রাজবাড়ীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
- Update Time : ১১:০০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
- / ৩১ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
“নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ”- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে এবং এনজিও ফাউন্ডেশন ও টিআইবি সনাকের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুবর্ণা রানী সাহা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপ পরিচালক আজমীর হোসেন।
সভায় রাস এনজিও এর নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু, সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন, মহিলা পরিষদ নেত্রীসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, নারীরা এখন বিভিন্ন বিষয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, নারীদের উন্নয়নে নারীদের মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে, বর্তমানে নারী শিক্ষার হার আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে তবে উচ্চ শিক্ষার হার খুব সন্তোষজনক নয়। এখন নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। দেশে উন্নয়ন করতে হলে নারী পুরুষের নায্যতা এবং সমতা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় সনাক ও ইয়েস সদস্যবৃন্দ সহ প্রায় ৪০০ নারী পুরুষ অংশগ্রহন করেন।
জেন্ডার সংবেদনশীল দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে টিআইবি দেশব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা ও অধিপরামর্শ কার্যক্রমের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করছে। স্থানীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী ৪৫টি অঞ্চলে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) ও অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপ-এর সদস্যগণ দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নানাবিধ প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে করণীয় হিসেবে টিআইবি আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ উপলক্ষে নিম্নলিখিত দাবিসমূহ উত্থাপন করছেÑ
নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল বিনিয়োগ ও বরাদ্দকৃত বাজেটের স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রকৃতপক্ষে নারীরাই উপকার লাভ করতে পারে।
নারীদের জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও স¦াস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিত, ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সুলভ করা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ ও ১৬ কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে দুর্নীতি কমিয়ে আনাসহ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিতের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার নারী অধিকার হরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকেÑ বিশেষ করে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ, শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা ও সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধে রাজনৈতিক দলসমূহের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। “গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (সংশোধিত) আইন ২০০৯” অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাড়াতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় সম্পর্কে নারীদের সচেতন করতে প্রচারণা জোরদার করতে হবে। নারীর নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আইনি বিধান ও সাজা সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি ও স্থানীয় সরকার, আইনি সংস্থা ও বিচারালয়সহ নারীরা সেবা নিতে যান এমন প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবাÑ বিশেষ করে নারীদের জন্য প্রদত্ত সেবা সম্পর্কে জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিতে তথ্য প্রচার করতে হবে এবং নারীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ একটি নারীবান্ধব অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে; নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধে ব্যক্তির রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা ও প্রভাব বিবেচনা না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে।
নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সাধারণ জনগণের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আদিবাসী, দলিতসহ সকল প্রান্তিক নারীদের অধিকার নিশ্চিতে বিশেষায়িত সময়াবদ্ধ পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়