গোয়ালন্দের কথিত পীরের মাধ্যমে সরকারি চাকুরী পাইয়ে দেবার নামে প্রতারণা, নিঃস্ব বিধবা –
- Update Time : ০৮:০১:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮
- / ১০ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
নুরু পাগলা নামের কথিত এক পীরের মাধ্যমে সরকারী চাকুরী দেয়ার কথা বলে রাজবাড়ীর এক বিধবার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগ নিয়ে বিধবা নানা স্থানে ধর্না দিলেও হচ্ছে কাজের কাজ। প্রতারক চক্রের হোতারা চাকুরীতো দুরের কথা টাকা ফেরৎও দিচ্ছে না।
জানাগেছে, জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গরিয়ানা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত জতিন্দ্রনাথ মৌলিকের স্ত্রী নমিতা রানী মৌলিক। তিনি তার একমাত্র ছেলে দেব প্রসাদ মৌলিককে সরকারী চাকুরী পাইয়ে দেবার কথা বলে একজন কথিত পীরকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। তবে দীর্ঘ দিন ঘুড়ে ওই টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ফেরতও নিতে সক্ষম হয়েছেন ওই বিধবা। তবে বাকী টাকা গত চার বছরেও ফেরৎ পাননি তিনি।
ভুক্তভোগী নমিতা রানী মৌলিক ও তার ছেলে ওই পীরের ব্যবহার ও তার মুখে ভালো ভালো কিছু কথা শূনে তার ভক্ত হয়ে যান। এ সুবাদে প্রায়ই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা শহরের ওই পীরের বাড়ীতে যাতায়াত করতে থাকে। সেখানেই পরিচয় হয় বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের আব্দুল মালেক শেখ ও শেকাড়া গ্রামের খন্দকার মোঃ রেজাউল হকের সাথে। খন্দকার রেজাউল হক সচিবালয়ে চাকুরী করেন পরিচয় দেন এবং বলেন আপনার ছেলের আমি সচিবালয়ে অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এ জন্য আপনাকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। কথা শুনে অসহায় নমিতা রানী প্রশ্ন করেন, আপনাদেরকে কত টাকা দিতে হবে। ওই ব্যক্তি ১২ লাখ টাকা দাবী করেন। সেখানে পীরও নমিতাকে টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। নমিতা রানী ১২ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পীরের হাত দিয়ে দেন এবং সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেন খন্দকার রেজাউল হক ও পীরের পোষ্যপুত্র বলে পরিচিত বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নারায়নপুর গ্রামের মোঃ আ্ব্দুল মালেক ওরফে নীল মালেকের হাতে। এরপর দীর্ঘ চারটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও তার ছেলে দেবপ্রসাদ মৌলিককে চাকুরী দেওয়াতো দুরের কথা তার সঙ্গে যোগাযোগ বি্িছন্ন করে দেন। এ অবস্থায় অসহায় নমিতা টাকার শোকে হয়ে যান পাগল প্রায়। যেখানে সেখানে টাকার কথা তুলে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চাকুরী দিতে না পেরে সম্প্রতি তাদের পীর এর কথা মতো খন্দকার রেজাউল হক ও নীল মালেক জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বহরপুর বাজারের জনৈক মুদি ব্যবসায়ী‘র সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে‘র হিসাব থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। মালেকের ছেলে মেহেদী হাসান ওরফে ওমর নমিতা রানীর ছেলে চাকুরী প্রার্থী দেবপ্রসাদের বিয়ের মধ্যে গিয়ে ২৫ হাজার টাকা নগদ ফেরৎ দিয়ে আসে। এ দিয়ে ১২ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ফেরৎ পেয়েছেন নমিতা। আর ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকার কোন হদিস নেই। সম্প্রতি পীরের বাড়ীতে ভক্ত নমিতা রানী মৌলিক গেলে পীর তার পোষ্যপুত্র মালেকের কথা মতো নমিতাকে মারধর করে তারিয়ে দেয় এবং বলে তুই আর আমার দরবারে আসবি না। তোর মতো ভক্ত আমার প্রয়োজন নেই। শুধু টাকা নিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি এই প্রতারক চক্র। ওই বিধবার বাড়ীর লক্ষাধিক টাকা মূল্যের একটি ৫৫ বছর বয়সী মেহগনী গাছ এই প্রতারকচক্র পীরের বাড়ী আসবাবপত্র তৈরীর জন্য কেঁটে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মোঃ আ্ব্দুল মালেক ওরফে নীল মালেকের সাথে মুঠোফোনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, তিনি ওই পীরের একজন ভক্ত। তবে তার মাধ্যমে নমিতা রানী মৌলিক ওই পীরের কাছে ছেলের চাকুরীর টাকা দেননি এবং তিনি মেহগনী গাছ কেটেও পীরের বাড়ীর আসবাবপত্র তৈরী করান নি। নমিতা রানী মৌলিক তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, মোঃ আ্ব্দুল মালেক ওরফে নীল মালেক একজন প্রতারক শ্রেণীর মানুষ। এলাকায় প্রতারনা মূলক নানা ধরণের কাজ তিনি করে বেড়ান। নমিতা রানী মৌলিক একজন অসহায় বিধবা। ওই বিধবার কাছ থেকে ছেলের চাকুরীর কথা বলে টাকা নীল মালেক ও তার নুরু পাগলা নামে কথিত পীর গ্রহণ করেছে এটা সঠিক। তবে ওই টাকা ফেরৎ দেবার ব্যাপারে নীল মালেক কারও কথাই রাখছে না।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়