়েছে। পল্লীতে প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বাড়ীর উঠানে জমে পানি। পানি নিষ্কাষনের কোন ব্যবস্থা না থাকার পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। পয়ঃনিষ্কাশন কোন প্রকার ব্যবস্থা নেই। তাই যার যার বাড়ীর কাজ তাদেরকেই করতে হয়।
তাদের বেশির ভাগ পরিবারের সদস্যদের প্রধান আয়ের উৎস বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, তেজসপত্র তৈরী করে বিক্রি করা। এ দিয়ে যে অর্থ আয় হয় তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করতে হীমশিম খেতে হয়। এখন অনেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে সেলুন, বাজারে কুলির কাজসহ অন্যান্যে কাজের প্রতি ঝুকে পড়ছে। এ ঋষি পল্লীর শিশুদেরকে কম সংখ্যক ৫বছরে বয়সে স্থানীয় ব্যাপিষ্ট স্কুল, ব্র্যাক স্কুল ও বেশির ভাগ শিশুদেরকে ৬ থেকে ৭বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫জন ছেলে , ১১জন মেয়ে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩জন ছেলে, ২জন মেয়ে, ব্র্যাক স্কুলে ২জন ছেলে, ২জন মেয়ে গমন করে। কলেজের বারান্দায় পা রাখতে পারেনি কেউ। তাদের পিতা-মাতাদের ইচ্ছা থাকলেও তাদের সাধ্যের মধ্যে কুলায় না ফলে সরকার সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করলেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি।
ছেলেরা সাধারনত বেশির ভাগ পঞ্চম শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। মেয়েরা বেশি দুর লেখাপড়া করতে পারে না বেশির ভাগ হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরই তাদেরকে বিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় সবকটি পরিবারের ছেলে -মেয়েদেরকে ১৪-১৫ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেওয়া হয়। মাঝপথে ৫জন ছেলে ১ জন মেয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়েছে। তাদের অধিকাংশই কারন হিসাবে উল্লেখ করেছেন পরিবারের আয় না থাকার কারণে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে। এদের বেশির ভাগই পঞ্চম শ্রেনী থেকে বাদ দিয়েছে। ঝড়ে পড়ার কারন পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি ও আয়ের উৎস না থাকার কারনে । প্রতিমাসে প্রতিটি ছেলে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহনে বেতন, প্রাইভেট, পোশাক, খাতা,কলমসহ প্রায় ১৪শত থেকে ১৮ শত টাকা খরচ হয়। তবে এ পল্লীর কেউই সরকারী চাকুরীতে সুযোগ পায়নি।
ঋষি পল্লীর জন্য কোন পয়নিষ্কাশন সুবিধা নেই। নিজেদের অর্থায়নে টিউবয়েল পুঁতে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্দ্যোগে ও বিভিন্ন এনজিওর সহায়তায় অন্তত ৮টি টিউবয়েল বসিয়ে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। স্যানিটেশন ব্র্যাকের মাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার পেলেও বেশির ভাগ পরিবার এখন ব্যক্তি উদ্দ্যোগে ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছেন। অসুস্থ হলে বেশির ভাগ পরিবারের সদস্যরা পল্লী চিকিসকের পরামর্শ গ্রহন করে। দু,একজন হাসপাতালে গেলেও ডাক্তার সংকট, ওষুধ ঠিকমত পাওয়া যায় না ফলে ঔষুধ ফার্মেসী থেকে ক্রয় করতে হয়। গর্ভবর্তী মায়েদেরকেও ব্র্যাকের সামান্য সহায়তায় রাজবাড়ী কিংবা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এভাবে কথা গুলো ব্যক্ত করেন, ঋষি পল্লীর বাসিন্ধা সুবোধ দাস, রতন দাস, নারায়ন দাস, সুজন দাস, প্রদীপ দাস ,কানু দাস, নিরান দাস, পরেশ দাস, মিলন দাস ।
স্কুল পড়–য়া মিতুল দাস, দিপ্তী, শিখা ,হৃদয় দাস , বিজয় দাস জানান, পড়াশোনা করেও বাপ-দাদার পেশা বেছে নিতে হয়, বিধায় অনেকে মাঝপথে বাদ দেয় পড়ালেখা। শিক্ষকরাও লেখাপড়ার জন্য আমাদেরকে ¯েœহ করে। পড়াশোনার খরচ অভিভাবকরা দিতে চায় না। ফলে স্কুলে গেলে শিক্ষকরা বেতন চাইলে না দিতে পারার কারনে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুল পড়–য়া অনন্ত, বিদ্যুৎ, সুপ্তা জানায়, স্কুলে পড়ার জন্য মন চায়, মা-বাবা খাতা, কলম কিনে দিতে চায় না। ইচ্ছা থাকলেও কিছুই করার থাকে না। সরকার সহযোগিতা করলে তারা পড়ালেখা করতে পারে।
পুর্ব মৌকুড়ি গ্রামের সচেতন ব্যাক্তি মিলন দাস জানান, ঋষি পল্লীতে ৩৩টি পরিবার বসবাস করে। ২শত লোকের বসবাস। এদের মধ্যে প্রায় পরিবারের সদস্য বাঁশ ও বেত দিয়ে তেজসপত্র তৈরী ও বিক্রি করে। আবার কেউ কেউ বাদ্য যন্ত্র বাজায়। এখন এ পেশা ছেড়ে বেশির ভাগ সেলুনের কাজে ঝুকে পড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পরই বাদ দেয়। অনেকে স্কুলের বারান্দায় পা রাখার সুযোগ পায় না। বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরা ৫ম শ্রেনী থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঝড়ে পড়ে। বাপ দাদার পেশা ছাড়া তাদের আর অন্য আয়ের উৎস নেই। এখানে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় অর্বতনীয় দুর্ভোগ। তারা পানি নিষ্কাশনসহ পল্লীর মধ্যে দিয়ে রাস্তার দাবী জানান। তাদের এ দাবী কবে পুরন হবে এমন আশ্বাস তাদের জানা নেই।