“৪৬ বছর ধরে ভুগছে” কালুখালীর হিরু মোল্লার ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা –
রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী রতনদিয়া ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের মানুষ ৪৬ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে একটি সেতুর অভাবে। ইউনিয়নের পদ্মার কোল নামের শাখা নদীর হিরু মোল্লার ঘাট এলাকায় সেতু না থাকায় এ ভোগান্তি।
রতনদিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক অংশ পদ্মার নদীর কোলের চরে। সেখানে ৩, ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি বিদ্যালয়, কয়েকটি হাট-বাজারসহ ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। বর্ষায় ওয়ার্ড চারটির বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য হিরু মোল্লার ঘাট এলাকায় সাঁকো ছিল। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াতের জন্য সাঁকের পাশ দিয়ে একটি মেঠোপথ তৈরি করে নেয় এলাকাবাসী। বর্ষায় পথটি ডুবে গেলে আবার সাঁকো দিয়ে চলতে হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য তিন বছর আগে সেখানে প্রায় ১৫০ গজ লম্বা একটি বাঁশের মাচালি (সেতু) তৈরি করা হয়। মাচালি দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল পারাপার হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় মাচালির অনেক অংশ ভেঙে যাওয়ায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে লোকজন মাচালির পাশের রাস্তা দিয়েই পারাপার হচ্ছে। কিন্তু বর্ষায় পথটি ডুবে গেলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। কারণ তখন নদীটি পারাপারের একমাত্র ভরসা একটি খেয়া নৌকা। এ ছাড়া সচ্ছল ব্যক্তিদের কিছু নৌকা আছে।
বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, আবিদুর রহমান, লাইলী বেগম ও সোনিয়া বেগম জানান, একটি সেতুর জন্য তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা হচ্ছে। পদ্মার চরে তাঁদের বসবাস হওয়ায় তাঁরা অবহেলিত। যাতায়াতের জন্য একটি বাঁশের মাচালি ছিল, সেটিরও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এ জন্য তাঁদের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এখন কষ্ট হলেও যেতে পারছেন; কিন্তু বর্ষায় রাস্তাটি ডুবে গেলে একটি খেয়া নৌকা ছাড়া পারাপারের উপায় নেই। তাই বাঁশের মাচালির স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। চলতি বর্ষায় চলাচলের জন্য আপাতত মাচালিটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা জানান, হিরু মোল্লার ঘাটে যে বাঁশের সাঁকো আছে সেটি দিয়ে প্রতিদিন তিন-চারটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও হাজার হাজার এলাকাবাসী পারাপার হয়। তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ কোলের চরে বসবাস করে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মাচালির স্থানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
কালুখালী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস জানান, হিরু মোল্লার ঘাট-মাধবপুর বাজার সড়কের হিরু মোল্লার ঘাটে এলজিইডি একটি বড় (১০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ) সেতু করার প্রকল্প নিয়েছে। দ্রুত মাটি পরীক্ষা করা হবে। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী অর্থবছরে সেখানে সেতু তৈরির কাজ শুরু হতে পারে। সেতুটি হলে চরের ২০-২৫ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। সেতুটি নির্মাণের জন্য তিনি কাজ করে চলছেন।
কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, হিরু মোল্লার ঘাট এলাকার পদ্মার কোলে বড় একটি সেতু প্রয়োজন। এর জন্য মাটি পরীক্ষাসহ অনেক কাজ হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য দ্রুত অনুমোদন দেবে কর্তৃপক্ষ। সেতুটি হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।