ঘুষখোর রাজবাড়ীর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র, নৃপেন ও মোশারফ-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান
- Update Time : ০৬:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ২৫৬ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
ঘুষখোর রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল, রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার নৃপেন্দ্রনাথ সরকার ও মোশারফ হোসেন-এর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এসব কর্মসূচীর আয়োজন করে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষক।
ওই কর্মসূচী চলাকালে বক্তৃতা করেন, সহকারি শিক্ষক মোঃ রুবেল মন্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সহকারী শিক্ষক আঞ্জুমান আরা, ইব্রাহিম ভূইয়া, শরিফুল হুদা সাগর, এস এম মান্নান, রাশিদুল ইসলাম, নইমুল হক পলাশ, হাবিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, ছলেমান খলিফা, অরুপ রতন দে, আবুল কালাম প্রধান, এনামুল হক, আব্দুল মালেক, আসিফ বিশ্বাস, দীনেশ সরকারসহ অন্যান্যরা। পরে জেলা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং বিক্ষোভ মিছিলের পর রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের কাছে ৮ দফা অভিযোগ সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষকরা।
অভিযোগে বলা হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল কোন শিক্ষক অবসরে গেলে মোটা অঙ্কের অর্থ উৎকোচ ছাড়া তিনি সেই শিক্ষকের পেনশন ছাড় করেন না। ২০০২, ২০০৩ এবং ২০১০ সালে নিয়োগকৃত শিক্ষকগণের বেতন সমতাকরণের সময়ে তিনি কতিপয় শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫ শত টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। পদোন্নতি প্রত্যাশী শিক্ষকগণের অধিদপ্তরে প্রেরণে ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তিনি চাকরি প্রার্থীদের কাছ রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার নৃপেন্দ্রনাথ সরকার ও মোশারফ হোসেনসহ অন্যান্য উপজেলার কতিপয় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি শিক্ষকদের কোন কাজ টাকা ছাড়া করেন না। যেমন বিদেশ ভ্রমন, পাসপোর্ট করার অনুমতি, এনওসি প্রদান, চাকুরী স্থায়ীকরণ, ডেপুটেশন প্রদান ইত্যাদি। কোন শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিভিন্ন নিয়মের বেড়াজালে ফেলে হয়রানি করেন। এতে শিক্ষকরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তার এই অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন অফিস সহকারী জাকির হোসেন। কথিত আছে জাকির হোসেন ডিপিইও-এর ঘুষ সংগ্রহকারী। ডিপিইও -এর অনৈতিক কাজের সঙ্গী হওয়ায় অফিস সহকারী জাকির হোসেন ক্ষমতার অব্যবহার করে প্রায়ই অন্যান্য অফিসার ও শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও নানা হয়রানি করে থাকেন। তিনি নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না ফলে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কাজে কালক্ষেপণ হয়। তার এহেন কর্মকান্ড জেলার প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে এই জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মানকে ক্ষুণ্ন করছে। শিক্ষকদের অনলাইন বদলিতেও চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ঐ শিক্ষকের অনুমোদন দেন না। বদলির অনলাইন আবেদন সঠিক সময়ে প্রেরণ করেন না। নতুন শিক্ষকের পদায়নেও তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে থাকেন।
জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে না থাকাসহ অনিয়ম-দুনীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরপর দুইবার শিক্ষা মেলা না করে অর্থসাতের ঘটনা জানাজানির পর দায়সারা শিক্ষা মেলা করা, টাকা ছাড়া ফাইল আটকে রাখায় ক্ষোভ শিক্ষকদের। বিষয়টি মহাপরিচালক অবগত থাকলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে দাবী করেছেন একাধিক শিক্ষক। এ শিক্ষা মেলা নিয়ে তদন্ত কমিটি হলেও এ কমিটি দায়সারা তদন্ত করেছে। সেখানে সংশ্লিষ্ঠদের ডাকা হয়নি, কয়েকজন কথিত সাংবাদিককেও হাজির করা হয়েছে। জোরপূর্বক টাউন মক্তব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ম্যনেজ করাও হয়েছে। এছাড়া রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার নৃপেন্দ্রনাথ সরকার ও মোশারফ হোসেন দূর্নীতিও আকাশ ছোয়া। নৃপেন্দ্রনাথ সরকার রাজবাড়ীতে প্রায় ১৭ বছর এবং মোশারফ হোসেন প্রায় ১০ বছর রাজবাড়ীতে অবস্থান করছেন। এই দুই কর্মকর্তা স্লিপের টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেনেন্স, বদলী বাণিজ্য, বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানসহ সরকারী বরাদ্দের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের মদত প্রদান করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করছেন। তবে তাদের খুটির জোরের কারণে কেউ কিছু বলার সাহস পান না।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়