আগামীকাল রাজবাড়ী থেকে দু’সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ভারতের মেদেনীপুরে যাবে ওরশ স্পেশাল ট্রেন
- Update Time : ১০:০০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২৭৯ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
এবছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে ১২৩তম বার্ষিক ওরস শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী থেকে দুই হাজার ২শ’র বেশি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে একটি উরস স্পেশাল ট্রেন।
আগামীকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) রাত ১০টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ২৪টি বগি সম্বলিত ট্রেনটি ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং ওরস শেষে ট্রেনটি ফিরে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী।
বাংলাদেশ-ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই উরস স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। তবে করোনার কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে উরস স্পেশাল ট্রেন যায়নি। ভারতের মেদিনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে একই দিন রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফে নানা আনুষ্ঠানিকতা হয়।
এদিকে ওরস স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। রেললাইনের পাশ দিয়ে মুখরোচক খাবার সহ হরেক রকমের পসরার দোকান সাজিয়ে বসে দোকানিরা। এ সময় কেউ আসে ট্রেন দেখতে, কেউবা আসে ঘুরতে, আবার কেউ আসে ট্রেনে চুম্বন ও সালাম করতে। এছাড়া কাদেরীয়া তরিকার ভক্ত ও মুরিদানরা আসেন মানত করা টাকা, হাস, মুরগি, কবুতর, ছাগলসহ ইত্যাদি দিতে। অন্যদিকে সকাল থেকেই ট্রেনটি সাজানো ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ করতে থাকে ভক্ত ও মুরিদানরা।
ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, ট্রেন ছাড়া উপলক্ষে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত আসে। কেউ আসে দেখতে, কেউ সালাম আবার অনেকে আসে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে। এই ট্রেনটি ২ হাজারে বেশি মানুষ গেলেও প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ওই দিন বিকাল থেকে ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত স্টেশন এলাকায় মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে।
স্থানীয় মেহেদী হাসান বলেন, তার বুদ্ধি হবার পর থেকেই দেখে আসছেন প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারী রাতে রাজবাড়ী থেকে মেদেনীপুরে ওরসের একটি স্পেশাল ট্রেন যায়। এই ট্রেন দেখতে আসে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। এতে স্টেশন এলাকা মিলন মেলায় পরিনত হয়। এটা সবার জন্য একটা আনন্দের দিন। যারা মেদেনীপুর হুজুরের অনুসারী তারা মানত করে থাকে এবং সেই কারণে কেউ মুরগি, কেউ কবুতরসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে আসে। আবার অনেকে নগদ টাকাও দেয়। সারাদেশ থেকে যেহেতু এই একটি মাত্র ট্রেন মেদেনীপুরের ওরসে যায়। সেহেতু এই ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ালো আরও কিছু মানুষ যেতে পারতো।
মেদেনীপুরের মুরিদান রেজাউল হোসেন খান, গোলাই মন্ডল বলেন, আগামী ৪ঠা ফাল্গুন (১৪ ফেব্রুয়ারী) রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরে ওরসে একটি ট্রেন যায়। সে ট্রেনে অনেকে বিভিন্ন কারণে যেতে পারে না। ফলে ভারতের মেদেনীপুরের সাথে মিল রেখে রাজবাড়ী বড় মসজিদ খানকা শরীফেও ওরস করা হয়। ওরস উপলক্ষে গেইট নির্মান, মসজিদ রংসহ নানা কাজ হচ্ছে। এখানেও হাজার হাজার মানুষ হয়।
রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ কাদেরী খোকন বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে আল মেদিনীপুরী (আ.) মশহুর নাম ‘মওলাপাক’ এর ১২৩তম ওরস শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া ২ হাজার ২শ’র বেশি ওরস যাত্রীদের ভিসা সহ প্রায় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। এখন তারা যাত্রা শুরুর অপেক্ষা আছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারীতে রাতে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে এবং ওরস শেষে ফিরে আসবে ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে। মেদেনীপুরের সাথে মিল রেখে রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ওরস শরীফে যাবার জন্য হাজার হাজার ভক্ত ও মুরিদান আবেদন করেন। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় সবাইকে নিতে পারেন না। যে কারণ লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত করে পাসপোর্ট নিয়ে ভিসা সম্পুন্ন করেন। তবে অনেকে সড়ক পথ সহ অন্যান্য ভাবে মেদেনীপুরের ওরস শরীফে যায়।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, ওরস স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকায় ওরস যাত্রীসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। যাত্রী ও জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা সর্বচ্চো নিরাপত্তা দেবেন। এছাড়া স্টেশন এলাকা সিসি টিভির আওতায় থাববে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, ১৯০২ সাল থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার উদ্দ্যোগে রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরে একটি ওরস স্পেশাল ট্রেন যায়। এবারও আগামী বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) রাত ১০টায় ২৪টি বগি সম্বলিত ওরস স্পেশাল ট্রেন রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটিতে ২ হাজারের বেশি ওরস যাত্রী থাকবে এবং ট্রেনটি ভারতীয় কোচ দ্বারা চলবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সুন্দর ভাবে ট্রেনটি মেদেনীপুরে যাবে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে ফিরে আসবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়