রাজবাড়ীর এসপি’র মহতী উদ্যোগ “:মরদেহ নিয়ে অমানবিকতার দিন শেষ, আনা নেয়া ফ্রি”

- Update Time : ০১:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৯ Time View
জাহাঙ্গীর হোসেন,রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
কয়েকমাস আগেও মরদেহ আনা নেয়া ছিলো ভুক্তভোগি পরিবার গুলোর জন্য আরেকটা বেদানাদায়ক যুদ্ধ। খুজতে হতো মরদেহ বহনকারী কোন রিকশা ভ্যান অথবা স্যালো ইঞ্জিন চালিত নছিমন। আবার সকল ভ্যান ও নছিমন চালকবহন করেন না মরদেহ। সে এক অমানবিক কষ্ট। চোখের জাল, নাকের জল এক করে খুজতে হতো রিকশা ভ্যান ও নছিমন, গুনতে হতো মাত্রাতিরিক্ত অর্থ। এমনি যুগের অবসান ঘটিয়েছেন গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে রাজবাড়ী জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে নিযুক্ত হওয়া মোছা ঃ শামিমা পারভীন। তিনি রাজবাড়ীতে যোগদান করেই দেখতেপান মরদেহ পরিবহণে অস্বস্থিতকর নির্মমতা। ফলে এই বেদনাদায়ক যুদ্ধেও অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেন তিনি। যার অংশ হিসেবে জেলা পুলিশে যুক্ত করেছেন তিনি বিনামূল্যে মরদেহ বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স। গত শরিবারও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩টি মরদেহ বহণ করেছে এই এ্যাম্বুলেন্স।
জানাগেছে, জেলা পুলিশের এই এ্যাম্বুলেন্সে বিগত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শনিবার পর্যন্ত সদর থানায় ৮টি, গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ৩টি, কালুখালী থানায় ৫টি ও পাংশা থানায় ৩টিসহ মোট ১৯টি মরদেহ পরিবহণ করা হয়েছে।
ছোট ভাইয়ের মরদেহ পরিবহণ করা সদর উপজেলার আলীপুরের ইমরান হোসেন বলেন, বিগত বছর প্রতিবেশি এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করে। সে সময় ওই ছাত্রীর মরদেহ রাজবাড়ী হাসপাতালে আনতে ভ্যান ও নছিমন চালকদের হাতে পায়ে ধরতে হয়, ছোটাছুটি করতে হয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে। এক পর্যায়ে এক হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে একটি রিকশা ভ্যানে তারা ওই মরদেহটি আনতে সক্ষম হন। অথচ বিগত সপ্তায় তার ছোট ভাইয়ের মরদেহ পরিবহণে কোন বেগ পেতে হয়নি। যেতে হয়নি কারো কাছে। রাজবাড়ী জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ প্রেটেকশনের মাধ্যমে বিনামূল্যে ভাইয়ের মরদেহ আনা এবং নেয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
নছিমনে মরদেহ বহণকারী আব্দুল কালাম ওরফে লাশ কালাম বলেন, ২/৩ দিনের পুরাতন লাশ তারা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বহণ করতেন। এখন জেলা পুলিশের এই এ্যাম্বুলেন্স আসায় তিনি এখন আর মরহেদ বহণ করতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তার জানামনে এমন সুবিধা অন্যকোন জেলায় নেই। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার তার মহতী প্রচেষ্টায় এই কার্যক্রম জেলা পুলিশের সদস্যরা বাস্তবায়ন করছেন। যা অত্যান্ত মানবিক এবং প্রসংশিত। এ সেবা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে এমনটাই আশা করছেন তারা।
রাজবাড়ী মর্গের ডোম রতন ডোম বলেন, আগে মরহেদগুলো আসতো রিকশা ভ্যান ও নছিমন করিমনে। ফলে অনেক বেগ পোহাতে হতো ভুক্তোভাগেীদের। এই এ্যাম্বুলেন্স আসতে এখন আর তেমন কোন কষ্ট হচ্ছে না।
রাজবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) রাসেল মোল্লা জানান, জেলা পুলিশের এ্যাম্বুলেন্সে শনিবার ৩টি মরহেদ আনা নেহা করা হয়েছে। বিগত সময় একটি মরদেহ সদর হাসপাতাল ও মর্গে আনা নেয়া তদারকি করতে তাদের চরম বেগ পোহাতে হতো। এখন সে সমস্যা আর নেই। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের মানবিক উদ্যোগের ফলে জেলা পুলিশের যুক্ত হয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স। যা দিয়ে পুরোদমে জেলার ৫টি উপজেলা থেকে দ্রুত সময়ে কোনরুপ ঝামেলা ছাড়াই মরদেহ পরিবহণ করা যাচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, মানবিক প্রতিবন্ধী এবং অজ্ঞাত মরদেহ নিয়ে বিপদেও আর শেষ ছিলোনা। খুজতে হতো রিকশা ভ্যান ও নছিমন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গুনতে হতো মাত্রাতিরিক্ত অর্থ। বিষয়টি জানারপর আমলে নেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার। যার অংশ হিসেবে স্থানীয় মহতী মানুষের সহযোগিতায় পুলিশ সুপারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে জেলা পুলিশের যুক্ত হয়েছে একটি মরদেহ বহণকারী এ্যাম্বুলেন্স। আর এ উদ্যোগে ফলে মরদেহ পরিবহণে ভুক্তভোগী ও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে আর নির্মম কষ্ট পেতে হচ্ছে না। তিনি এমহতী কাজের জন্য পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা ঃ শামিমা পারভীন জানান, বিষয়টি ছিলো অত্যান্ত অমানবিক। যে কারণে তিনি এ উদ্যোগ নেন এবং এর সুফল পাচ্ছেন জেলার ভুক্তোভোগিরা। তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়