গোয়ালন্দ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস পালিত –
- Update Time : ১০:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৮
- / ৯ Time View
আজু শিকদার, শামীম সেখ, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
একাত্তরের ২১ এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। তখনো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পারেনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এরই মধ্যে ওই দিন কাকডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথম এসে নামে পদ্মাপারের গোয়ালন্দে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আওয়ামীলীগ নেতা কাজী হেদায়েত হোসেনের মাধ্যমে গোয়ালন্দের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২০টি থ্রী-নর-থ্রী রাইফেল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা হাতে পায়। প্রথম দিনেই সেই অস্ত্র নিয়ে পাকবাহিনীর সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেই আমরা।
এভাবে ৭১ এর ২১ এপ্রিলের স্মৃতিচারণ করছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার। শনিবার সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এভাবে স্মৃতিচারণ করেন। এসময় তিনি গণহত্যার ওই স্থানে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণের ঘোষনা দেন।
মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করে জানান, উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গি এলাকায় পাক আর্মি নামতেই স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সেখানে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকীর মহিউদ্দিন। গুলিবিদ্ধ হন অনেকেই। এরপর পাকবাহিনী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী অন্তত ২৪ জন মানুষ। এরা হলেন জিন্দার আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবরু বেগম, মোলায়েম সরদার, বরুজান বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, মোকসেদ আলী শেখ, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলাবরু বেগম, আলেয়া খাতুন ও বাহেজ পাগলাসহ নাম না জানা আরো অনেকে।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে গণহত্যা শেষে ওইদিন দুপুরে পাকবাহিনী গোয়ালন্দ বাজার আক্রমন করে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এ সময় হানাদাররা বাজারের কয়েকশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রতি বছর ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার দীর্ঘকাল পর ২০০৯ সালে উত্তরাধিকার গোয়ালন্দ ’৭১ নামের একটি সংগঠন উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্মান করে ওই গ্রামের ২৪ জন শহীদের নামসম্বলিত একটি স্মৃতিফলক। তবে গণহত্যার স্থানে আজও কোন স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী হয়নি। দিবসটি গোয়ালন্দের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বিশেষ ভাবে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। তবে এবার বাহাদুরপুর গ্রামবাসী সকালে প্রতিরোধ যুদ্ধ এলাকায় যুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারীদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্মৃতি ফলকের জন্য জমি দাতা স্থানীয় আব্দুল খালেক শেখ কালুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যে মধ্যে বক্তব্য রাখেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু নাসার উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম শফি, অধ্যাপক নুরুজ্জামান ফকীর, শহীদ পরিবারের সন্তান গোলজার হোসেন মৃধা, গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইউনুছ মোল্লা, জহুরুল ইসলাম লাভলু, ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল রানা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাবহৃত লোহার তৈরী রাইফেলের গুলির একটি বক্স প্রদর্শন করেন। বক্সটি দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষন করেছেন স্থানীয় আমজাদ হোসেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়