উত্তর চীন সাগরে তেলবাহী ইরানি জাহাজ ডুবি “কোন স্বপ্নই পূরণ হলো না রাজবাড়ীর সজিবের”-

- Update Time : ১০:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০১৮
- / ২২ Time View
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
১২ দিন আগে উত্তর চীন সাগরে বিস্ফোরণের পর ডুবে যাওয়া তেলবাহী ইরানি জাহাজ ‘সাঁচি’। ওই জাহাজের ৩২ ক্রু’র মধ্যে বাংলাদেশি দুজন। যাদের একজন হলো, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মতিয়াগাছি গ্রামের মাজেদ আলী মৃধার ছেলে সজিব আলী মৃধা (২৬)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় পিনপতন নিরবতা। সজিবের বাবা, মা ও বোনেরা এখানে না থাকলেও অন্যান্য স্বজনরা সজিবের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ওঠেন।
কান্নারত অবস্থায় সজিবের কৃষক চাচা ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন, সজিবের বাবা মাজেদ আলী মৃধা সৈয়দপুরের পার্বতীপুর রেলওয়েতে চাকুরী করতেন। তারা সেখানকার রেলওয়ে কোয়ার্টারে বসবাস করেন। ইতোমধ্যে তিনি অবসরে গেছেন। যদিও তিনি গত দুই বছর ধরে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী তার এলপিআরও শেষ হবে। এর পরই তার স্বপরিবারের গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসার কথা। সজিবরা এক ভাই ও দুই বোন। বড় বোন জিনিয়া আক্তার জলির বিয়ে হয়েছে এবং ছোট বোন সাবনাজ আক্তার পড়াশোনা করে।
তিনি আরো বলেন, সজিব পার্বতীপুরের জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। এরপর সে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১০ সালে আবারও জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। ২০১৩ সালে সজিব চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ক্যাডেট সজিব মেরিটাইম এডুকেশনে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সাল থেকে সজীব দুইটি বাল্ক ক্যারিয়ার ও দুইটি ওয়েল ট্যাংকার জাহাজে কাজ করেছে। সর্বশেষ সে ২০১৭ সালের ১৭ই নভেম্বর জামালপুরের এস.কে ইঞ্জিনিয়ারিং এজেন্সির মাধ্যমে ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কোম্পানি- এনআইটিসির ‘সাঁচি’ জাহাজে ‘ থার্ড মেট’ (বাণিজ্যিক জাহাজে চতুর্থ শীর্ষ কর্মকর্তা) অফিসার হিসেবে যোগদেন। ওই কোম্পানির হয়ে সজিব মাসিক ৯০ হাজার টাকায় ছয় মাসের চুক্তিতে বিগত বছরের আগষ্ট মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত অন্য একটি জাহাজে কাজ করেন। গত ১৭ নভেম্বর সজিব ‘সাঁচি’ জাহাজের কাজে যোগদান করেন।
সজিবের মামা মঞ্জুর রহমান তোতা বলেন, ঘটনার পর থেকে সজিবের মা জোসনা বেগম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বুকফাটা আতœনাত করছে। অসুস্থ্য বাবা আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে গেছে। সজিবের স্বপ্ন ছিল, বাবার চাকুরী শেষ হলে তারা স্বপরিবারের রাজবাড়ীর গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসবে। উন্নত চিকিৎসার ম্যাধমে করবে বাবাকে সুস্থ্য। পৈত্রিক জমিতে তুলবে পাকা ভবন। ছোট বোনকে বিয়ে দেবার পাশাপাশি সেও করবে মহাধুমধামে বিয়ে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। বাড়ীও ফিরে আসা হলো না। তার দাবী সরকার অন্তত তার লাশটি ফিরে আনা এবং ওই কোম্পানির সাথে আলোচনা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণের আদায়ের ব্যবস্থা করবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়