বালিয়াকান্দির মাশালিয়ায় বিস্তৃর্ণ ভূমিতে মধুর চাষ

- Update Time : ০৮:৫১:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০১৮
- / ২৮ Time View
মোঃ আমিরুল হক,রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
মোঃ অজিয়ার রহমান (৪০)। বাড়ী সাতক্ষিরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসাবে কষ্ট ও ঝুকিপূর্ণ হলেও মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। বছরে ৭ থেকে ৮ মাস মৌমাছির বক্সগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে মধু সংগ্রহ করেন অজিয়ার। এই সময় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মাশালিয়া গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকায় যখন চৈতালী ফসলে ভরা, ঠিক সে সময় বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখায়াত হোসেনের আমন্ত্রনে মোঃ অজিয়ার রহমান ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে তার ২শত এর বেশী মৌমাছির বক্স নিয়ে এসেছেন বালিয়াকান্দি উপজেলার মাশালিয়া গ্রামে।
আলাপ কালে মৌচাষি মোঃ অজিয়ার রহমান জানান, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারী মাঝামাঝি পর্যন্ত বালিয়াকান্দি উপজেলার মাশালিয়া এলাকার মেহগনী বাগানে এই মৌসুমে তারা মধু সংগ্রহ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন এলাকায় কালোজিরা-ধনিয়াসহ মৌসুমে ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সেখানে মধূ সংগ্রহ শেষে তারা লিচুর মৌসুমে তারা চলে যান নওগাঁ, রংপুর, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর এলাকায়। সেখানে লিচুর ফুল থেকে মধূ সংগ্রহ করে। সেখানে তারা দেড় থেকে দুই মাসের মতো মধু সংগ্রহ করার সুযোগ পান। এভাবে মৌ চাষিরা বছরে ৭ থেকে ৮ মাস মধু সংগ্রহ করার সুযোগ পায়। বাঁকী সময়টা তাদের মৌমাছি পালন করতে হয়। এসময়ে মৌমাছির বাঁচিয়ে রাখার জন্য চিনি খাওয়াতে হয়।
তিনি আরো জানান, গত ১ মাস ধরে তারা বালিয়াকান্দিতে মধু সংগ্রহ বক্সগুলো থেকে মধু আহরন করছেন। প্রতিবার প্রতিবক্স থেকে এক থেকে দেড় লিটার মধু সংগৃহিত হয়। তবে মধুর পরিমান আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। যদি কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকে, তবে মধুর পরিমান কমে যায়। তার মতে, কালোজিরা বা লিচুর মধূ যে কোন পাত্রে রাখা যায়। সেটি জমে না বা গুনাগুন দীর্ঘ সময় অক্ষুন্ন থাকে। কিন্তু সরিষার মধু সংগ্রহের মাস খানেকের মধ্যে জমে যায় তবে কাঁচের পাত্রে রাখলে এ মধূ একবছর সংরক্ষণ করা যায়। অজিয়ার আরো বলেন, তিনি মধু সংগ্রহ করে এপি, হামদার্দ, স্কয়ার ও এসিআই কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে থাকেন।
সরাসরি মধু চাষির কাছ থেকে মধু কিনতে আসা স্থানীয় মো. মোক্তার হোসেন গাজী জানান, যতদুর শুনেছি কালিজিরার মধূ খুবই ভালোমানের হয়। এর গুনাগুন ভালো তাই আসল মধু পেতে দেখে শুনে একহাজার টাকা দিয়ে দুই লিটার মধু কিনে নিলাম।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখায়াত হোসেন জানান, বালিয়াকান্দিতে ব্যাপক পরিমানে সরিষা, ধনিয়া, কালোজিরা, মশুরী, পিঁয়াজের ফুল আবাদ হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আমের মকুল, লিচুর যা মধু সংগ্রহের অন্যতম উৎস। এসকল ফুল থেকে সংগৃহিত মধুর মানও হয় অনেক ভালো। অপরদিকে মৌমাছি দ্বারা মধু সংগ্রহের ফলে ফসলের পরাগায়ন প্রক্রিয়া ভালো হয়। এতে সকল প্রকার ফসলের জন্য উপকারী। এসব কারনে বেশ কিছুদিন ধরে অজিয়ার নিজেই যোগাযোগ করে বেশ কয়েকজন মধু চাষীকে সঙ্গে করে বালিয়াকান্দি নিয়ে এসেছেন। কৃষি অফিসার বলেন, আগামীতে স্থানীয় কৃষকদের মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহের প্রশিক্ষন দিয়ে রানী মৌমাছিসহ বক্স বিতরন করার জন্য কষি বিভাগের উপর মহলে যোগাযোগ করবো। যাতে এ এলাকার প্রান্তিক চাষিরাই নিজেদের মধু সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি আরো জানান, উপজেলায় এবার ৪ শত হেক্টর জমিতে সরিষা ছিল। যা থেকে প্রায় ২ মন মধু সংগ্রহ করেছে মধু চাষিরা। এখন উপজেলায় ১ থেকে দেড় শত হেক্টর ধনিয়া, ১শত হেক্টর কালোজিরাসহ বিভিন্ন প্রকার ফুল থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন মণ মধু সংগ্রহ করার আশা করেছেন মধু চাষীরা। মধু সংগ্রহ একটি লাভজনক পেশা। মধু সংগ্রহের ফলে দেশে মধুর চাহিদার যোগান দিয়ে চাষিরা যেমন লাভোবান হন, তেমনি সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়