দৌলতদিয়া ঘাট কেন্দ্রীক দালালচক্র নির্মূলের নির্দেশ দিলেন রাজবাড়ীর এসপি –

- Update Time : ০৮:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৮
- / ২৩ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট এলাকায় দালালদের দৌরাতœ নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। যার অংশ হিসেবে ওই ঘাট ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মোটা অর্থের বিনিময়ে গাড়ি পার করতে আসা এক কথিত সাংবাদিক রানার বিরুদ্ধে জেলা গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে। ওই ডায়রী করেছেন, রাজবাড়ী সদর ট্রাফিকের পুলিশ সার্জেন্ট মেহেদী হাসান।
জানাগেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। সাম্প্রতিক সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ওই ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। আর দীর্ঘ লাইন মানেই দালালদের জন্য মোটা আয়ের উৎস। এমনটিই হয়ে আসছিল সুকৌশলে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। রাজবাড়ীতে যোগদেয়া নবাগত পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি’র তৎপড়তায় উজ্জীবিত হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। ফলে মাদক ব্যবসায়ীসহ দালাল চক্রের সদস্যরা আতœগোপনে যেতে শুরু করেছেন। ওই অবস্থাতেও কথিত কিছু সাংবাদিক তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেননি। তারা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড।
রাজবাড়ী সদর ট্রাফিকের পুলিশ সার্জেন্ট মেহেদী হাসান জানান, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটের পুলিশ বক্সের সামনে তিনি দায়িত্বরত ছিলেন। ওই সময় সেখানে আসে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দালাল রানা। সে অনৈতিক ভাবে একটি বাজে মাল ভর্তি একটি গাড়ি ফেরী পাড় করার লক্ষে এনে দাড় করায় এবং বলে গাড়িটি ছেড়ে দিতে। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় কথিত সাংবাদিক রানা তার ছবি তোলার পাশাপাশি হুমকী-ধামকী দিতে থাকে। যে কারণে তিনি ওই দিন রাতে রানা’র বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাংবাদিক জানান, দৌলতদিয়া ঘাট কেন্দ্রীক সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন দালাল ও ছিনতাইকারী চক্রে। ওই সব চক্রের মধ্যে ৮/৯ জন রয়েছে কথিত সাংবাদিক। ওই সব কথিত সাংবাদিকদের বাড়ী জেলা সদর, গোয়ালন্দ ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নে। তারা বিআইডব্লিউটিসি, দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ি ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের সদস্যদের কাছাকাছি ঘোড়াফেরা করে। কোন কোন পুলিশ সদস্যরা তাদের খাতিরও করে। ফলে ওই সব দালালরা ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা পন্যবাহী ট্রাক চালকদের কাছ থেকে ফেরীতে দ্রুত উঠার সিরিয়াল পাইয়ে দিতে ট্রাক প্রতি এক হাজারেরও বেশি টাকা গ্রহণ করে। সেই সাথে সময় সুযোগ বুঝে ওই ট্রাক পাড় করে। ওই দালাল শুধুমাত্র ট্রাক পাড় করাই নয় বিআইডব্লিউটিসি’র টিকেট কাউন্টারে অনৈতিক লেনদেন, দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে পাচার হয়ে আসা কিশোরী ও যুবতীর ক্রেতা এবং মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী চক্রের নেতাদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার গোয়ালন্দ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। আমার ভাগ্নি জামাই ট্রাক চালক লিটন মিয়া মোবাইল ফোনে আমাকে জানান, তিনি অক্সিজেন বহন করে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। ঘাটে যানজট থাকলেও অক্সিজেনবাহী গাড়ী জরুরী হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে পার করা হয়। কিন্তু সার্জেন্ট মেহেদী হাসান তাকে পার হতে না দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে এই বিষয় নিয়ে সার্জেন্টের সাথে কথা বলি এবং তার ছবি তুলি। কোন হুমকি দেই নি।
জিডির ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, তদন্ত পুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দালালদের তৎপড়তা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ দালাল বাধ্য হয়ে তাদের তৎপড়তা বন্ধ করেছে। তবে কথিত কিছু সাংবাদিক নামধারী দালাল সেখানে রয়েছে। যারা নাম সর্বস্ব পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের একাধিক কার্ড ও ক্যামেরা নিয়ে ঘাট এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সেই সাথে তারা অনৈতিক ভাবে টাকা গ্রহণ করে সিরিয়াল ভেঙ্গে পুলিশকে ভয় দেখিয়ে ট্রাক পাড় করে থাকে। ইতোমধ্যেই তিনি ওই সব দালাল ও কথিত সাংবাদিকদের সনাক্ত করণের কাজ শুরু করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ডায়রী করা হচ্ছে, এতোও যদি কাজ না হয় তবে ওই সব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের পূর্বক গ্রেপ্তার করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়