বসন্তে মধু ভান্ডার গোয়ালন্দের বিস্তৃর্ণ কৃষিখেত –

- Update Time : ০৮:৫১:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮
- / ১৮ Time View
আসজাদ হোসেন আজু, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
আক্তার মন্ডল (৪০)। বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মৌমাছি পালন ও মধু সগ্রহকেই পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। বছরের ৭-৮ মাস মৌমাছির বক্সগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
বসন্তের এই সময় পদ্মাতীরের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বিস্তৃর্ণ এলাকা যখন চৈতালী ফসলে ভরা, ঠিক সে সময় উপজেলা কৃষি অফিসারের আমন্ত্রণে আক্তার মন্ডল ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে তার দেড়শত মৌমাছির বক্স নিয়ে এসেছেন গোয়ালন্দ উপজেলার মৈজদ্দিন মোল্লার পাড়া গ্রামে।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ মন্ডল জানান, গোয়ালন্দে ব্যাপক পরিমানে শরিষা, ধনীয়া, কালো জিরা, মসুরী, পিয়াজের ফুল, খেসারীর আবাদ হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আমের মকুল, লিচুর যা মধু সংগ্রহের অন্যতম উৎস। এসকল ফুল থেকে সংগৃহীত মধুর মানও হয় অত্যান্ত ভালো। অপরদিকে মৌমাছির মধু সংগ্রহের ফলে ফসলের পরাগান পক্রিয়া ভালো হয়। এতে ফসলের জন্য উপকারী। এ সব কারণে গত দুই বছর ধরে তিনি নিজেই যোগাযোগ করে বেশ কয়েকজন মধু চাষীকে গোয়ালন্দে নিয়ে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, আগামীতে স্থানীয় কৃষকদের মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিয়ে রানী মৌমাছিসহ বক্স বিতরন করা হবে। যাতে কৃষকরাই নিজেদের মধু সংগ্রহ করতে পারে। তিনি আরো জানান, উপজেলায় এবার ৯শত হেক্টর জমিতে সরিষা ছিল। যা থেকে ৩মণ মধু সংগ্রহ করেছে চাষীরা। এখন উপজেলায় ৫শত হেক্টর ধনিয়া, ২শত হেক্টর কালো জিরা সহ বিভিন্ন প্রকার ফুল থেকে ৩/৪ মণ মধু সংগ্রহ করার আশা করছে মধুচাষীরা। মধু সংগ্রহ একটি লাভজনক পেশা। মধু সংগ্রহের ফলে দেশে মধুর চাহিদার জোগান দিয়ে মৌচাষিরা যেমন লাভবান হন, তেমনি সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে।
আলাপকালে মৌচাষী আক্তার মন্ডল জানান, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন জেলায় সরিষা মৌসুমে তারা মধু সংগ্রহ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন এলাকায় কালোজিরা-ধনিয়াসহ মৌসুমী ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সেখানে মধু সংগ্রহ শেষে তারা লিচুর মৌসুমে তারা চলে যায় রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর এলাকায়। সেখানে লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সেখানে তারা দেড়-দুই মাসের মতো মধু সংগ্রহ করার সুযোগ পান। এভাবে মৌচাষিরা বছরে ৭/৮ মাস মধু সংগ্রহ করার সুযোগ পান। বাকি সময়টা তাদের মৌমাছি পালন করতে হয়। এ সময়ে মৌমাছির বাঁচিয়ে রাখার জন্য চিনি খাওয়াতে হয়। তিনি আরো জানান, গত ২৬ দিন ধরে তারা গোয়ালন্দে মধু সংগ্রহ করছে। চার থেকে ছয়দিন পরপর বক্সগুলোথেকে মধু আহরণ করা হয়। প্রতিবার প্রতি বক্সথেকে দেড় থেকে দুই লিটার মধু পাওয়া যায়। তবে মধুর পরিমাণ আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। যদি কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকে, তবে মধুর পরিমাণ কমে যায়।
তার মতে, কালোজিরা বা লিচুর মধু যে কোনো পাত্রে রাখা যায়। সেটি জমে না বা গুণাগুণ দীর্ঘ সময় অক্ষুন্ন থাকে। কিন্তু সরিয়ার মধু সংগ্রহের মাস খানেকের মধ্যে জমে যায়। তবে কাঁচের পাত্রে রাখলে এ মুধ এক বছর সংরক্ষণ করা যায়।
সরাসরি মধু চাষীর কাছ থেকে মধু কিনতে আসা স্থানীয় আলিমুজ্জামান জানান, যতদুর শুনেছি কালিজিরার মধু খুবই ভালো মানের হয়। এর গুনাগুনও ভালো। তাই আসল মধু পেতে দেখে শুনে ১ হাজার টাকা দিয়ে ৩ লিটার মুধু কিনে নিলাম।
স্থানীয় কৃষক আ. কাদের খান জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি এ বছর প্রায় ১ একর জমিতে কালোজিরার আবাদ করেছে। তার জমির পাশেরই বসানো হয়েছে মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছির বক্স। সংগ্রহকারী তাদেরকেও কিছু মধু দিয়েছে। কালোজিরার ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে কালোজিরার বাজার মূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়