গোয়ালন্দে ছাত্র ও শিক্ষককে মারপিটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মিমাংশা –
আজু সিকদার, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে নগরবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলীর দাবিতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ করে অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অপরদেিক প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন ওই ছাত্রের পিতা বিদ্যালয়ে এসে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু নাসার উদ্দিনের হস্তক্ষেপে ওই ছাত্রের বাবা শিক্ষকের পা ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শিক্ষক তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ঘটনার মিমাংশা হয়।
সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুরে গোয়ালন্দ উপজেলার নগরবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানাযায়, দুপুর সোয়া একটার দিকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশের অপরাধে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনিক শেখকে মারধর করেন প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সরকার। শিক্ষকের আঘাতে অনিকের কপালে বেশখানিকটা অংশ ফুলে যায়। এ বিষয় নিয়ে অন্যান্য অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত মারপিট ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ এনে তাকে অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান খান।
এসময় প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ওই ছাত্র অফিস কক্ষে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় একটি কাগজ ছিঁড়ে ফেলায় তাকে টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে মৃদু শাস্তি দেই। এতে ওই ছাত্রের পিতা মো. আমজাদ শেখ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেছেন।’
তবে অনিকের বাবা আমজাদ শেখ মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, তুচ্ছ কারণে তার ছেলেকে প্রায়ই প্রধান শিক্ষক মারধর করে থাকেন। তাই আজ তিনি বিদ্যালয়ে এসে এর প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষকের সাথে তর্কবিতর্ক হয়।
এসময় বিক্ষোভে অংশ নেয়া অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক তুচ্ছ কারণে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে থাকেন। এছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যা কোন শিক্ষকের পক্ষে করা সম্ভব না। শুধু প্রধান শিক্ষকের কারণে বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি শুধু শিক্ষার্থী নয় অভিভাবকদের সাথে প্রতিনিয়ত অসৌজন্যমূলক আচরন করে থাকেন। তারা উপস্থিত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষককে ওই স্কুল থেকে বদলী করার দাবি জানান।
নগরবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সরকারের কারণে প্রায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ে কোন না কোন ঝামেলা থাকেই। ইতিমধ্যে অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে অন্যত্র বদলীর জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আজও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষককে বদলী না করলে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ মারাত্মক ভাবে বিঘিœত হয়ে আসছে। এতেকরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আসাদুজ্জামান খান জানান, বিদ্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য শিক্ষা অফিসার তাকে সরেজমিন তদন্ত করে সঠিক কারণ জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের পাঠদান প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু নাসার উদ্দিন বলেন, শিক্ষক যাই করুক তার বিচার করা যাবে। কিন্তু তার গায়ে হাত তুলে ওই অভিভাবক অমার্জনীয় অপরাধ করেছে। এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের অপরাধ কেউ করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।