দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন রাজবাড়ীর অসুস্থ্য আরজু-

- Update Time : ০৯:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ৪৫ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
সকাল ১০টা। রাজবাড়ী জেলা শহরের ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত বাসা থেকে আসছিলো একটি প্রতিবন্ধী কিশোরের চিৎকারের শব্দ। বিষয়টি জানার জন্য ওই বাসার মধ্যে প্রবেশ করতেই দেখা গেল মধ্য বয়সী এক মা তার দুই জন প্রতিবন্ধী সন্তানকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেন ওরা এমন করছে, জানতে চাইতেই অসহায় মা চুপ করে থাকেন। একাধিক বার জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেন, ক্ষুধার জ¦ালায় তার সন্তানরা এমন করছেন। এতো বেলা হলেও কেন রান্না হয়নি। জানতে চাইতে তিনি বলেন, ঘরে চাউল, তরি তরকারি কিছুই নেই। ফলে রান্না হয়নি।
ওই কিশোরদের মা শাহানা খানম বলেন, ১৪ বছর আগে তার সুখি ও সন্দুর একটি সংসার ছিলো। তবে বড় ছেলে সিফাত খান (১৬) ও ছোট ছেলে রিফাত খান (১৪) প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম গ্রহণের পর এবং তার স্বামী আরজু খান (৬০) হাঁপানী, পাইলস্সহ নানা রকম অসুস্থ্যতায় ভুগতে শুরু করার পর থেকেই তাদের সংসারের করুন অবস্থার সৃষ্টি হয়। জেলা শহরের মার্কাস মসজিদ এলাকায় থাকা ১০ শতাংশের জমিসহ পাকা বাড়ী এবং রাজবাড়ী বাজারে থাকা ইলেক্ট্রনিকের দোকান সবই ধিরে ধিরে বিক্রি করে সন্তানসহ স্বামীর চিকিৎসা ব্যয় চলে গেছে। বর্তমানে কোন রোজগার নেই তাদের। মাসের বেশিরভাগ সময় তার স্বামীকে চিকিৎসার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তার স্বামী রয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি।
এর কিছু সময় পর বাসায় আসেন অসুস্থ্য আরজু খান। তিনি বলেন, জমি, ঘর, দোকান ও ঘরের মালামাল একেএকে বিক্রি করে তিনি নিজে ও প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। কিছু দিন ভাড়া বাসায় থাকতে পারলেও প্রায় দুই বছর ধরে সে সমর্থও তার নেই। কোন রকমে রেলওয়ের পরিত্যক্ত এই বাসায় এসে উঠেছেন, করছেন এখানেই বসবাস। ঘরের মালামাল এখন বিক্রির শেষ পর্যায়ে এসে পৌছেছে। বর্তমানে ঘরে থাকা সর্বশেষ সম্বল একটি টেলিভিশন বিক্রি করে চলছেন। দু’চোখের জল ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, সামনে কি ভাবে তার ও সন্তানদের চিকিৎসা এবং সংসার ব্যয় চলবে তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল গেটের সামনে থাকা ফরিদা ফার্মেসীর মালিক হারুন অর রশিদ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি আরজু খানকে দেখছেন। তার চোখের সামনে মানুষটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ঠ নেই মানুষটির। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসাতো দুরের কথা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে থেকেও চিকিৎসা সেবা নেবার ক্ষমতা তার নেই। এমন একটি পরিবারের পাশে সমাজের হৃদয়বান মানুষের দাঁড়ানো প্রয়োজন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়