নাব্যতা সংকট পদ্মায়- আটকে আছে অর্ধশত কার্গোজাহাজ –
![](https://rajbaribarta.com/wp-content/uploads/2023/08/icon.png)
- Update Time : ০৯:১৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ১৮ Time View
আসজাদ হোসেন আজু,রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
নৌপথে পন্য পরিবহনের জন্য রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাবনার নগরবাড়ী হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। তবে ওই নৌপথে চরম নব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পদ্মার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এতেকরে বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে ছেড়ে আসা নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরগামী সার, কয়লা ও ক্লিংটার বোঝাই ৫০টিরও বেশী জাহাজ গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে আছে।
জানা যায়, পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ এ নৌপথে বর্তমানে তীব্র নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর কাজীরহাট, বেটারির চর, নাকালিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। এদিকে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ ড্রাফটের জাহাজ চলাচলে কমপক্ষে ১৪ ফিট পানির গভীরতা প্রয়োজন। অথচ বর্তমান পানির গভীরতা রয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৮ ফিট। তাই জাহাজগুলো দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে আটকা পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে কয়েকশ শ্রমিক ওই সব জাহাজগুলো থেকে সার, সিমেন্ট তৈরীর কাঁচামাল ‘ক্লিংটার’, পোট্রিখাদ্যসহ বিভিন্ন মালামাল আনলোড করে সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে বোঝাই করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরিঘাটের পাশে বাহিরচর এলাকায় পদ্মা নদীতে নোঙর করে আছে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর হতে ছেড়ে আসা বিভিন্ন পণ্যবোঝাই অর্ধশত ছোট-বড় কার্গো জাহাজ। সেখানে কয়েকশ শ্রমিক ওই জাহাজগুলো থেকে সার ইউরিয়া ও পটাশ (এমওপি), কয়লা, সিমেন্ট তৈরীর কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’সহ বিভিন্ন মালামাল নামিয়ে সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে বোঝাই করছে। আলাপকালে কয়েকজন জাহাজ মাষ্টার জানান, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথের পাবনার যমুনা নদীর কাজীরহাট, মোল্লারচর, নগরবাড়ী, বেড়া ও নাকালিয়া এলাকায় নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি ওই নৗপথের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এই নৌ-পথ দিয়ে পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌ বন্দরগামী সার, কয়লা ও ক্লিংটার বোঝাই ১৫/১৬ ফুট ড্রাফটের মালবোঝাই ওই জাহাজগুলো দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে আটকা পড়ে আছে। যথাসময়ে জাহাজ থেকে মালগুলো আনলোড করতে না পারলে বয়ে আনা মালামালের মালিকপক্ষকে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। নিয়ম অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে ২২ দিন পার হলে জাহাজ ভাড়া দ্বিগুন পরিশোধ করতে হবে।
এ কারণে জাহাজ থেকে মালগুলো দ্রুত নামিয়ে সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে করে পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জাহাজ থেকে মালামাল নামানোর কাজে কর্মরত শ্রমিক সরদার পাবনার নগরবাড়ি এলাকার মো. আক্কাস সরদার বলেন, ‘নৌপথে নব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে মালবাহী কোস্টার জাহাজগুলো সরাসরি নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। তাই গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকে পড়া জাহাজ থেকে মালামাল আনলোড করে আমরা সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে করে নগরবাড়ি ও বাঘাবাড়ী বন্দরে পৌছে দিচ্ছি।’ এ ক্ষেত্রে আমরা টনপ্রতি ১১০ টাকা করে পেয়ে থাকি। অপর শ্রমিক সরদার মো. সেলিম মিয়া জানান, তার নিয়ন্ত্রনে ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা জাহাজের খোলা সারগুলো প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন। এর জন্য তারা প্রতি বস্তায় ২ টাকা ৮০ পয়সা পেয়ে থাকেন।
মংলা থেকে নগরবাড়ীর উদ্দেশ্যে ৭৩০ টন সার নিয়ে আসা এমভি সুগন্ধা জাহাজের মাষ্টার মনির আহমেদ জানান, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় অন্যান্য জাহাজের মত তাদের জাহাজটিও গত ২৪ জানুয়ারী নাব্যতা সংকটের কারণে আটকা পড়েছে। তাই জাহাজ থেকে অন্তত ৩০০ টন মাল নামিয়ে তারপর গন্তব্যে যেতে হবে। তাই মাল সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে করে বাঘাবাড়ী বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাল খালাস করতে আরো দুই-তিন দিন লেগে যাবে বলে তিনি জানান।
বিআইডাব্লিউটিএ’র আরিচা অফিসের পোর্ট অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, বছর জুড়ে এ পথে যে কোন ড্রাফটের বিভিন্ন পণ্যবাহী কোস্টার জাহাজ নিয়মিত চলাচল করলেও শুস্ক মৌসুমে প্রতিবছরই নদীর নব্যতা কমে যায়। এতে যে পরিমান গভীরতায় জাহাজ গুলো মালামাল পরিবহণ করে সে পরিমান পানি থাকে না। বিষয়টি নিয়মিত ভাবে নৌ-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নির্দেশনা না মেনে জাহাজ গুলো ছেড়ে আসায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়