রাজবাড়ীতে সনাকের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস পালন

- Update Time : ০৯:১৯:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৫ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
‘‘ক্লিন এনার্জি, টেকসই ভবিষ্যৎ”-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস পালন উপলক্ষে ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ১১টার দিকে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়্যুথ এনগেজ এন্ড সাপোর্ট গ্রুপ (ইয়েস), রাজবাড়ী অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর যৌথ আয়োজনে এ কর্মসূচী পালন করা হয়।
মানববন্ধনে সনাকের সভাপতি প্রফেসর মো. নুরুজ্জামান, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন, রাজবাড়ী শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, জেলা সনাকের সদস্য কমল কান্তি সরকার, আজিজুল হাসান খোকা, শিক্ষক হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে জীবাস্ম জ্বালানির উপর চাপ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সৌরশক্তি, বায়োগ্যাসের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে সরকারের আরো কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। মানববন্ধনে ক্লিন এনার্জি হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা টেকসই ভবিষ্যতের পথে উত্তরণে অন্যতম অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ এবং ভূতাপীয় শক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রথমবার টিআইবি এ দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটিকে সামনে রেখে টিআইবি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি দিবস ২০২৫: টিআইবির দাবি-
এ দিবসটি উপলক্ষ্যে জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিতসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে টিআইবি সংশিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ প্রস্তাব করছে-
১) অধিকতর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যমান জ্বালানি মহাপরিকল্পনা ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি-২০২৩)’ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস এবং জ্বালানি মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি- এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করতে হবে। এক্ষেত্রে-
স্বার্থের দ্বন্দমুক্ত বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে এবং নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পে অর্থায়ন না করাসহ এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বন্ধে সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
একটি সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ রোডম্যাপসহ কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
মহাপরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে একটি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
সম্ভাবনা যাচাই সাপেক্ষে উৎস ভেদে (সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ, ওয়েস্ট টু এনার্জি) নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
২০৪০ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
২) জ্বালানি খাতে নীতি করায়ত্ত বন্ধ এবং স্বাথের দ্বন্দ প্রতিরোধসহ এ খাত সংশিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় জাবাবদিহি নিশ্চিতে সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।
৩) পরিবেশ আইনের আওতায় বিধিবদ্ধ করে সকল প্রকার জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ত্রুটিমুক্ত প্রাথমিক পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (আইইই), সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা (এসআইএ), পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ), পরিবেশগত প্রভাব নিরসন, এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।
৪) নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)- কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের সমমর্যাদা প্রদানসহ এর কারিগরি, জনবল এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৫) জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিসহ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। জ্বালানির দাম নির্ধারণসহ প্রতিষ্ঠানটির ম্যান্ডেট অনুসারে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
৬) আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত জ্বালানি খাতের সকল প্রকল্প প্রস্তাব এবং চুক্তির নথি প্রকাশ করতে হবে।
৭) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ক্রয় সম্পাদনে উন্মুক্ত-পদ্ধতি ব্যবহারসহ জাতীয় ক্রয় আইন ও নীতি পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এ খাতের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রয় সম্পাদনে ই-জিপি পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৮) পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকায় নির্মীয়মাণ কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।
৯) এনডিসি’র অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে সোলারসহ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০) স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রকল্পের পরিকল্পনা, চুক্তির শর্ত নির্ধারণ, অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১) জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান এবং দূষণ ও পরিবেশ-বিষয়ক তদারকিতে স্বচ্ছ ও যথাযথ-প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
১২) নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল বরাদ্দ এবং গবেষণা ও শিল্পখাতের মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী, যুব সমাজ ও স্থানীয় প্রায় শতাধিক মানুষ অংশগ্রহন করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়