করোনা ভাইরাস: রাজবাড়ীর গরু ও মহিষের খামারীরা বিপাকে –
- Update Time : ০৯:২৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০
- / ১৬ Time View
রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে রাজবাড়ীর গরুর খামার গুলোতে। যানবাহন, হোটেল ও মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। এতে করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে খামার মালিকারা।
খামার মালিক বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কোম্পানি ও হোটেল গুলো এখন দুধ নিচ্ছে না। ফলে খামারের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ ও কম দামে দুধ বিক্রি করে লোকসানে পড়ছেন। তাই ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ মৌকুফ ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রনোদনা ফান্ড দিতে অনুরোধ করেন। অপরদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, সাময়িক সময়ে জন্য খামারীদের সমস্যা হচ্ছে। ফলে উৎপাদিত দুধ দিয়ে ঘি তৈরি করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন খামার মালিকদের।
রাজবাড়ীতে ছোট বড় প্রায় ৩শ গরুর খামার আছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০টি বড় খামার। যেখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, মিষ্টি দোকানসহ প্রায় সব বন্ধ থাকায় দুধ নিচ্ছেন না কেউ। যে কারণে খামারীদের উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি ও খামারের আশপাশের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন খামারীরা। এছাড়া পরিবহন বন্ধ থাকায় গরুর খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি খামার পরিচর্যাকারীদের বেতনও ঠিকমত দিতে পারছেন না খামার মালিকরা। এমন অবস্থা জেলার প্রায় প্রতিটি ফার্মের।
জেলার সবচেয়ে বড় গরুর ফার্ম সদর উপজেলার আলীপুরের আলাদীপুরের এপিসোড এগ্রো লিমিটেড। যেখানে গরুর পরিচর্যার জন্য নিয়মিত প্রায় ২৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। খামারে ২৯০ টি গাভী, ২০৭ বাছুর ও ২২০ টি ষাড় গরু আছে। বর্তমান প্রতিদিন খামার থেকে প্রায় ৯ থেকে সাড়ে ৯শ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। আগে যেখানে প্রায় ১৬শ লিটার উৎপাদন হতো। কিন্তু যে দুধ উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারজাত করতে পারছেন না খামারীটি। ফলে কম দামে বিক্রি ও আশাপাশ এলাকার জনগনের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন। ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি না করতে পেরে শ্রমিকদের মুজরি ও পরিবহন সংকটে গরুর খাবার নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। আগে প্রতিকেজি দুধ ৫০ থেকে ৭০ টাকায় আর এখন সেখানে প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।
ক্রেতারা বলেন, এখন দুধের কম দাম বিধায় খামারে দুধ কিনতে এসেছেন। এ দুধ নিয়ে তার পরিবারের জন্য রাখবেন এবং আত্মীয় স্বজনদের দেবেন।
ফার্ম দেখাশুনা ও পরিচর্যাকারীরা বলেন, করোনা ভাইরাস আসার আগে তারা ৫০ থেকে ৭০টাকা কেজিতে দুধ বিক্রি করতেন। যা এখন ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক সময় দুধ বিক্রি করতে না পেরে স্থানীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া দোকান বন্ধ থাকায় গরুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে গো খাদ্যের দাম। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে গরুর খাবারসহ তাদের বেতনাদি দিতেন খামার মালিকরা। কিন্তু এখন ঠিকমত বেতন দিতে পারছেন না। তাই সরকারের এসব খামার মালিকদের উপর দৃষ্টি দেবার অনুরোধ তাদের।
আলাদীপুর এপিসোড এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান শাহিনুর বলেন, তার খামারে ২৯৭টি গাভী, ২০৯টি বাছুর ও ২২০টি ষাড় গরু আছে। বর্তমানে তার খামারে ৯ থেকে সাড়ে ৯শ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। যা আগে উৎপাদন হতো প্রায় ১৬শ লিটার। যেসব কোম্পানি ও মিষ্টির দোকান দুধ নিতো, এখন করোনা ভাইরাসের কারণে তারা দুধ নিচ্ছে না। দুধ বিক্রি করতে না পেরে খামারের আশপাশের অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন খামারে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার বেশি খরচ। এখন সে খরচ মেটানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গাড়ি ও দোকান বন্ধের কারণে গরুর খাবার আনতে পাচ্ছেন না। স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন সরকারী সহযোগিতার পাশাপশি ব্যাংকের নেওয়া ঋণের সুদ মৌকুফের। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষের মাঝে সরকার যে সহয়তা দিচ্ছে, সে তালিকায় খামারীদের থেকে ন্যায্যমূল্যে দুধ, ডিম কিনে দেবার অনুরোধ জানান।
সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের গোপিনাথদিয়া গ্রামের গো-খামারী কবির মৃধা বলেন, তার খামারে ৩০টার অধিক গরু রয়েছে। প্রতিদিন এ সব গরুর পেছনে ব্যয় চার হাজার টাকার উপরে। তিনি দশ দিনের খাবার মজুদ করতে পেরেছিলেন। তবে সে খাবার প্রায় তার শেষ পর্যায়ে। যে সব দোকান থেকে তিনি খাবার আনতেন তার প্রায় সব গুলোই বন্ধ। যে সব দোকান খোলা থাকছে তারা গো-খাদ্যের দাম চাচ্ছে অধিক। ফলে আগামী দিন গুলো কি ভাবে যে পার করবেন এবং গরু গুলোকে বাঁচিয়ে রাখবেন সে চিন্তায় তার ঘুমও আসছে না। তিনি আরো বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য যেমন খাদ্য সহযোগিতা প্রদান করছে সরকার, তেমনি প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের মাধ্যমে গো-খামারীদের কাছে বাজার মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করারও দাবী জানান।
জেলার কালুখালী উপজেলা শহরের চাঁদপুর গ্রামে অবস্থিত মাহাথির এ্যাগ্রে লিমিটেডের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, তার খামারে তিন শতাধিক গরু ও মহিষ রয়েছে। যে খাদ্যের মজুদ ছিলো তা প্রায় শেষের পথে। এমতাবস্থায় তার খামারসহ অন্যান্য খামার গুলোকে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রণোদনা প্রদান করা প্রয়োজন। তা না হলে গরু বাঁচানো যাবে না এবং খামারের শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ফজলুল হক সরদার বলেন, জেলায় বড় ধরনের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বড় গরুর ফার্ম আছে। সাময়িক সময়ে তারা একটু খারাপ আছে। তাদের উৎপাদিত দুধ এখন কোথাউ দিতে পারছেন না। তাই দুধ নষ্ট না করে ঘি তৈরি করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী কিছু প্রনোদনা আসবে এবং তখন খামারীরাও কিছু পাবে বলে মনে করেন।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, গো-খাদ্য বিক্রেতাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়