পাতার বাঁশি বাজান বালিয়াকান্দির ভান্টু –

- Update Time : ০৭:৩২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৮
- / ৩০ Time View
সোহেল রানা, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
সকলের কাছে প্রিয় ও এক নামেই সবাই চেনে ভান্টু দা বলে। ভান্টু নামটি এতোটাই মানুষের কাছে পৌছে গেছে এতে বাবা-মায়ের দেয়া নামটি আজও সবার অজানা। তার পুরো নাম, অধির চন্দ্র কর্মকার। তার পিতার নাম, মৃত নিতাই কর্মকার। বাড়ী রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মৌকুড়ি গ্রামে ( আমতলা)। তার জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করেছেন উপজেলা পরিষদের বারান্দায়। এখনও তার দিনকাটে উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায়। তবে তার বয়স ৭০ বছর হয়েছে। সেই তরুন দীপ্ত বয়সে পাতার দিয়ে তৈরী বাঁশি বাজিয়ে ও কথার মধ্যে অফিসের কর্মকর্তা ও সাধারন মানুষকে মাতিয়ে রাখতেন। বয়স হওয়ার সাথে সাথে পাতার বাঁশির কাছে হার মেনেছে একজন সাদা মনের মানুষ ভান্টু দা।
সোমবার দুপুরে কথা হয় অধির চন্দ্র কর্মকার ওরফে ভান্টু দার সাথে। তার কাছে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো শোনার চেষ্টা করলে তিনি না বলার চেষ্টা করেন। তারপরও একে একে তার মনের অজান্তে বলতে থাকেন জীবনের হারিয়ে যাওয়া ৭০ বছর বয়সের কথা। জন্ম প্রতিবন্ধি হওয়ায় পাশ্ববর্তী বাদশা কেরানীর বাড়ীতে ছোট বেলা থেকেই রাখালের কাজ শুরু করেন। গরু চড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন গাছের পাতা দিয়ে বাঁশি বানিয়ে সুরের ঝড় তোলেন। ভালো বাসতেন আমতলা বাজারে যাত্রাদলের শিল্পীদের অভিনয়। নিজেও অভিনয় করে মানুষকে হাঁসি দিয়ে মাতিয়ে রাখেন। গৃহকর্তা তাকে দিয়ে সকল কাজ করালেও সততার কোন কমতি পায়নি তার মধ্যে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাড়ি জমান ভারতে। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরেই শিশু বয়সেই বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের গীতা রানীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সংসার চালানোর জন্য কিছুদিন কাঠুরিয়ার কাজও করেন। শারিরিক অসুস্থতার কারণে কাঠুরিয়ার কাজও ছেড়ে দেন তিনি। এরপর বাড়ী-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন উপজেলা চত্বরে। বিভিন্ন অফিসের বারান্দায় কাটতে থাকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। অফিসের বারান্দায় থাকলেও ভান্টুর সততা, নিষ্ট্রা ও তার গান, অভিনয়, পাতার বাঁশি ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে পড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একদিন ভান্টুকে না দেখলে মনে হয় তারা কিছু হারিয়েছে। তাকে দেওয়া হয় বিভিন্ন অফিসে সহায়ক হিসেবে ঝাড়– ও চা টানার কাজ দেওয়া হয়। তবে মাসিক বেতন না থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় তার সংসার খুব সুখেই চলতে থাকে। এরই মধ্যে গীতা-ভান্টুর সংসারে একে একে ১০টি সন্তান জন্ম নিলেও এখন তার ৪ছেলে ও ৩ মেয়ে জীবিত রয়েছে। ছেলে ৪জনই বিয়ে করে তাদের মতো সংসার পেতেছে। ২ মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তবে বয়স তার ৭০ বছর হয়েছে। বয়সের ভারে এখন আর পাতার বাঁশি বাজাতে পারে না। বয়স হলেও তার মনের জৌলশ এখনও কমেনি। কর্মকর্তাকে বিষন্ন দেখলেই এমন একটি কৌতুহলী কথা বা অভিনয় করে, এতে পড়ে যায় হাসির ঝিলিক। তাকে কখনোই মন খারাপ দেখেছে কেউ তা বলা দুষ্কর। সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ হিসেবে দাবী করেন।
ভান্টু দা আরো বলেন, দাঁত পড়ে গেছে, শরীরও দুর্বল। পাতা থাকলেও এখন আর বাঁশি বাজাতে পারি না। ইচ্ছা করে বাঁশি বাজাই। তবে চেষ্টা করেও বাঁশি বাজাতে ব্যর্থ হই। দোয়া করবেন যেন বাকী জীবন টুকু এভাবেই কেটে যায়।
বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া টগর ভান্টুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ভান্টু একজন সদালাপি, সৎ ও নিষ্ট্রাবান ব্যাক্তি। তার সততার মুল্যে অনেক। তবে তাকে অনেকেই ঠকিয়েছে। সে কাউকে ঠকিয়েছে এমন নজির নেই।
উপজেলা সহকারী মৎস্য অফিসার মোঃ রবিউল হক জানান, আমি ২০০৭ সাল থেকে ভান্টু দাকে চিনি। সে একজন সৎ ও ভালো মনের মানুষ। তাকে সম্পুর্ণ বিশ্বাস করে কেউ প্রতারিত হয়নি। অফিস পাড়াকে হাস্যেজ্বল করে রাখে। তার মতো লোক এ সমাজে পাওয়া বিরল।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
পাঠক প্রিয়