গোয়ালন্দে ঝড়ে পড়ার আশংকায় ৩২ শিক্ষক –
- Update Time : ০৯:৩০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ১৪ Time View
শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
চাকরী আছে, চাকরী নেই! এমন হতাশায় দিন পার করতে হচ্ছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) নিয়োগকৃত ৩২ শিক্ষকের। ৩১ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ। দেশের দারিদ্র এলাকায় পিছিয়ে পড়া মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে এখন নিজেরাই চরম অনিশ্চয়তার আশংকায় রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে ঝড়ে পড়া দারিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুল মুখী হওয়ার জন্য এবং শিক্ষার গুনগতমান রক্ষায় সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ৫হাজার ২শত শিক্ষার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩২ জন শিক্ষক লোভনীয় বেতনে সেকায়েপ এর চাকরীতে কর্মরত হয়। সেকায়েপ এর নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কারণে উপজেলার দারিদ্র এলাকায় স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান ভাল করতে শুরু করে। কয়েক বছরের মধ্যে স্কুলগুলো শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষারমান উন্নয়ন করেন। কিন্ত দারিদ্র এলাকায় স্কুলগুলোর ঝঁড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন হলেও এখন নিজেরাই ঝড়ার আশংকায় দিন পার করছেন।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং সেকায়েপ এর শিক্ষকদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকবৃন্দ। এখন চাকরী আছে, নাকি চাকরী নেই। তাও জানেন না শিক্ষকবৃন্দ। অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক কর্মসূচী (এসিটি) অপারেশন ম্যানুয়াল বইয়ের ৩৬ (ক) উল্লেখ আছে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এসিটিদের মূল বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হবে। এটি ভবিষ্যতে এসিটিদের “এমপিও” পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে। এসিটিদের “এমপিও” পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সেকায়েপ গ্রহীত পদক্ষেপে স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হবে।
এদিকে, সেকায়েপ এর প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং শেষ হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছেন না। এই প্রকল্পে তাদের নিয়োগ থাকবে কি, থাকবে না। যে কারণে শিক্ষকবৃন্দ মন দিয়ে পাঠদানও করতে পারছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
গোয়ালন্দ উপজেলার একাধিক স্কুল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমাদের স্কুলে সেকায়েপ যে শিক্ষকরা আছেন। তারা আমাদের জন্য খুবই উপকারী বর্তমানে। কারণ আমাদের যেহেতু সরকারী স্কুল। আমাদের তেমন একটা ক্লাস হয় না। বেশির ভাগ সময় বন্ধ যায়। সেকায়েপ শিক্ষকদের করানো অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে আমরা কিছু শিক্ষতে পারি। যখন আমাদের ক্লাস হয় না তখন আমরা বাড়তি কিছু তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। আমাদের ক্লাসগুলো ফাঁকা যায় না। তারা যদি এখন আমাদের স্কুলে প্লার্মামেন্ট হয়ে যায় তো স্কুলের যে শিক্ষক সংকট আছে সেটা কিছুটা সমাধান হবে। এবং আমাদের অনেক উপকার হবে। আর তারা যদি চলে যায় স্কুলে অনেক শিক্ষক সংকট হবে। এবং আমাদের স্কুলের পড়াটা ভাল ভাবে করতে পারবো না। স্কুলে ভাল ভাবে ক্লাস হবে না। তারা থাকাটা আমাদের জন্য খুবই উপকারী। আর এখন যদি তারা চলে যায় তবে পরবর্তীতে যারা স্কুলে আসবে তাদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হবে। যেমন এখন আমাদের হবে।
সেকায়েপ নিয়োগকৃত একাধিক শিক্ষক জানান, এসিটি চাকরী করতে এসে একটা গুরুত্বপূর্ন সময় শিক্ষকতায় নিয়োজিত করেছি। এখানে আসার পর আমরা শিক্ষার্থীদের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করেছি। যে কারণে আমরা অন্য চাকরীতে সময় দিতে পারি নাই। এর জন্য ভাল রেজাল্ট করার পরও এখন আমরা অন্য চাকরীর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারি না। এছাড়া এই চাকরীতে থাকা অবস্থায় অনেকের বয়সও অতিক্রম হয়ে গেছে। সরকারী চাকরীর সময়ও নেই। যার কারণে এখন আমরা খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং আমাদের চাকরী শেষ হয়ে গেছে এখনও আমরা অনিশ্চতার মধ্যে আছি। আমরা থাকবো কি থাকবো না এটাও জানি না। কর্তৃপক্ষ যদি এব্যপারটা আমাদের জানাতো আমরা চিন্তা মুক্ত থাকতে পারতাম। যে আমাদের জন্য ভাল কিছু একটা অপেক্ষা করছে।
দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষে দারিদ্র এলাকার স্কুলগুলোতে সেকায়েক নিয়োগকৃত শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞানে তিন শিক্ষক দিয়েছে। এই শিক্ষকগুলো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল ভাবে লেখা-পড়া করায়। আমাদের স্কুলে যে পরিমান ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সেখানে একজন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো সম্ভব না। যে কারণে এই সেকায়েপ নিয়োগকৃত শিক্ষক পেয়ে আমরা খুবই উপকারীত হয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীরা এদের পড়ানো খুব ভাল ভাবে গ্রহন করে। আর যে শিক্ষার্থী গুলো দুর্বল। তাদের ক্লাসের আগে ও পরে আলাদা ক্লাস নিয়ে থাকে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০টি স্কুল ও ৩টি মাদ্রাসায় মিলে ৩২জন সেকায়েপ শিক্ষক রয়েছে। তারা মূলত ইংরেজী, অংক এবং বিজ্ঞান এ বিষয়ে গুলো পড়িয়ে থাকে। এ শিক্ষকগুলো খুবই ভাল। অন্যন্যা শিক্ষকদের চেয়ে এদের লেখা-পড়া পাঠদানের মান ভাল। এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ইং পর্যন্ত। পুনরায় যদি আবার এই প্রকল্প এদের নেয় তাহলে আরো ভাল করবে এরা। তবে, এরা স্কুলে না থাকলে অনেক সমস্যা হবে আমাদের। কারণ এখন পর্যন্ত অনেক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ইংরেজী, অংক ও বিজ্ঞান এই পদ গুলো শুন্য রয়েছে। এরা থাকায় সেই পদগুলোর দায়িত্ব পালন করে। এরা মন দিয়ে লেখা-পড়া করায়। এই শিক্ষক গুলো যে বিদ্যালয়ে রয়েছে সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য কোথায়ও প্রাইভেট পড়তে হয় না।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়