আগামীকাল গোয়ালন্দে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস –
- Update Time : ০৯:২৭:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ এপ্রিল ২০১৮
- / ১২ Time View
শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা আক্রমন করে। মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট থেকে মেশিনগান, মর্টারসহ ভারি যুদ্ধাস্ত্র বোঝাই স্টিমার ও গানবোট নিয়ে নদীপার হয়ে প্রথম গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গি নামক এলাকায়। এসময় সেখানে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙে যায়। এসময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার মহিউদ্দিন ফকির।
এরপর পাকবাহিনীরা স্থানীয় বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম ঘিরে ফেলে। সেখানে বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। এসময় হানাদারের বুলেটে শহীদ হন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৪ জন নারীপুরুষ। এ সময় শহীদ হন জিন্দার আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবুরু বেগম, মোলায়েম সরদার, বুরুজান বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, মোকসেদ আলী শেখ, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলাবুরু বেগম, আলেয়া খাতুন ও বাহেজ পাগলা।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে গণহত্যা শেষে ওই দিন দুপুরে পাশের কুমড়াকান্দি গ্রামে হানা দেয় পাকবাহিনী। সেখানে তারা হত্যা করে ওই গ্রামের বাসিন্দা হাকিম আলী, মালেক খা, ছকেল উদ্দিন, দারোগ আলী বক্স ও গিয়াস মন্ডল ওরফে গাইসাসহ নাম না জানা আরো অনেককে। কুমড়াকান্দি গ্রামে গণহত্যা চালানোর পরপর একই দিনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত গোয়ালন্দ স্টিমারঘাট, ফেরিঘাটসহ গোয়ালন্দ বাজার আক্রমন করে পাকবাহিনী। এসময় তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বাজারের কয়েকশ দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই থেকে ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ গণহত্যা দিবস।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াসপুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত গোয়ালন্দ গণহত্যা দিবসটি পালিত হয়নি। কোনও রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, এমনকি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদও ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ গণহত্যা দিবসে কোন কর্মসূচী পালন করেনি। গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে এলাকার কোন শহীদ মিনারে একটি ফুল পর্যন্ত পড়েনি।’
শহীদ পরিবারের সন্তান স্থানীয় উজানচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘একাত্তরের ২১ এপ্রিল আমার বাবা জিন্দার আলী মৃধাসহ গোয়ালন্দ এলাকার অনেকেই পাকবাহিনীর গণহতাযজ্ঞের শিকার হন। কিন্তু ওইসব শহীদের আত্মদানের কথা আজ অনেকেই ভুলতে বসেছে। এলাকার অসহায় শহীদ পরিবার গুলোর খোঁজখবরও কেউ রাখেন না।’ তবে এলাকার নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো ছড়াতে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ গণহত্যা দিবসটি পালনের দাবী জানান তিনি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসার উদ্দিন, ১৯৭১ সালে ২১ এপ্রিল উজানচর ইউনিয়নে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৪ জন নারী পুরুষ শহীন হন। যারা দেশ মাতৃীকার সংগ্রামে জীবন দিয়েছেন। তাদের আতœত্যাগের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতি ফলক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবছর সেখানে তাদের স্মরণ করে মিলাদ-মাফফিল ও দোয়া করা হয়। এবারও করা হবে। আগামীতে সেখানে সরকারী ভাবে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে আরো সুন্দর ভাবে তাদের স্মরণ করার জন্য এবং সেখানে একটি সুন্দর করে স্মৃতি ফলক করার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়